You dont have javascript enabled! Please enable it! কংগ্রেস রাজনীতির আপসবাদ - সংগ্রামের নোটবুক

কংগ্রেস রাজনীতির আপসবাদ

হ্যা, ইংরেজ আমলার উদ্যোগে এবং ভারতীয় শিক্ষিত এলিটশ্রেণির বিশিষ্ট কয়েকজনের সহযােগিতায় গঠিত সংগঠন জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্য ছিল এই বিশেষ শ্রেণির জন্য শাসকদের কাছ থেকে কিছু সুযােগ-সুবিধা আদায় করা। তা আর যা-ই হােক ভারতীয় জনতার স্বার্থভিত্তিক দাবি-দাওয়া বা সুযােগসুবিধা নয়। শুরুতে তা যে বিদেশি শাসন থেকে মুক্তির অর্থাৎ স্বাধীনতার দাবি নয় তা বলাই বাহুল্য। তবু সংগঠনের মাধ্যমে সরকারের কাছে দাবি-দাওয়ার একটা ইতিবাচক দিক শিক্ষিত মধ্যবিত্তের একাংশের মনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কংগ্রেস এ পর্যায়ে নিঃসন্দেহে ব্রিটিশরাজের সহযােগিতায় বিশ্বাসী এবং আপসবাদী। পাশাপাশি এটাও সত্য যে, দেশে বা বিদেশে তৎপর বিপ্লববাদীরা চেয়েছেন বিদেশি শাসনমুক্ত স্বদেশ অর্থাৎ স্বাধীন স্বদেশ এবং সেজন্যই তাদের লড়াই ও আত্মত্যাগ। রাজা পঞ্চম জর্জের সংসারে একটু সুবিধাজনক অবস্থান তাদের লক্ষ্য ছিল না। তবে বিস্তারিত আলােচনায় না গিয়েও এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, ভারতীয় রাজনীতির জন্য দুর্ভাগ্য যে, এই আত্মত্যাগের উজ্জ্বল মহিমার মধ্যে ছিল সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় রক্ষণশীলতার প্রভাব সেখানে বিভাজনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত নিহিত। এর দায় উনিশ শতকী হিন্দুরিভাইভালিজম ও আনন্দমঠ, চন্দ্রশেখর, দেবী চৌধুরানী জাতীয় উপন্যাসের ধর্মীয় আহ্বানের ফল, ধীরেসুস্থে যা বাংলা থেকে মারাঠাস্থান হয়ে দূর পাঞ্জাব পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। পাশ্চাত্য রেনেসাঁসের মুগ্ধ নায়কগণ কেন জানি না এ সত্য অনুধাবনের চেষ্টা করেননি যে, ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা অহিন্দু। এবং রাজনৈতিক তৎপরতার প্রতিক্রিয়ায় তারা এক সময় আত্মসচেতন হয়ে উঠবেই। বাস্তবিক এ সত্যটাই পরে এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে দেখা দিয়েছিল। 

এ সত্য স্বল্প সংখ্যায় হলেও নিরপেক্ষ রাজনৈতিক লেখকগণ স্বীকার করেছেন। সুপ্রকাশ রায় থেকে সুনীতিকুমার ঘােষ এবং সাবলটার্ন তত্ত্বের স্বনামখ্যাত ব্যক্তি প্রায় সবাই ভারতীয় রাজনীতির এ ঐতিহাসিক সত্যের দিকে  আলােকপাত করেছেন। আমরাও একই কথা লিখছি গত ৬০ বছর যাবত প্রাসঙ্গিক বক্তব্যে । লিখেছেন কমরেড মুজফফর আহমদ বা ভবানী সেন থেকে। মুশিরুল হাসান ও সমমনা কোনাে কোনাে লেখক- বামপন্থী বা গণতন্ত্রী । আবার বামপন্থী কোনাে কোনাে বাঙালি লেখকই এ বিষয়ে ভিন্নমত পােষণ করেছেন।  