You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.20 | ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | আজকের এদিনে (with references) - সংগ্রামের নোটবুক

1971.09.20 | ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | আজকের এদিনে (with references)

২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ আজকের এদিনে

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী খন্দকার মুস্তাক আহমেদ বলেছেন ইরাকের সাবেক পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূত আবুল ফতেহ বাংলাদেশ সরকারের আদেশ পালন করে দুতাবাসের অর্থ নিয়ে ইরাক ত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন এটিকে কোন অবস্থাতেই চুরি বলা যায়না। এ টাকা বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের হেফাজতে আছে এবং তা মুক্তিযুদ্ধে ব্যাবহার করা হচ্ছে। জনাব ফতেহকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর জন্য কয়েকটি দেশকে পাকিস্তান যে অনুরধ করেছে তা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন জনাব ফতেহ বাংলাদেশের বীর ও দেশপ্রেমিকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি দেশ মাতৃকার টানে সাড়া দিয়েছেন। তিনি ফতেহ এর বিরুদ্ধে পাক অভিযোগে বিস্মিত হয়েছেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা পরিবর্তন করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে দল নেতা করা হয়।
বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক দুত বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী দু সপ্তাহের উত্তর ইউরোপের নরওয়ে সুইডেন ফিনল্যান্ড ডেনমার্ক সফর শেষে লন্ডন ফিরেছেন। এখান থেকে তিনি জাতিসংঘ সাধারন পরিষদের অধিবেশনে অআমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগদানের জন্য নিউইয়র্ক যাবেন। লন্ডনে তিনি বলেছেন এসব দেশে তিনি বাংলাদেশের অনুকূলে আশানুরূপ সারা পেয়েছেন।
জাপানের প্রধান দৈনিক আশাহি শিম্বুন সম্পাদকীয় নিবন্ধে বাংলাদেশ হতে পাকিস্তানী সৈন্য প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছে। [যুগান্তর/কালান্তর ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]

নুরুল আমীন

পিডিপি প্রাদেশিক সভাপতি নুরুল আমীন করাচী থেকে লাহোর পৌঁছে সাংবাদিকদের বলেছেন পূর্ব পাকিস্তানে উপ নির্বাচন করার মত পরিবেশ এখনও সৃষ্টি হয়নি। তিনি বলেন উপ নির্বাচন এক মাস পিছিয়ে দেয়া উচিত। অন্যথায় কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নাও নিতে পারে। তিনি করাচীতে তার দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আলী, পশ্চিম পাকিস্তান সভাপতি নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন পূর্ব পাকিস্তানের মালিক সরকার একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তাই এ সরকার নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার সম্ভাবনা নেই।
কাইউম মুসলিম লীগ সাধারন সম্পাদক আব্দুস সবুর খান নির্বাচন এক মাস পিছিয়ে না দিলে তার দল নির্বাচনে অংশ নিবে না। [পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত সকল দৈনিক পত্রিকা ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]

শহরের গণ্যমান্য নাগরিকদের সাথে গভর্নর মালিকের বৈঠক

গভর্নর মালিক ঢাকা শহরের ৩০টি ইউনিয়নের শান্তি কমিটির নেতৃবৃন্দ এবং গণ্যমান্য নাগরিকদের সাথে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি বলেন পাকিস্তানের সংহতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে জনগন অত্যন্ত সজাগ রয়েছে। তিনি বলেন পরিস্থিতি আগের চাইতে অনেক উন্নত হয়েছে। তিনি জনগণকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আবেদন জানান। বৈঠকে এসময় তার সাথে ছিলেন গভর্নরের বেসামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। ঢাকা সফররত ব্রিটিশ এমপি জন ম্যাকি গভর্নর মালিকের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। [পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত সকল দৈনিক পত্রিকা ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]

হামিদুল হক চৌধুরী।

বেসামরিক মন্ত্রীসভা গঠনে যারা অভিনন্দন জানিয়েছেন তারা হলেন সাবেক মন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন নতুন সরকার দেশে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় সঠিক ও কার্যকরী ভুমিকা পালনে সক্ষম হবে। তিনি সরকারকে জনসাধারনের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন অর্থনৈতিক স্বাভাবিকতা পুনরুদ্ধার এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাবে। [পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত সকল দৈনিক পত্রিকা ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী

সন্ধায় ভারতীয় চরদের একটি দল চট্টগ্রামের চন্দনপুরায় পাকিস্তান কনভেনশন মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর গাড়িতে গ্রেনেড হামলা করে । হামলায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী গুরুতর আহত হন তার ড্রাইভার নিহত হয়।
[ বাংলাদেশ ডকুমেন্ট, তৃতীয় অধ্যায়, পূর্বপাকিস্তান সরকারের পাক্ষিক গোপন প্রতিবেদন]

