You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.15 | ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | আজকের এদিনে (with references) - সংগ্রামের নোটবুক

1971.09.15 | ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | আজকের এদিনে (with references)

ডি পি ধর
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক কমিটির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ বিষয়ে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত ডি পি ধর জাতিসংঘগামী বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনার জন্য ১৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা যাবেন। এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ। দলে নবগঠিত উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য ওয়ালী ন্যাপ নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ এবং আওয়ামী লীগের নেতা ফণীভূষণ মজুমদার থাকবেন। দলটি ১৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক রওনা দেবে। [যুগান্তর ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
ইয়াহিয়া ও রেজা শাহ পাহলভির যুক্ত ইস্তেহার

তেহরানে পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও ইরানের রেজা শাহ পাহলভির মধ্যে পাক-ভারত পরিস্থিতি নিয়ে দু’দিনব্যাপী আলোচনা শেষে যুক্ত ইস্তেহার প্রকাশিত হয়। ইস্তেহারে ইরানের শাহ পাকিস্তানের সঙ্গে তার একাত্মতা প্রকাশ করছে। [ইত্তেফাক/ সংগ্রাম ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ ]

আগাশাহী বনাম কৃষ্ণ মেনন

জাতিসংঘে পাকিস্তানের দূত আগাশাহী জাতিসংঘের বিশেষ কমিটির বৈঠকে বিশ্বশান্তি পরিষদের ভারতীয় প্রতিনিধি কৃষ্ণ মেননের দাবিকে ধৃষ্টতা হিসেবে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘মেনন শুধুমাত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে মুক্তি সংগ্রাম বলে চালানোর অপচেষ্টাই করছে না, জাতিসংঘের সনদের মূলনীতির বিরোধী কাজ করছে।[ইত্তেফাক/ সংগ্রাম ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ ]

চালনায় ফ্রগমেন/নৌ কমান্ডো হামলা
চালনায় ৮টি জাহাজ নোঙ্গর করা থাকায় মোট ১৬ জনের ফ্রগ ম্যানের একটি দল ৮টি জোরা দলে বিভক্ত হয়ে ৮টি লিম্পেট মাইন সহ আক্রমনের প্রস্তুতি নেয়। দলের অধিনায়ক ছিলেন আসাদুল্লাহ। রাত আড়াইটায় তারা রওয়ানা দিয়ে জাহাজের কাছে পৌঁছে প্রায় ৪টায়। সাড়ে ৪টায় তারা মাইন স্থাপন করতে সক্ষম হয়। এর তারা ফিরে আসে ঠিক এক ঘণ্টা পর মাইন গুলি বিস্ফোরিত হয়। ৮টি জাহাজের ৭টি চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যোদ্ধারা ফিরে আসার সময় বনবিভাগের নৌযান ও কিছু অস্র দখল করে সমশেরগঞ্জ (সাতক্ষীরা সীমান্ত) ফিরে আসে। [ অবজারভার ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ ]
ছাত্রলীগ নেতা আব্দুস সালাম

ঢাকা শহর ছাত্রলীগ নেতা [সাধারন সম্পাদক?] আব্দুস সালাম আহমেদাবাদে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন বর্তমান গভর্নর এ এম মালিক সাবেক গভর্নর টিক্কা খানের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি বলেন তিনি বাঙ্গালী হলেও তার উপর বাঙ্গালীদের কোন স্থা নেই। তিনি বলেন ২৫ মার্চ কালো রাতেই পাক জঙ্গিশাহী ৫০০০০ ছাত্র হত্যা করেছে। এর মধ্যে ৪০০০০ ছাত্র ঢাকার। তিনি বলেন সে রাতে পাক সেনারা তার পিতা মাতাকেও হত্যা করেছে। বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। [ যুগান্তর/ কালান্তর ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]