সে কথা থাক  কারণ ভিন্নমত যে কেউ লালন করতে পারেন সেখানে যুক্তি থাকুক না থাকুক। অবশ্য সুনীতিকুমার ঘােষ তার বইতে স্পষ্ট ভাষায়ই। বলেছেন যে, বুর্জোয়াশ্রেণি থেকে আগত এসব বিপ্লবী তৎপরতায় ছিল হিন্দুত্ববাদী তত্ত্ব, হিন্দুধর্মীয় প্রতীকের ব্যবহার- তাদের সংগঠনে ও প্রচারে, যে কারণে তারা মুসলমানদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তবে তা প্রাথমিক পর্যায়ে (ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য রাজ’ ১ম খণ্ড) । কিন্তু বাস্তবতা হলাে বিপ্লববাদ আগাগােড়াই হিন্দুত্ববাদে মােড়া ছিল যেজন্য কিছু ব্যতিক্রম বাদে মুসলমান তরুণ এই মহতী উদ্যোগে শরিক হতে চায়নি। এ কথা লিখেছেন কমরেড মুজফফর আহমদ, এমনকি মাওলানা আজাদও। প্রসঙ্গত স্মরণযােগ্য যে, দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকুতথা সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনাল সম্মেলনে (১৯০৭) মাদাম কামা ভারতীয় স্বাধীনতার পক্ষে প্রস্তাব উত্থাপন করেন (রমেশচন্দ্র মজুমদার, ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস)। কিন্তু কংগ্রেস তার প্রতিষ্ঠাবর্ষের ৪৫ বছর পর পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব গ্রহণ করে (জওহরলাল নেহরুর প্রস্তাব, ২৯২৭) এবং তখনাে তা গান্ধির অমতে। এর আগে ১৯২১ সালে কংগ্রেসের আহমেদাবাদ অধিবেশনে হসরত মােহানির উত্থাপিত ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব গান্ধির তীব্র বিরােধিতার কারণে বাতিল হয়ে যায়। অথচ এক বছর পর বাঙালি কবি নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাদধন্য তার ‘ধূমকেতু’ পত্রিকায় ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা দাবিতে নিবন্ধ লেখেন এই কথা বলে, স্বরাজ টরাজ বুঝি না কারণ এর মানে একেকজন একেক রকম করে থাকেন। ধূমকেতু ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চায়’।  কিছুটা পরিণত পর্যায়ে কংগ্রেসের দাবি অবশ্য হােমরুল বা স্বরাজ, আবার তার ব্যাখ্যায় নানা মত, যে কথা উল্লেখ করেছেন কবি নজরুল। তবে কংগ্রেস এ বিষয়ে ভিন্নপথ ধরতে পারত যদি এম, কে, গান্ধি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরে কংগ্রেসের হাল না ধরতেন এবং শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস সংগঠনের সর্বাধিনায়ক না হয়ে উঠতেন। সর্বোপরি তার অহিংসা, সত্যাগ্রহ, অনশন, চরকা-খাদি এবং নরমপন্থী আপসবাদী নীতি যদি কংগ্রেস গ্রহণ না করত । তবু অহিংসার প্রবল প্রতাপের মধ্যেও কংগ্রেসে বাম ঘরানার বিকাশ ঘটেছিল এবং শেষদিকে সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন এ ধারার যােগ্য প্রতিনিধি। 

গান্ধি প্রথম থেকেই কংগ্রেসের আপসবাদী ধারার পক্ষে জোরালাে অবস্থান। নেন। চাপ-আপস-চাপ এই নীতিই তিনি বরাবর পালন করে গেছেন। যেমন অসহযােগ তেমনি আইন অমান্য আন্দোলন এমনকি সর্বশেষ ভারত ছাড়’ আন্দোলনেও। তার চেয়েও বড় কথা- জনগণের কথা বলে, কংগ্রেসকে জনগণের দাওয়ায় পৌছে দিয়েও জনস্বার্থের দাবি আদায়ে কিংবা পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা অর্জনে বিপ্লবীপন্থা বা ব্যাপক কৃষক শ্রমজীবী আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন না গান্ধি, ছিলেন এর বিরােধী। যখনই কোনাে আন্দোলন তৃণমূলস্তর থেকে ব্যাপক তীব্রতা নিয়ে উঠে এসেছে, রাজশক্তির শিকড় ধরে টান দিয়েছে। হােক তা কৃষক, কারিগর, সেনাসদস্য বা ক্রুদ্ধ। শিক্ষিতশ্রেণির, অমনি সে আগুন নেভাতে তৎপর হয়েছেন গান্ধি। এমনকি তার নিজের ডাকা আন্দোলনেও একাধিকবার এ জাতীয় ঘটনা দেখা গেছে। প্রসঙ্গত স্মরণ করা যেতে পারে চৌরিচৌরার ঘটনা উপলক্ষে এবং পরে ‘ভারত ছাড় আন্দোলনের সহিংস ব্যাপকতায় আন্দোলন প্রত্যাহার। তবু তাকে ভুল বুঝেছে ইংরেজ সরকারের শীর্ষ প্রতিনিধি অনেকে এবং খােদ ব্রিটিশরাজ।  ১৯১৫ সালে (৩১ মার্চ) কলকাতায় এক জনসভায় গান্ধি বিপ্লববাদের বিরােধিতা করে বক্তৃতা দেন। এক বছর পর একই সুরে তিনি ভারতবর্ষ ও ব্রিটিশরাজের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও আস্থার কথা উল্লেখ করেন (ঘােষ, প্রাগুক্ত)। এমনি অনেক উদাহরণ তুলে ধরা যায় গান্ধির বক্তৃতা ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ থেকে, সেখানে তিনি বিপুববিরােধী, কৃষক বিদ্রোহবিরােধী, এমনকি সেনাবিদ্রোহবিরােধী। সর্বশেষ উদাহরণ বহুখ্যাত নৌবিদ্রোহ। সেসব ক্ষেত্রে, বিশেষ করে শেষােক্ত ক্ষেত্রে তিনি তার ঘনিষ্ঠ অনুসারী। বল্লভভাই প্যাটেল, রাজেন্দ্রপ্রসাদদের সহযােগিতায় বিদ্রোহী নৌসেনাদের আত্মসমর্পণে প্রভাবিত করেন। এ কাজে তার সুযােগ্য সহচর হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন সর্দার প্যাটেল। তাকে সমর্থন জানান জিন্না- এই প্রথম, এই শেষ । এমনি একাধিক ঘটনায় ভারতব্যাপী বিদ্রোহ ও সংগ্রামের পরিস্থিতি বিকল হয়ে পড়ে বিশেষ করে গান্ধি-রাজনীতির প্রভাবে। আসলে গান্ধি তার অহিংস আন্দোলনের আপসবাদী নীতির সাহায্যে। ব্রিটিশরাজের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে ভারতের জন্য স্বরাজ, হােমরুল তথা স্বশাসনের চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তার চরকা ও খদ্দর যে স্বাধীনতা অর্জনের সহায়ক হতে পারে না এ কথা তার মতাে বুদ্ধিমান রাজনীতিক আইনজীবীর বােঝার কথা নয়। গান্ধির গ্রামােন্নয়নের অনুরাগী হয়েও রবীন্দ্রনাথ চরকা ও খাদির তীব্র সমালােচনা করে ছিলেন তার রচনায়। কবির মতে চরকা জড়ত্বের প্রতীক। 

উপনিবেশের মুক্তি সংগ্রামে এ ধরনের আপসবাদী রাজনীতি যে অচল বিশ্বব্যাপী মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস তা প্রমাণ করেছে। তবু গান্ধি চলেছেন ভিন্নপথে, তার আপনপথে। সেপথ সমঝােতার ও আপসবাদিতার। সেক্ষেত্রে গান্ধির রাজনৈতিক কৌশল ছিল আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশরাজকে আলােচনার টেবিলে বসানাে (যেমন লন্ডনে একাধিক গােলটেবিল বৈঠকের অনুষ্ঠান), সমঝােতা চুক্তি স্বাক্ষর (যেমন গান্ধি-আরউইন প্যাক্ট), কখনােবা কমিশন বসানাে- এসব কিছুর অবশেষ পরিণাম ক্ষমতার অংশিদারিত্ব অথবা মিলেমিশে দেশশাসন- নাম স্বরাজ। এমনকি পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব গ্রহণের পরও তিনি কংগ্রেসকে মুক্ত লড়াইয়ের পথে হাঁটতে দেননি। এসব পদক্ষেপে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে অহিংসা সমর্থক বড়সড় গান্ধিবাদী গােষ্ঠী তৈরি হয়ে যায় যারা সংগ্রামের চেয়ে, আত্মউৎসর্গের বদলে আপসবাদী পথে ভারতে স্বরাজ আনার পক্ষপাতী। ওই গােষ্ঠীর প্রধান সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য রাজেন্দ্রপ্রসাদ, বল্লভভাই প্যাটেল, মহাদেব দেশাই, আচার্য কৃপালনি এমনকি বাংলায় জেএম সেনগুপ্ত এবং হিন্দু মহাসভাপী পণ্ডিত মদনমােহন মালব্য, কেএম. মুন্সী প্রমুখ। তারাই কংগ্রেস নেতৃত্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ।  