৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ আজকের এদিনে
এএম মালিক
প্রেসিডেন্ট এর সাবেক ত্রান উপদেষ্টা এএম মালিক গভর্নর ভবনে পূর্ব পাকিস্তানের ১৮ তম গভর্নর হিসেবে শপথ নিয়েছেন। আগস্টের ৩১ তারিখে তাকে এ পদে নিয়োগ দেয়া হয়। বিচারপতি বিএ সিদ্দিকি তাকে শপথ পড়ান। শপথ শেষে পাঞ্জাব রেজিমেন্ট এর একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার দেয়। অনুষ্ঠানে লেঃ জেনারেল নিয়াজি, হাইকোর্টের বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কূটনীতিক, সরকারী সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তাগণ গন উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথির মধ্যে সাবেক গভর্নর মোনেম খান, সাবেক গভর্নর সুলতান উদ্দিন, আওয়ামী লীগ এমএনএ জহির উদ্দিন, জমিয়ত প্রাদেশিক সভাপতি মোহসেন উদ্দিন দুদু মিয়া, পিডিপি নেতা ইউসুফ আলী মোহন মিয়া, সাবেক মন্ত্রী পিডিপি নেতা আজিজুল হক নান্না মিয়া, ফজলুল কাদের চৌধুরী, সবুর খান, গোলাম আজম, পিডিপি নেতা রফিকুল হোসাইন, এএসএম সোলায়মান, সাবেক স্পীকার আব্দুল জব্বার খান, সাবেক মন্ত্রী আনোয়ারুল হক চৌধুরী, সিরাজ উদ্দিন, সাবেক মন্ত্রী একেএম হাফিজ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। [ইত্তেফাক/ সংগ্রাম/পাকিস্তান ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
কাজী সব্যসাচী
কবি কাজী নজরুল ইসলামের ছেলে কাজী সব্যসাচী পত্রিকায় এক বিবৃতিতে বলেছেন ইয়াহিয়া সরকার তার পিতার জন্য পাকিস্তান সরকারের মাসিক ভাতা দেওয়ার যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন লাখ লাখ মানুষের রক্তমাখা টাকা তিনি স্পর্শ করবেন না। তিনি বলেন আগে পাকিস্তান সরকার কবিকে ভাতা দিলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধের কারন হিসেবে তখন তারা বলেছিল কলকাতায় পাকিস্তান ডেপুটি হাই কমিশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের পক্ষে এ ভাতা অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। [যুগান্তর/কালান্তর ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
লন্ডনের কয়েকটি পত্রিকার সুত্র উল্লেখ পূর্বক পাকিস্তানের সংবাদ পত্র গুলো প্রকাশ করে যে ভারত অক্টোবরের শেষে পাকিস্তান আক্রমণ করতে পারে। এ সময় বর্ষা শেষ হবে। পত্রিকা বলছে পূর্ব পাকিস্তান ঘিরে তারা ৫ ডিভিশন সৈন্য মোতায়েন করেছে। চীন সীমান্তে এবং কাশ্মীরেও কয়েক ডিভিশন সৈন্য মোতায়েন করেছে।
পূর্ব পাকিস্তানের বিদায়ী গভর্নর টিক্কা খান রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।
ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাই কমিশনার সাজ্জাদ হায়দার রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। [ইত্তেফাক/সংগ্রাম/পাকিস্তান ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পাইলট অফিসার রশিদ মিনহাজকে দেশের শীর্ষ সামরিক খেতাব নিশান ই হায়দার খেতাবে ভূষিত করেছেন। বাহিনী থেকে তাকে ৩ নং খেতাব সিতারা ই জুরাত প্রস্তাব করা হয়েছিল। ভারতের সুত্র উল্লেখ পূর্বক পাকিস্তানের সংবাদ পত্র গুলো প্রকাশ করে যে কলেরা এবং আমাশয়ে পশ্চিমবঙ্গে ২৬০০০ পূর্ব পাকিস্তানী শরণার্থী মারা গিয়েছে। [ইত্তেফাক/ সংগ্রাম/পাকিস্তান ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
জেনারেল নিয়াজি তার নতুন দায়িত্ব প্রাদেশিক সামরিক আইন প্রশাসকের পদে দায়িত্বভার গ্রহন করেছেন। [ইত্তেফাক/সংগ্রাম/পাকিস্তান ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
প্রদেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। প্রদেশের উত্তরাঞ্চলের সাথে কোচ সার্ভিস আবার চালু হয়েছে।
