You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.10 | ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | আজকের এদিনে (with references) - সংগ্রামের নোটবুক

1971.09.10 | ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | আজকের এদিনে (with references)

দিল্লীতে পররাষ্ট্র সচিব
প্রবাসী সরকারের পররাষ্ট্র সচিব মাহবুবুল আলম চাষি দিল্লিস্থ বাংলাদেশ মিশন ভবনে বিদেশী টিভি সাক্ষাৎকারে বলেছেন বাংলাদেশ সরকার কোন অবস্থাতেই বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক নিয়োগ মেনে নিবে না। তিনি বলেন জাতিসংঘের সাধারন পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল পাঠাবে। তিনি বলেন স্বাধীনতা অর্জন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম চালিয়ে যাবে এবং সকল প্রকার বিপর্যয় মোকাবেলার জন্য তারা প্রস্তুত আছেন। তিনি বলেন সামরিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকে আমাদের মুক্তি আন্দোলন এখন অনেক সংহত। তিনি বলেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাক জঙ্গি শাহীর আক্রমণ যেমন নির্মম তেমনই পূর্ব পরিকল্পিত। তিনি বলেন বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পৃথিবীর অনেক দেশে সহানুভূতি লাভ করেছে এবং জাতিসংঘেও সে রকম সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন তার সরকার কেবল অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট ঘোষিত ৪ দফার আলোকেই পাকিস্তানের সাথে আলোচনায় যেতে পারে। ৪ দফার এক দফা স্বাধীনতা আরেক দফা বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের সেনা প্রত্যাহার। তিনি বলেন ভারতের পর রাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার জন্য তিনি ১০ দিন যাবত দিল্লি অবস্থান করছেন। [যুগান্তর ১১ সেপ্টেম্বর/রয়টার ক্লিপ]
১৬ সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল জাতিসংঘ অধিবেশনে যাচ্ছেন। [PAKISTAN OBSERVER 11 SEPTEMBER 1971]
[প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হলেন শ্রী ফণীভূষণ মজুমদার এমপিএ, সৈয়দ আবদুস সুলতান এমএনএ, জনাব সিরাজুল হক এমএ্নএ, ডঃ মফিজ এমএনএ, ডাঃ আজহারুল হক এমপিএ, জনাব সাহাবুদ্দিন আহমদ এমপিএ, জনাব এমএ সামাদ এমএনএ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ডঃ এআর মল্লিক, ন্যাপের সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণাকার সাবেক পাকিস্তানী কূটনীতিক জনাব এএফএম, আবুল ফতেহ ও জনাব খুররম খান পন্নি। প্রতিনিধিদলের অপর ৫ জন সদস্য হইতেছেন বর্তমানে বিদেশে অবস্থানরত বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী, জনাব এমআর সিদ্দিকী এমএনএ, অধ্যাপক রেহমান সোবহান, জনাব এসএ, করিম ও জনাব এএমএ, মুহিত।[বাংলার বাণী, যুগান্তর ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
গাজীপুর অস্ত্র তৈরীর কারখানা পরিদর্শনে নিয়াজি
লেঃ জেনারেল নিয়াজী গাজীপুর অস্ত্র তৈরীর কারখানা পরিদর্শন করে অস্ত্রের প্রথম চালান গ্রহন করেন। এ সময় চীনের কন্সাল জেনারেল চেং ইং উপস্থিত ছিলেন। গত বছর এপ্রিল মাসের ৬ তারিখে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কারখানাটি উদ্বোধন করেন। চীনের আরথিক ও কারিগরি সাহায্যে কারখানাটি তৈরি হয়। স্থানীয় ভাবে অস্র তৈরী করার জন্য কারখানার শ্রমিক কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন ইহা খুব গর্বের বিষয় যে আমরা স্থানীয় ভাবে অস্র তৈরিতে সক্ষম হয়েছি। দেশে গোলযোগ সত্ত্বেও শ্রমিকরা অস্র উৎপাদন করায় তিনি তাদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন এখানে তৈরী অস্ত্র দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার হবে। অনুষ্ঠানে চীনা কন্সাল জেনারেল বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি শ্রমিকদের কাজে পারদর্শিতা অর্জনের জন্য তাদের প্রশংসা করেন। [ইত্তেফাক/পাকিস্তান ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
চাদপুর ফরিদপুরে গভর্নর এএম মালিক