আয়েন উদ্দিন

রাজশাহীর পুঠিয়া হাই স্কুল মাঠে পুঠিয়া থানা শান্তি কমিটি আয়োজিত এক জনসভায় রাজশাহী জেলা শান্তি কমিটি আহবায়ক আয়েন উদ্দিন বলেছেন ভারত আজ পর্যন্ত পাকিস্তানের অস্তিত্ব স্বীকার করেনি। এ জন্য তারা আবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জঘন্য কার্যক্রম শুরু করেছে। তারা আমাদের মাতৃভূমির অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাচ্ছে। তাদের প্রচার যন্ত্র গুলো আমাদের বিরুদ্ধে হীন প্রচার চালাচ্ছে। তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় রকমের আক্রমণ চালানোর প্রচেষ্টায় আছে। সভায় প্রস্তাব গৃহীত হয় যে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে ভারতের সকল আক্রমন প্রতিহত করা হবে। [পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত সকল দৈনিক পত্রিকা ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]

মন্ত্রীবর্গের কর্মতৎপরতা

পূর্ব পাকিস্তানের শ্রম, সমাজকল্যাণ ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী এ.এস.এম সোলায়মান ঢাকায় বলেন, পাকিস্তানের বীর সেনাবাহিনী শত্রুকে নির্মূল করে দিয়েছে। শত্রুরা প্রিয় মাতৃভূমি পাকিস্তান ভাঙ্গতে চেয়েছিল। কোন শক্তিই পাকিস্তান ভাঙ্গতে পারবে না।
অর্থমন্ত্রী আবুল কাশেম সকালে তিন নেতার মাজার জিয়ারত করে সচিবালয়ে গমন করেন। তিনি মওলানা আকরাম খা তমিজ উদ্দিন খা এর মাজারেও দোয়া করেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রী ওবায়দুল্লাহ মজুমদার ঢাকা ও মিটফোর্ড হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন।
মৌলিক গণতন্ত্র মন্ত্রী মওলানা ইসহাক চকবাজার এবং লালবাগ মসজিদে সমাবেশে ভাষণ দেন। [পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত সকল দৈনিক পত্রিকা ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]

ভারতের তৎপরতা

দিল্লিতে আন্তজার্তিক বাংলাদেশ সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে ভারতের নেতৃত্ব এ বাংলাদেশকে বিশ্বজনীন ভিত্তিতে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
সভায় আরও যে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয় তা হল
বাংলাদেশের বিষয় কোনভাবেই পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়।
পাকিস্তান কে সকল প্রকার অস্র সাহায্য বন্ধ করতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের সকল দেশ থেকে অস্র সাহায্য দেয়া উচিত।
বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সকল দেশ ও সংস্থার এগিয়ে আসা উচিত।
ভারতে আশ্রিত বাংলাদেশের শরণার্থীদের মানবিক সাহায্য দেয়া সকল দেশের কর্তব্য।
বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সংগ্রহের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদর দপ্তর হবে লন্ডনে। সম্মেলনে আগত প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চল পরিদর্শনে যাবেন।
সম্মেলনে আরও কিছু সুপারিশ করা হয় বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একদল অহিংস পদযাত্রী ভারত থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হোক। কাবুল, তেহরান বা দিল্লি থেকে ইসলামাবাদে একটি আন্তর্জাতিক যাত্রী দল পাঠানো হোক। প্রতিনিধিরা দিল্লির পাকিস্তানি মিশনে গিয়ে সম্মেলনের বক্তব্য এবং বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবি জানাবেন। প্রতিনিধিরা আগামীকাল শরণার্থীশিবিরগুলো পরিদর্শন করে বাংলাদেশের সীমানায় পার হবেন। তাঁরা প্রমাণ করবেন যে তাঁরা বাংলাদেশে পাকিস্তানি কর্তৃত্ব মানেন না। শরণার্থীদের জন্য ভারত সরকারের ভূমিকায় তাঁরা আনন্দিত।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে কাল নিউইয়র্কের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। প্রতিনিধিদলে ১৭ জন সদস্য আছেন যার মধ্যে ৫ জন সাংসদ। প্রতিনিধিদলে আরও আছেন পর রাষ্ট্র সচিব কাউল এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ কমিটি চেয়ারম্যান ডিপি ধর। কাউল আগেই সেখানে পৌঁছেছেন।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব টিএন কাউল এদিন নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিব উথান্টের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশ পরিস্থিতি ও শরণার্থী সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যাপারে ভারতের গভীর উদ্বেগের কথাও তিনি তাঁকে জানান। [যুগান্তর/কালান্তর ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]

Prepared by Salah Uddin