নেহরু-পিতা-পুত্র দুজনই ছিলেন প্রকৃতিবিচারে মধ্যপন্থী- অবশেষ বিচারে গান্ধি সমর্থক। তাদের বাজনৈতিক দোদুল্যমানতায় কংগ্রেসের স্বদেশী লড়াই ব্যাহত হয়েছে। তাই মােতিলাল নেহরু গান্ধিমতের বিরােধিতায় চিত্তরঞ্জন দাশের সঙ্গে মিলে স্বরাজ্য দল গঠন করেও পরে গান্ধিবলয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে পুত্র জওহরলাল নেহরু মাঝে মধ্যে সমাজতন্ত্র ও লড়াইয়ের শ্লোগান তুলেও ফিরে গেছেন গান্ধির অভয়াশ্রমে। অথচ কনিষ্ঠ নেহরুর রাজনৈতিক চিন্তাভাবনায় রুশ বিপ্লব ঘিরে যতটাই ‘র্যাডিক্যাল’ প্রবণতা ছিল তাতে করে পিতার ঐতিহ্যানুসারে বিপ্লববাদী সুভাষের সঙ্গে তার একাট্টা হওয়ার কথা। কিন্তু উত্তেজক স্লোগান সত্ত্বেও পিতা মােতিলাল যেটুকু এগিয়ে ছিলেন গান্ধিবাদ বিরােধিতায়, আধুনিক রাজনীতির অগ্রসর চিন্তার ধারক জওহরলাল তা পারেননি। তিনি পারেননি ফরােয়ার্ড ব্লকের অন্যতম সংগঠক হতে। মূলত তার আপসবাদী চরিত্রের কারণে। আর দোদুল্যমানতা ছিল তার রাজনৈতিক চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রে একাধিক কারণ তার রাজনৈতিক চিন্তাভাবনায় প্রভাব রেখেছে বলে আমার মনে হয়। যেমন লেখক ও বক্তা জওহরলাল, আধুনিক ও রােমান্টিক চেতনার রাজনীতিক জওহরলাল এবং বাস্তব ক্ষেত্রের জওহরলালের মধ্যে। 

রয়েছে চরিত্রগত পার্থক্য। তাছাড়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কারণ কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষপদটি ধরে রাখার উচ্চাকাঙ্ক্ষা যা গান্ধির আশীর্বাদ বা সাহায্য ছাড়া সম্ভব ছিল না। নেহরু এক্ষেত্রে আপসবাদী। এখানেই নেহরু (জওহরলাল) ও সুভাষের পার্থক্য। এবং এ কারণেই মাঝে মধ্যে গান্ধির অসন্তোষ সত্ত্বেও তিনি কংগ্রেসে মর্যাদাব্যঞ্জক অবস্থান ধরে রাখতে পারেন কিন্তু সুভাষ হন কংগ্রেস থেকে বিতাড়িত। মূলত গান্ধির বিরাগভাজন হয়ে । কংগ্রেস-সভাপতির লােভনীয় পদ এবং এই বিন্দুটি কেন্দ্র করেই সুভাষজওহরলালের ব্যক্তিত্ব সংঘাত। ঠিক ওই পর্যায়ের নেতার সংখ্যা কংগ্রেসে কম। তাদের কেউ সমাজবাদী চিন্তার শরিক ছিলেন না, বিপ্লববাদের তাে ননই। তারা মনেপ্রাণে গান্ধিবাদের সমর্থক। আরাে একটি বিষয় নেহরু-সুভাষ প্রসঙ্গে ভেবে দেখা যেতে পারে। অবাঙালি শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বাংলা-বাঙালি বিরূপতার প্রবণতা যা হয়তাে জওহরলালের মধ্যেও উপস্থিত থাকতে পারে । এদিক থেকে গান্ধির সঙ্গে জিন্নার, কংগ্রেসের সঙ্গে মুসলিম লীগ সংগঠনের বিস্ময়কর মিল লক্ষ্য করার মতাে। কংগ্রেসের পরিণত পর্যায়ে বিশেষ করে ত্রিশ থেকে চল্লিশের দশকের গােড়ার দিকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে যেমন বাংলাভাষীবিরােধী প্রবণতা ছিল প্রবল তেমনি একই ঘটনা দেখা গেছে মুসলিম লীগে। সেখানে জিন্না তার দলের সর্বাধিনায়ক, অন্যদিকে কংগ্রেসে গান্ধি সর্বাধিনায়ক।