গভর্নর এ এম মালিক চাদপুর ফরিদপুরে বন্যা দুর্গত এলাকা সফর করেন। ফরিদপুরে তিনি স্থানীয় শান্তি কমিটির নেতৃবৃন্দদের সাথে নিয়ে এক বিশাল জনসমাবেশে ভাষণ দেন। সমাবেশে বিপুল সংখ্যক রাজাকার উপস্থিত ছিল। সমাবেশে তিনি বলেন দেশের সংহতি ও অখণ্ডতার প্রতি ভারতীয় হুমকির প্রেক্ষিতে জনগণকে ঐক্য ঈমান ও শৃঙ্খলা সম্পর্কে সকলকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনী দেশকে রক্ষা করেছে। সঙ্কট কাটাইয়া পাকিস্তান যাতে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে সেই দিকে লক্ষ্য রাখার জন্য সবাইকে আহবান জানান। রাজাকারদের ইসলামী আদর্শে অনুপ্রানিত হওয়ার জন্য তিনি তাদের তাগিদ দেন। [ইত্তেফাক, পাকিস্তান, সংগ্রাম, মর্নিং নিউজ, অবজারভার ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]

জাতিসংঘ পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলে আরও কয়েকজনকে নেয়ার জন্য গোলাম আজমের আহবান।
পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম আজম ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ প্রশ্ন ও বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিশালী লবিকে মোকাবেলা করার জন্য পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলে হামিদুল হক চৌধুরী, মৌলবী ফরিদ আহমদ ও বিচারপতি হামুদুর রহমান, ডঃ সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, এ.কিউ.এম. শফিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার আখতার উদ্দিন, আব্দুস সবুর ও ফজলুর কাদের চৌধুরীকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। তিনি বলেন ভারতীয় প্রতিনিধিদলে ৪২ জন সদস্য আছেন। তাদের সফল ভাবে মোকাবেলার জন্য শক্তিশালী পাকিস্তান দলের প্রয়োজন। তিনি বলেন এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রশ্নে তুমুল বিতর্ক হতে পারে তাই বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। [ইত্তেফাক, পাকিস্তান, সংগ্রাম ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]

প্রদেশে নেজাম নেতা সৈয়দ মাহমুদ মোস্তফা আল মাদানি দিবস পালন করেছে রাজনৈতিক দল গুলি। এ উপলক্ষে বায়তুল মোকাররমে মাদানি স্মৃতি কমিটি এক জনসভার আয়োজন করে। সভাতে উপ্সথিত ছিলেন জামাত প্রাদেশিক প্রধান গোলাম আজম, নেজাম সাধারন সম্পাদক মওলানা আশ্রাফ আলী, জামাতের রুহুল কুদ্দুস, এটি সাদি, মওলানা মতিন, মওকানা আজিজুল হক, মওলানা মফিজুল হক, মোঃ শামসুল হুদা, ছাত্র নেতা শাম সুল হক। বক্তারা বলেন মাদানি পাকিস্তানের আদর্শ প্রচার করতে গিয়ে ভারতীয় চরদের হাতে নিহত হয়েছেন। [সংগ্রাম ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]