মিয়া মমতাজ দৌলতানা
কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মিয়া মমতাজ দৌলতানা লাহোরে নিজ বাসভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন দেশে পূর্ণ গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের একটি ব্যাবস্থা হিসেবে জন্য শাসনতন্ত্র পেশ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন জনপ্রতিনিধি দ্বারা গৃহীত ও অনুমোদিত হলেই শাসনতন্ত্রের বিশুদ্ধতা অর্জন ও গণতান্ত্রিক কর্তৃত্ব অর্জন করতে পারে। তিনি বলেন তার দল দেশের উভয় অংশে এক সাথে এবং দ্রুততার সাথে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষপাতি। তিনি বলেন পূর্ব পাকিস্তানে বেসামরিক সরকার গঠন অপরিহার্য ছিল। [ইত্তেফাক/ সংগ্রাম ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ ]
খান আব্দুল কাইউম খান
কাইউম মুসলিম লীগ প্রধান খান আব্দুল কাইউম খান মুলতানে স্থানীয় বার কাউন্সিলে বলেছেন তার দল ক্ষমতা হস্তান্তরের বিরোধী নয়। তিনি বলেন হুমকির মাধ্যমে বা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের পদক্ষেপকে প্রতিহত করা হবে। তিনি বলেন তার দল চায় শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর। তিনি বলেন পূর্ব পাকিস্তানের অনুরূপ যে কোন ঘটনাই কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা হবে। তিনি বলেন ক্ষমতা হস্তান্তরের পূর্ব শর্ত হিসেবে একটি অন্তবর্তীকালীন শাসনতন্ত্র জারী করতে হবে তিনি আশা করেন প্রেসিডেন্ট শীঘ্রই তা জারী করবেন। তিনি বলেন জাতীয় পরিষদে দুই তৃতীয়াংশ সদস্যদের অনুমোদনে শাসনতন্ত্র সংশোধনের বেবস্থা রাখতে হবে। [ইত্তেফাক/ সংগ্রাম ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ ]
ইসরাইলী অস্রের জন্য এক বাঙ্গালীর প্রচেষ্টা
ভারতের বাংলা দৈনিক যুগান্তর বলেছে আবুল কাশেম নামে বাংলাদেশের একজন নেতা ইসরাইলের কাছে অস্র সাহায্যের জন্য ধর্না দিয়েছেন। ভুমি থেকে ভুমিতে নিক্ষেপন যোগ্য অস্র, ক্ষুদ্রাকার কয়েক লাখ শেল, বিমান বিধ্বংসী কামান এবং মেশিনগান পাওয়ার জন্য তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন। হারেংজ নামে একটি সংবাদপত্রের সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন বাংলাদেশের অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে তিনি বলেন ইসরাইলের সাহায্য তাদের শেষ সুযোগ। তিনি বলেন তিনি এখনও পর রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন নি কারন সে দেশের সরকার তাকে এখনও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি মনে করছে না। তিনি বলেন তার ভিসার মেয়াদ তিন দিন মেয়াদ শেষে তাকে এখান থেকে চলে যেতে হবে। তিনি বলেন ইসরাইল সরকারের আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত তিনি সেখান থেকে যাচ্ছেন না। [ যুগান্তর ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী
অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম ম্যাক মোহন পার্লামেন্টে জানান পাকিস্তানে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে পত্র দিয়েছেন। পত্রে তিনি আশা প্রকাশ করেন পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবর রহমানের এর ব্যাপারে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তিসঙ্গত ও সহানুভূতিশীল মনোভাব গ্রহন করিবেন। [ইত্তেফাক ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ ]
পার্লামেন্টে তিনি ভারতকে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে না জড়ানোর জন্য ভারতের প্রধান মন্ত্রীর নিকটও পত্র প্রেরন করিয়াছেন বলিয়া জানান। পত্রে তিনি ভারতকে অধিকতর সংযত মনোভাব গ্রহনের আবেদন জানান।
বিবিধ
আসামের করিমগঞ্জ জেলায় নাশকতার মাধ্যমে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটানোর পর আজ একই জেলার পাথরকান্দি রেলস্টেশনে কয়েকটি বোমা উদ্ধার করা হয়।