দুজনেরই ইচ্ছার বিরুদ্ধে দলে ভিন্নমত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা রীতিমতাে বিপজ্জনক। প্রমাণ সুভাষ এবং ফজলুল হক। দুজনেই বাঙালি, মনেপ্রাণে বাঙালি। দুজনেই একই কারণে রাজনৈতিক বিচারে ট্রাজিক হিরাে’ বিশদ বিচারে যা স্পষ্ট। তবে একটি বিষয় সম্ভবত মানতে হয় যে দুই নেহরুই হিন্দুত্ববাদিতার ক্ষেত্রে ছিলেন সংস্কারমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক যদিও তাদের মধ্যে কখনাে কখনাে রাজনৈতিক কারণে এ বিষয়ে সাময়িক বিভ্রান্তি দেখা গেছে। কিন্তু কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বে সমপ্রদায়বাদীদেরই ছিল সংখ্যাধিক্য, অবশ্য হিন্দু মহাসভাপন্থীদের হিসেবে ধরে। সেখানেই কংগ্রেসের রাজনৈতিক দুর্বলবিন্দু (একিলিসের গোড়ালি’)। যা শেষ পর্যন্ত মুসলিম লীগ তথা জিন্নার কাছে। পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অবশ্য অখণ্ড, অসাম্প্রদায়িক ভারত যদি কংগ্রেসের অন্বিষ্ট হয়ে থাকে ওই দুর্বল বিন্দুর কারণে কংগ্রেসের স্বনামখ্যাত মুসলিম নেতাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি কংগ্রেসের চরিত্রবদল ঘটানাে । সেকুলার দুই নেহরুর রাজনৈতিক দায় ছিল সেকুলার কংগ্রেসী মুসলিম নেতাদের পক্ষে অব্যাহত সমর্থন জোগানাে। কিন্তু তারা তা পারেন নি। কংগ্রেস ও হিন্দু-মুসলমান প্রসঙ্গ পরে বিস্তারিত আলােচনায় স্থান পাবে। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে এই সূত্রপথেই, রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘শনি’ অর্থাৎ সায়িকতার ভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ এবং ভারত বিভাগের সূচনা, বলা যায় বিভাজন রেখার প্রকাশ যা ক্রমশ বড় হতে হতে ফাটল, অবশেষে ভাঙন। আপাতত আলােচ্য বিষয় গান্ধিপ্রভাবিত কংগ্রেসনীতির আপসবাদিতা। আপস শাসকরাজের সঙ্গে।

সংগ্রাম নয়, আপসবাদী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সমঝােতা স্মারকে সই করে ইংরেজবিদায় সমাপন। বাস্তবে তাই ঘটেছে। অবশ্য কারাে কারাে মতে, গান্ধি কখনাে ইংরেজের বিদায় চাননি। মিলেমিশে ভারত শাসন, নাহলে কমনওয়েলথ’-এর গােয়ালে বরাবর সদস্য থাকা। তাই বিপ্লবীদের পূর্ণ স্বাধীনতা বা নজরুলের পূর্ণস্বাধীনতা তাে নয়ই কংগ্রেসী ভিন্ন ঘরানার পূর্ণ স্বরাজও গান্ধির খুব একটা মনঃপূত ছিল না। যেমন পছন্দ ছিল না আলী ভাইদের স্বাধীনতার দাবি- যদিও বিশেষ কারণে গান্ধি একসময় কংগ্রেস-খিলাফতি মৈত্রীবন্ধনের রূপকার হয়ে ওঠেন- যে বিষয় নিয়ে নীতিগত ভিন্নমতও কম নয়। কংগ্রেস খিলাফতু ঐক্য দ্রুতই ভেঙে পড়েছিল। আধুনিক রাজনীতির বিচারে খিলাফত সমর্থনযােগ্য ছিল না। কিন্তু গান্ধি রাজনৈতিক স্বার্থে খিলাফতের সঙ্গে ঐক্য গড়ে তােলেন।  