সিলেট রেজিস্ট্রি কমপ্লেক্স মাঠে এক জনসভায় শান্তি ও কল্যাণ সমিতি প্রধান মৌলবি ফরিদ আহমেদ দেশের বর্তমান পরিস্থিতির উপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন কায়েদে আজম ও কায়েদে মিল্লাতের মৃত্যুর পর থেকে দেশে নেতৃত্ব সংকট চলছে। পরবর্তী সময়কালে কুশাসনের ফলেও দেশে সঙ্কীর্ণ ও ক্ষুদ্র দৃষ্টিভঙ্গি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তিনি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ইসলামী ধাঁচে রুপান্তর এবং শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণার দাবী জানান। দেশের প্রতিরক্ষার ব্যাপারে তিনি রাজাকারদের দায়িত্ব সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেন। সভায় সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের প্রশংসা করে প্রস্তাব গৃহীত হয়। পরে তিনি ভারতীয় চরদের বিরুদ্ধে বীরত্ব এর পরিচয় দেয়ায় কতক রাজাকারকে পুরস্কৃত করেন। [সংগ্রাম, পূর্বদেশ ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]

ভারত সরকার বাংলাদেশের পাঁচটি দলের সমন্বয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠনকে স্বাগত জানিয়েছে।
শ্রীলঙ্কা সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েকের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের সমস্যাকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলেও ভারত এ সমস্যাকে আন্তজার্তিক সমস্যা মনে করে।তার কারন পাকিস্তানী জান্তা এ এলাকার সম্পূর্ণ শান্তি ভঙ্গ করেছে। শ্রীলঙ্কা অবশ্য শরণার্থী সমস্যাকেই আন্তজার্তিক সমস্যা মনে করে। সোভিয়েত-ভারত চুক্তি সম্পর্কে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী বন্দরনায়েককে সরণ সিংহ বলেছেন এ চুক্তির ফলে ভারতের জোট নিরপেক্ষ অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি। আর এ চুক্তির ফলে এ এলাকার উন্নতি ও নিরাপত্তা বিধান করবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনি বলেছেন একটি রাজনৈতিক দলের গনতান্ত্রিক অধিকার দমন করতে গিয়ে এবং পাকিস্তান সরকারের ভুলের কারনে এখন সেখানে স্বাধীনতার দাবী উঠেছে। [যুগান্তর ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
কেন্দ্রীয় পুনর্বাসন অতিরিক্ত সচিব পি এন লুথার কল্যাণীতে খেলাঘর নামে একটি আবাসিক শরণার্থী এতিম শিশু বিদ্যালয় উদ্বোধন করেছেন। এতে ২০০ শিশুর লেখাপড়া ও থাকার বেবস্থা আছে। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় এরকম আরও ৯ টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। বিশিষ্ট সাহিত্যিক মৈত্রিয়ি দেবী এর উদ্যোক্তা। [যুগান্তর ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
পূর্ব পাকিস্তানে অনুপ্রবেশের দায়ে ওমেগার ৪ জন কর্মী গ্রেফতার
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেছেন তার দেশের সাহায্য সংস্থা ওমেগার ৩ জন কর্মী পূর্ব পাকিস্তানে অনুপ্রবেশের দায়ে পাকিস্তানী প্রশাসন তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরন করে। ব্রিটিশ হাই কমিশনের একজন প্রতিনিধি যশোর কারাগারে দেখা করেছেন। গ্রেফতারকৃত তিনজনই ব্রিটিশ একজন আমেরিকান। তাদের বিরুদ্ধে এখনও মামলা দায়ের করা হয়নি। হাই কমিশন তাদের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থাদির কাগজপত্র প্রাপ্তির অপেক্ষায় আছে। কমিশন মুখপাত্র বলেন তারা সকলেই সুস্থ আছেন। তাদের মধ্যে ২ জন পুরুষ ২ জন মহিলা। এর আগে যশোরে প্রবেশের সময় তাদের দুটি গাড়ীসহ ৮ জনকে পুশ ব্যাক করা হয়েছিল। আটক ৪ জনের নাম মিস ক্রিস্টিন পেরাট, মিস জয়েস ফেনীওয়েল, মিঃ বেন ক্রো ও মার্কিন মিঃ ডান ডি ইউ। [সংগ্রাম ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]

Prepared by Salah Uddin