ঢাকায় পিডিপির বৈঠক
পিডিপি প্রাদেশিক সভাপতি নূরুল আমীনের ইস্কাটনের বাসায় নূরুল আমীনের সভাপতিত্বে পিডিপির কার্যকরী কমিটির ৩০ সদস্য এর মধ্যে ৩ জন পশ্চিম পাকিস্তানী প্রতিনিধিসহ ১৮ জন সদস্যের উপস্থিতিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নতুন সরকারে পিডিপি যোগ দিবে কিনা তার দায়িত্ব নুরুল আমীনের উপর অর্পণ করা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় আসন্ন উপনির্বাচনে পিডিপি অংশ নিবে। এই সভায় মাহমুদ আলীকে পিডিপি পূর্ব পাকিস্তান আঞ্চলিক শাখার সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। এ ছাড়াও টাঙ্গাইল এবং রাজশাহী ব্যাতিত সকল জেলার কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে আব্দুস সালামের পদত্যাগের ফলে পদটি শুন্য হয়েছিল। সভায় উপস্থিত পশ্চিম পাকিস্তানী তিন নেতা হলেন মেজর জেনারেল সরফরাজ, রানা নজরুর রহমান ও আরশাদ হোসেন চৌধুরী। এ ছাড়াও বিভিন্ন জেলা কমিটি গঠন করা হয় বিস্তারিত ইমেজে। অল পাকিস্তান পিডিপি সভাপতি নসরুল্লাহ খান এবং সাধারন সম্পাদক শেখ নাসিম হাসান সভায় উপস্থিত ছিলেন না। [ইত্তেফাক/ সংগ্রাম ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ ]
এমপিএ হাসেমের পিডিপিতে যোগদান
হবিগঞ্জ থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য পিডিপিতে যোগদান করেছেন। সম্প্রতি তিনি সামরিক আদালত থেকে মালায় অব্যাহতি পেয়েছেন। [ইত্তেফাক/ সংগ্রাম ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ ]
গোলাম আজম
জামাত প্রাদেশিক প্রধান গোলাম আজম প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এমএম আহমেদকে ছুরিকাঘাতে আহত করার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য দুষ্কৃতিকারীর কঠোর সাজা দাবী করেন। তিনি এম এম আহমেদ এর আঘাত গুরুতর না হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। জামাত প্রাদেশিক সভাপতি গোলাম আজম মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল এডুকেশন সেন্টারে ট্রেনিংরত রাজাকারদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘একমাত্র মুসলিম জাতীয়তায় পূর্ণবিশ্বাসী ব্যাক্তিরাই পাকিস্তানের হেফাজতের জন্যে জীবন দান করতে পারে এবং সত্যিকার মুসলমানরাই যে পাকিস্তানের প্রকৃত সম্পদ, এই সার্টিফিকেট পাকিস্তানের দুশমনরাই তাদের কার্যকলাপের দ্বারা এবার প্রদান করেছে। তিনি বলেন ইসলাম ও পাকিস্তানের দুশমনরা আলেম ওলামা মাদ্রাসা ছাত্র ও ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের হত্যা করে প্রমান করতে চাচ্ছে যে এদের হত্যা করলেই পাকিস্তান ধ্বংস করা যাবে। এই হামলাকে তিনি আল্লাহতায়ালার রহমত বলে আখ্যা দিয়ে বলেন এই কারনেই তারা নিজেদের ও পাকিস্তান রক্ষার জন্য রাজাকার মুজাহিদ ও পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিচ্ছে। এই সভায় জামাত থেকে মন্ত্রিত্ব পাওয়া একেএম ইউসুফ এবং আব্বাস আলি খান বক্তৃতা করেন। [ইত্তেফাক/ সংগ্রাম ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ ]

Prepared by Salah Uddin