অনেক টানাপড়েন পার হয়ে শেষ পর্যন্ত সুস্পষ্ট ভাষায় স্থায়ী প্রস্তাব হিসেবে ১৯২৯ সালের শেষ দিনটিতে কংগ্রেসের লাহাের অধিবেশনে স্বাধীনতার কথা উচ্চারিত হয়। সে প্রসঙ্গেও স্বার্মঘরানার কারাে কারাে ধারণা ছিল এ প্রস্তাবে গান্ধির রাজী হওয়ার কারণ ব্রিটিশরাজের ওপর চাপ সৃষ্টি করে বড় রকম সুবিধা আদায়। যেমন সুনীতিকুমার উল্লেখ করেছেন মাদ্রাজের কংগ্রেস নেতা সত্যমূর্তির মন্তব্য। আপাতদৃষ্টিতে আপতিক মনে হতে পারে যে এই লাহােরেই ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের প্রস্তাব, দেশবিভাগের প্রস্তাব গৃহীত হয় স্বাধীনতা তথা ক্ষমতা হস্তান্তরের সূত্র হিসেবে। স্বাধীনতা প্রস্তাব নিয়ে নানামাত্রিক মন্তব্যের পেছনে বাস্তব কারণও ছিল। মাদ্রাজ কংগ্রেসে (১৯২৭) গৃহীত স্বাধীনতা প্রস্তাব কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে (১৯২৮) ডােমিনয়ন স্ট্যাটাসের দাবিতে পরিণত হয় (ঘঘাষ, প্রাগুক্ত)। আসলে স্বাধীনতা প্রস্তাবের (১৯২৯) পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল “ব্রিটিশরাজ’-এর ওপর চাপ সৃষ্টি করা যেন সেটা হতে পারে গান্ধির হাতের তুরুপের তাস। সে উদ্দেশ্যে ২৬ জানুয়ারি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উদযাপনে জনগণের প্রতি আহবান জানায় কংগ্রেস নেতৃত্ব (১৯৩০)। জনগণ এ আহ্বান লুফে নেয় নেপথ্যে নেতাদের উদ্দেশ্য যা-ই থাক।    

পরবর্তী ১৭ বছর কংগ্রেসকর্মী, সমর্থক ও স্বাধীনতায় আগ্রহী জনসাধারণ এদিনটি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে যথাযােগ্য মর্যাদায় পালন করেছে রাজধানী থেকে শহরে গ্রামেগঞ্জে। প্রভাতফেরি, কংগ্রেসের তেরঙা পতাকা উত্তোলন, শ্লোগান, গান- ‘জাগাে নব ভারতের জনতা এক জাতি এক প্রাণ একতা’ ইত্যাদি কর্মসূচি নিয়ে। বিষয়টি মনে হয় আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছিল অন্তত নেতৃত্বের কাছে। তাই একপ্রাণ, একতা’ অর্থাৎ সম্প্রদায়গত রাজনৈতিক-সামাজিক সম্প্রীতির আন্তরিক চেষ্টা বড় একটা দেখা যায়নি। বিশেষ করে সময়ের একফোড়। সংস্কারবাদীদের ধারণাই সত্যে পরিণত হয়। গান্ধি-আরউইন চুক্তি (১৯৩১) তার প্রমাণ । তার চেয়েও বড় কথা, গান্ধি ওই চুক্তির মর্ম ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যা বললেন তাতে প্রস্তাবিত স্বাধীনতার চরিত্রবদল ঘটে যায়। কমনওয়েলথে থেকে রাজসূত্র ছিন্ন না করে স্বাধীনতা অর্জন কীভাবে সম্ভব? কিন্তু গান্ধির বাকচাতুর্যে অসম্ভবই সম্ভব মনে হতে পারে। এভাবে গান্ধির নেতৃত্বে কংগ্রেসের স্বাধীনতাতরী বাওয়া। আর সে স্বাধীনতা এল অখণ্ড ভারতে নয় । এল বিভাজিত ভারতবর্ষে বীভৎস সাম্প্রদায়িক রক্তস্নানের মধ্য দিয়ে পেশােয়ার থেকে বঙ্গদেশ পর্যন্ত অসহায় নর-নারী শিশুর হিংস্র হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে। নেতাদের খুঁয়ে বিন্দুমাত্র আঁচড় বা দাগ লাগেনিহিন্দু-মুসলমান বা শিখ কোনাে নেতারই। মরেছে মানুষ। ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে কথিত স্বাধীনতা অর্জনওগান্ধির ইচ্ছাপূরণ। কিন্তু অখণ্ড ভারত নিয়ে ইচ্ছাপূরণ নয়। ভারতবর্ষ ‘ভেঙে দুই ডােমিনিয়নের জন্ম (ডােমিনিয়ন স্ট্যাটাস?)