1971.09.08 | ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | আজকের এদিনে (with references)
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতিসংঘের মহাসচিব উথান্ট বরাবর এক আবেদনে বলেছেন তিনি যেন বাংলাদেশের ব্যাপারে তার ব্যক্তিগত প্রভাব কাজে লাগান। তিনি বঙ্গবন্ধুর বিচারবন্ধ এবং মুক্তির ব্যাপারেও যেন প্রভাব খাটান। তিনি বলেন পাক জান্তা যদি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তবে তার কঠিন প্রতিশোধ গ্রহন করা হবে।
দিল্লিস্থ বাংলাদেশের কূটনীতিক কে এম সিহাব উদ্দিন দিল্লী প্রেস ক্লাবের এক ভোজসভায় বলেছেন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ কমনওয়েলথ এ যোগদানে ইচ্ছুক আর এ জন্যই বাংলাদেশ সরকার কলকাতার মিশনকে হাই কমিশনে পরিনত করে এর প্রধান এম হোসেন আলীকে ডেপুটি হাই কমিশনার পদে নিয়োগ দিয়েছে। [কালান্তর ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
জাতীয় পরিষদ সদস্য আব্দুল মালেক উকিলের নেতৃত্ব এ একটি বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল নেপাল সফরে গিয়েছেন। দলের অপর সদস্য আব্দুল মমিন তালুকদার এবং সুবোধ মিত্র। তারা বাংলাদেশে পাক সরকারের গণহত্যার বিভিন্ন চিত্র পতাকা এবং প্রচারপত্র নেপালের পর রাষ্ট্র দপ্তর ও বিভিন্ন সংগঠনের কাছে অর্পণ করেছেন। দলটি কাঠমুন্ডুতে একটি তথ্যকেন্দ্র খোলার প্রচেষ্টা নিচ্ছেন। [বিপ্লবী বাংলাদেশ ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১/যুগান্তর ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
মুক্তাঞ্চল রৌমারির অধিনায়ক লেঃ নুরুন্নবি এক বিবৃতিতে বলেছেন মুক্তাঞ্চলের যে সকল সামরিক ও আধা সামরিক জওয়ান এখনও মুক্তি যুদ্ধে যোগ দেন নি তারা যেন অবিলম্বে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর বেবস্থা গ্রহন করা হবে।
বাংলাদেশের মুক্তিকামী রাজনৈতিক দলগুলি নিয়ে ভারতের কলকাতায় একটি ফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। ফ্রন্ট জাতীয় উপদেষ্টা কমিটি বা ‘সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ’ নামে পরিচিতি লাভ করে। এর আহবায়ক হয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ। ‘সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ’-এর অন্য সদস্যরা হলেন- ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ-ভাসানী) মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (মোজাফফর) অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, কমিউনিস্ট পার্টির কমরেড মণি সিংহ, জাতীয় কংগ্রেসের মনোরঞ্জন ধর, পদাধিকারবলে মুজিবনগর সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ এবং আওয়ামী লীগের দু’জন প্রতিনিধি।
গঠনকালীন প্রথম বৈঠকে সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ সাত দফা প্রস্তাব গ্রহণ করে প্রস্তাব গুলি হল বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা ব্যতিরেক অন্য কোনো প্রকার রাজনৈতিক সমাধান গ্রহণযোগ্য হবে না। বাংলাদেশের ঔপনিবেশিক এবং সাম্রাজ্যবাদী শোষকদের বিনাশে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করে সব সম্প্রদায়ের জনগণের মধ্যে স্বাধীনতা-সংগ্রামে যোগদানের বিষয়টি কমিটি অবশ্যই নিশ্চিত করবে। কমিটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, আওয়ামী লীগ এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আস্থাবান মুক্তিকামী জনসাধারণের মধ্যে একতার প্রতিফলন ঘটানো নিশ্চিত করবে। সভায় বাংলাদেশ সরকারকে তাৎক্ষণিকভাবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ভারতসহ বিশ্বের সব দেশের প্রতি আহ্বান জানানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ ছাড়া সভায় যুদ্ধ উপকরণাদি প্রদান করে মুক্তিবাহিনী ও বাংলাদেশ সরকারকে সক্রিয় সহযোগিতা প্রদান করতে তাদের প্রতি আকুল আবেদনও জানানো হয়। [কালান্তর ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
পূর্ব পাকিস্তানে জাতিসংঘের রিলিফ প্রধান জাতিসংঘ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পল মার্ক হেনরি তার কাজের ব্যাপারে সরসরি মহাসচিব উথান্ত বরাবর রিপোর্ট পেশ করবেন। তিনি করাচীতে বলেছেন পূর্ব পাকিস্তানে রিলিফ চাহিদা বিসয়ে তার রিপোর্ট ১৩ সেপ্টেম্বর দাখিল করবেন। তিনি আজ ঢাকা থেকে এখানে এসে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছিলেন। তিনি বলেন তিনি তার সাথে করে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের একটি চিঠি নিয়ে যাচ্ছেন। চিঠিটি মহাসচিবের কাছে তিনি হস্তান্তর করবেন। [ সংগ্রাম/ইত্তেফাক ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
পাকিস্তান সরকার জানিয়েছে মুজাহিদ বাহিনী চাদপুরে এক হিন্দু জমিদার বাড়ীতে অবস্থানরত ভারতীয় চরদের উপর আক্রমন চালালে ২২ ভারতীয় চর নিহত হয়েছে। [ সংগ্রাম ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