জাতীয় লীগ প্রধান আতাউর রহমান খান মুক্তি পেয়েছেন। আতাউর রহমান খান নিষ্ক্রিয় অবস্থায় তার ধামরাই এর গ্রামের বাড়ীতে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে তিনি ১৪ জুন গ্রেফতার হন। সারা প্রদেশে সাধারন ক্ষমা ঘোষণার আগের দিন তিনি মুক্তি লাভ করেন। [ইত্তেফাক/ সংগ্রাম/পাকিস্তান ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
ভারতের তৎপরতা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দিল্লিতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অধিনায়কদের সম্মেলনে বলেছেন বিমান বাহিনীকে প্রতিরক্ষা কৌশলের সমস্যা সমুহ নতুন ভাবে চিন্তা করতে অধিনায়কদের বলেছেন। তিনি বলেন প্রতিরক্ষা বাহিনীকে যতদুর সম্ভব মিতব্যায়ী হতে হবে। তিনি শরণার্থীদের বিভিন্ন কাজে বিমানবাহিনীর ভুমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন পৃথিবীর মানুষ এর আগে বাংফ্লাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মত কোন পরিস্থিতি দেখেনি। তিনি বলেন সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ এ সংগ্রামে এক সুত্রে গেথেছে। এর অগ্রগতি কোন শক্তিই রুখতে পারবে না। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সাথে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন মন্ত্রী বিদ্যাচরন শুক্লা। [যুগান্তর/কালান্তর ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জগজীবন রাম বিহারের বক্সারে বলেছেন পাকিস্তান বদমাস ছেলের মত আচরন করছে। তিনি বলেন পাকিস্তান যেন ভুলে না যায় ভারত যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত। পাকিস্তান যদি ভারত আক্রমনের সাহস দেখায় তবে ভারতের জওয়ানেরা পাকিস্তানকে সমুচিত শিক্ষা দেবে।[যুগান্তর/কালান্তর ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার সরণ সিং কাঠমান্ডুতে নেপালের রাজা মহেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ দেব এবং প্রধানমন্ত্রী কীর্তিনিধি বিস্তার সঙ্গে বাংলাদেশ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ সময় নেপালের প্রধানমন্ত্রী সরন সিংকে জানান জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় বাংলাদেশের ব্যাপারে নেপাল ভারতকে সমর্থন জানাবে। পরে সরন সিং সাংবাদিকদের বলেন তাদের আলোচনায় কোন বিষয়ে মতপার্থক্য ঘটেনি। তিনি নেপালের প্রধানমন্ত্রীকে ভারত সফরের আমন্ত্রন জানিয়েছেন। তারা আগামীকালও আরেকবার বৈঠক করবেন। [যুগান্তর/কালান্তর ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
ভারত সফররত যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টির সাংসদ কেনেথ বেকার পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি শরণার্থী পরিদর্শনের পর দিল্লি রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের ইঙ্গিত দেন, শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের উদ্যোগ যাতে বন্ধ হয়, সে জন্য তাঁদের সরকার পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।[যুগান্তর/কালান্তর ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
আন্তজার্তিক ত্রান দল ওমেগার সদস্যরা ঘোষণা করেছেন তারা আবারও পূর্ববঙ্গে গমন করবেন। [যুগান্তর/কালান্তর ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
ভারত সফর করে যাওয়া ব্রিটিশ এমপি পিটার শোর লন্ডনে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডগলাস হিউমের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি মন্ত্রীকে বলেছেন পাকিস্তানে ব্রিটিশ সাহায্য আবার নতুন করে চালু করা উচিত নয়। তিনি বলেন পশ্চিম পাকিস্তানীরা পূর্ব বঙ্গ থেকে সরে না আসলে গৃহযুদ্ধ আরও ব্যাপক হবে এবন তা এ অঞ্চলের জন্য অশান্তির কারন হবে। [যুগান্তর/কালান্তর ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
Prepared by Salah Uddin