-জিন্নারও ইচ্ছা পূরণ—ভারত ভেঙে মুসলমানদের জন্য সম্প্রদায়বাদী রাজ্য পাকিস্তান অর্জন। অবশ্য পােকায় কাটা’ পাকিস্তান নিয়ে তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। কংগ্রেসের মূল রাজনৈতিক চরিত্রের বিচার ব্যাখ্যায় এটা স্পষ্ট যে, শ্বেতাঙ্গ ধাত্রীর হাতে জন্ম নিলেও প্রথমে শিক্ষিত এলিট ও পরে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আগ্রহে কংগ্রেস গণসংগঠনে পরিণত হয়। ক্রমে এর বিস্তার ঘটে শহর-বন্দরে, গ্রামেগঞ্জের সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের আশা-আকাক্ষার প্রতীক হয়ে । গান্ধিই। এই চরিত্রবদলের রূপকার, কিন্তু তার নিজস্ব আদর্শে কংগ্রেস-সংশ্লিষ্ট গণআন্দোলগুলাে সে আকাঙ্ক্ষা পূরণের চেষ্টা করেছে। তা সত্ত্বেও কংগ্রেস হিন্দু প্রধান সংগঠন হয়েই বেঁচে থাকে। সর্বজনীন ভারতবাসীর সংগঠন হিসাবে নয়।

কংগ্রেস তার রাজনৈতিক চরিত্র বৈশিষ্ট্যে সেকুল্যর গণসংগঠনের আকাক্ষা পূরণ করতে পারেনি। কিংবা তা কতটা লালন করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন খুব একটা অযৌক্তিক নয়। তাছাড়া কংগ্রেস জনসমর্থিত সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও  রাজনৈতিক-সামাজিক শ্রেণি বিচারে ভূস্বামী, এলিট পেশাজীবী, কমপ্ৰেডর মুৎসুদ্দি বুর্জোয়াদের (যেমন বিড়লা, গােয়েঙ্কা, ডালমিয়া ইত্যাদি) শ্রেণিস্বার্থরক্ষক প্রতিষ্ঠান। প্রসঙ্গত ঘনশ্যাম দাস বিড়লার সঙ্গে গান্ধির সখ্য ও তার ওপর নির্ভরতা স্মরণযােগ্য। অন্যদিকে কংগ্রেস জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক চরিত্রের ধারক-বাহক। ভারত বহু ভাষা, বহু জাতিসত্তা এবং একাধিক ধর্মবিশ্বাসীর বাসভূমি বিধায় একক ভারতীয় জাতি বলে কিছু গড়ে ওঠেনি- ইংরেজ শাসনে ভারত ঐক্যবদ্ধ ভূখণ্ড। শাসক-সহযােগিতায় রাজনৈতিক চেতনা বিকাশের মধ্য দিয়ে যা গড়ে ওঠে তা ধর্মভিত্তিক জাতীয়তা। সে বিষয়টি ইতিপূর্বে আলােচিত।  কংগ্রেস তাই সর্বজনীন জাতীয় আদর্শের প্রচারক হয়েও তার ধারক-বাহক। হতে পারেনি। ধরে রাখতে পারেনি বিশাল মুসলমান সমাজকে যদিও শুরুতে তেমন সম্ভাবনা দেখা গেছে । ধরে রাখতে পারেনি তার শ্রেণি-চরিত্রের কারণে, তার ধর্মীয় চরিত্রের কারণে যে জন্য (বিশ শতকের) তিরিশের দশক অস্তে সম্প্রদায়বাদী (বা মুসলিম স্বাতন্ত্র্যবাদী) মুসলিম লীগের অস্বাভাবিক দ্রুততায় বিকাশ। বলতে গেলে মাত্র পাঁচ বছরে লীগ ভারত ভাগের শক্তি অর্জন করে ফেলে। | ভাইসরয় কার্জনের অদূরদর্শিতায় যে বঙ্গবিভাগ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদী আবেগের প্রকাশ তার ইতিবাচক দিক হলাে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয়তাবাদী মুসলমান নেতার বঙ্গভঙ্গবিরােধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ। তাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য আবদুল হালিমগজনভি, ব্যারিস্টার আবদুল রসুল, ইসমাইল হােসেন সিরাজী, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, আবুল হুসেন প্রমুখ বেশ কিছু সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা।

এ উপলক্ষে স্বদেশিয়ানা ও যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উদ্ভব কংগ্রেস তা সেকুলার চেতনায় চিহ্নিত করে ধরে রাখতে পারেনি, তা লালন করেনি। জাতীয় প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা ইত্যাদির উপস্থিতি সত্ত্বেও এর সর্বজনীন চরিত্ররক্ষিত হয়নি। শহুরে শিক্ষিত শ্রেণির স্বার্থ-প্রাধান্যের কারণে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত তার আবেগ সংবরণ করে ওই আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে বৃহত্তর জনগােষ্ঠীর স্বার্থে গ্রামােন্নয়ন ও পল্লীপুনর্গঠনে সক্রিয় হন। তার মতাে ভাববাদী কবিও বুঝে নেন যে কংগ্রেস দেশের অবহেলিত গ্রামীণ জনগােষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা ও উন্নয়নে আগ্রহী নয়। তার দৃষ্টি শহুরে শিক্ষিত শ্রেণির স্বার্থের দিকে। একথা স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের। কংগ্রেসের মূল চরিত্রে তাই ভূস্বামী, এলিট, পেশাজীবী এবং কমপ্ৰেডর ধনিক-বণিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষার প্রাধান্য। সে জন্যই তার পক্ষে দেশপ্রেমী বুর্জোয়া বিপ্লবের সংগঠন হিসেবে সক্রিয় হওয়া সম্ভব হয়নি। আর তাতেই তার  জন্মলগ্ন থেকে বিভাগপূর্বকালের ৬২ বছর জীবনের ৪০ বছর পার হয়ে গেছে পরাধীন স্বদেশের জন্য পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি তুলতে, বিপ্লব তাে দূরের কথা। আর সাম্প্রদায়িকতার রাজনৈতিক সমাধানও তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। পূর্বোক্ত সীমাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ আমার বিবেচনায় গান্ধিপ্রভাব, প্রভাব হিন্দুত্ববাদের ও হিন্দুমহাসভা জাতীয় সংগঠনের। তাসত্ত্বেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শাসক-বিরােধী গণআন্দোলন কংগ্রেসের ছত্রছায়ায়ই ঘটেছে। স্বাধীনতার দাবিতে মানুষ মনেপ্রাণে সংগঠিত হয়েছে। মধ্যবিত্ত থেকে সাধারণ মানুষ, কৃষক-কারিগর থেকে সিপাহি বা নৌসেনা কংগ্রেস নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করেছে। বিশেষভাবে দেশের ছাত্র-যুবশ্রেণি যুক্ত হয়েছে কংগ্রেসের সঙ্গে। কংগ্রেস কি তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি? করেনি তাদের আশাআকাক্ষার সঙ্গে? স্বাধীনতা সংগ্রাম এভাবে মিশ্র ও আপসবাদী চরিত্র ধারণ করেছে। কংগ্রেস তাতে বাতাস দিয়েছে। সম্ভাবনা সত্ত্বেও আমার বিশ্বাস সঠিক নেতৃত্ব, বিপ্লবী নেতৃত্বের অভাবে, কিছু রাজনৈতিক ভুলভ্রান্তির কারণে কংগ্রেস তার বহু-প্রচারিত অন্বিষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে পারেনি। ভারতবর্ষীয় রাজনীতির জুন এ পরিণাম দুর্ভাগ্যজনকই। বলতে হয়। যদিও কাছাকাছি দেশে ভিন্ন পরিণাম । এ প্রসঙ্গে জাতীয়তাবাদী নেতা সান ইয়াত সেনের কথা স্মরণ করতে পারি । সর্বজনীন জাতীয়তাবাদী আদর্শের সে ভূমিকা কংগ্রেস প্রচার সত্ত্বেও পালন করতে পারেনি বলেই এত সহজে দেশবিভাগ  আদর্শে খুদছিল বলেই এত সহজে কংগ্রেসের দেশবিভাগ মেনে নেয়া । জিডি বিড়লা অবশ্য অনেক আগেই বলেছিলেন যে, দেশবিভাগের মাধ্যমেই তাদের একচেটিয়া স্বার্থ রক্ষিত হবে। সে স্বার্থের টানে কংগ্রেস ভারত-বিভাজন মেনে নিয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। বিশেষত বামচিন্তার কোনাে কোনাে লেখক। সেসব পরবর্তী পর্যায়ে বিবেচ্য।

সূত্র : দেশবিভাগ-ফিরে দেখা – আহমদ রফিক