উত্তরাঞ্চল সফরে নিয়াজি
জেনারেল নিয়াজি এই দিনে নাটোর, পাবনা, জয়পুরহাট, নওগা সফর করেন। সফর কালে তার সাথে স্থানীয় জিওসি মেজর জেনারেল নজর হোসেন শাহ ছিলেন। তিনি সেখানে বলেন ভারত তাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে তারাও প্রতিরোধ করতে সক্ষম। তিনি জনগণকে তাদের দেশপ্রেমে উজ্জীবিত থাকতে এবং রাষ্ট্র বিরোধীদের দেশ থেকে বিতারিত করার জন্য জনগনের প্রতি আহবান জানান। নাটোরে তিনি স্থানীয় রাজাকারদের সাথে এক সভা করেন। তারপর তিনি নওগার মহাদেবপুরে যান সেখানে তিনি রাজাকারদের প্রশিক্ষন দেখেন এবং রাজাকারদের সাথে কথা বলে উৎসাহ দেন। তিনি জিপে করে জয়পুরহাটের সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। পথে বিভিন্ন রাস্তা মেরামত কাজ দেখেন। সীমান্তের বিভিন্ন চৌকি পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি পাবনা যান সেখানে শান্তি কমিটির নেতাদের সাথে কথা বলেন। এর পরে তিনি বগুড়া যান সেখানে স্থানীয় সৈন্যদের সাথে মত বিনিময় করেন। [ইত্তেফাক/ সংগ্রাম ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
ভারতীয় অস্র উদ্ধার
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে পাকবাহিনী কয়েকদিনে বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালাইয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাবহৃত কিছু ভারতীয় অস্র উদ্ধার করে। কয়েক সপ্তাহ এই এলাকায় ৪ নং সেক্টরের বাহিনী পাক বাহিনীকে নাজেহাল করে আসছিল। [ইত্তেফাক/ সংগ্রাম ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
সম্ভাব্য বিমান হাইজ্যাক এড়াতে পিআইএ তাদে সকল বিমানে সশস্র প্রহরী নিযুক্ত করেছে। [ সংগ্রাম ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
জাতিসংঘে পাক প্রতিনিধি দল
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের জন্য পাক প্রতিনিধি দলের নাম ঘোষণা করা হয়। দলের সদস্যরা হচ্ছেন :
১) পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আলী (দলনেতা),
২) শাহ আজিজুর রহমান, জাতীয় লীগ (আতাউর)
৩) জুলমত আলী খান, পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট
৪) এড: এ.টি. সাদী, পাকিস্তাব দরদী সংঘ
৫) মিসেস রাজিয়া ফয়েজ, মুসলিম লীগ কনভেনশন
৬) ড: ফাতেমা সাদিক, ঢাকা বিশ্বঃ পশ্চিম পাকিস্তান
৭)আগা শাহী, সহকারী দলনেতা, জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি
৮)বিচারপতি জাকির উদ্দিন, লাহোর হাইকোর্ট পশ্চিম পাকিস্তান
৯) ড: বেগম এনায়েতউল্লাহ, পশ্চিম পাকিস্তান
১০) ব্যারিস্টার কামাল ফারুকী, করাচি, পশ্চিম পাকিস্তান
১১) এড: কে.বাবর প্রমুখ। এডভোকেট লাহোর পশ্চিম পাকিস্তান
১২) এম এ আলভী অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব
১৩) এ এইচ ভি তৈয়ব জি রাষ্ট্রদূত মরক্কো
১৪) আই এ আব্দুল রাষ্ট্রদূত যুগোস্লভিয়া
১৫) ইউসুফ জে আহমেদ ডিজি, পররাষ্ট্র, ইউএন ডেস্ক
১৬) জাহিদ সাইদ আইন উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র [ইত্তেফাক/ সংগ্রাম ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
লাহোরের জিন্দেগী সাপ্তাহিকে প্রকাশিত গোলাম আজমের সাক্ষাৎকার
গোলাম আজম পশ্চিম পাকিস্তান সফরকালে লাহোরের জিন্দেগী সাপ্তাহিকে সাক্ষাৎকার দেন তা দৈনিক সংগ্রামে ২ কিস্তিতে প্রকাশিত হয়েছে। তা সংক্ষেপে নিম্নরুপ। দেশের বর্তমান অবস্থা স্বাভাবিক। দেশে সেনাবাহিনীর শক্তি প্রয়োগ যথার্থ ছিল। বিচ্ছিন্নবাদিরা ১৯৬৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তাদের ছাত্র সংগঠনের সভায় প্রথম স্বাধীনতার কথা বলে। সামরিক আইনের বলে তাদের বিচারের সমন দেয়া হয়েছিল। পরে শেখ মুজিবের হস্তক্ষেপে তারা মামলা থেকে অব্যাহতি পায়। মুজিব ২৫ মার্চের আগে বিচ্ছিন্নতার কথা বলেন নি কিন্তু ভাসানি অহরহ বলেছে ভাসানির কিন্তু বিচার হয়নি। পূর্ব পাকিস্তানী যাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সম্পর্কে জানা ছিল না তারা পরে সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করে। পরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচন দেয়া উচিত ছিল। বহাল সদস্যদের প্রায় সকলেই ভারতে থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে যুক্ত আছে। এদের জাতীয় পরিষদে বসার কোন অধিকার নেই।
ঢাকায় আঞ্চলিক পিডিপি নেতাদের সভা
জোহরা ম্যানসনে এদিন পূর্ব-পাকিস্তান পিডিপি’র সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আজিজুল হকের সভাপতিত্বে ঢাকা আঞ্চলিক পিডিপি নেতাদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। দলের সকল শাখাকে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতির পিতার মৃত্যু বার্ষিকী পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। দলের সিনিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আলী সভায় অংশ গ্রহন করেন। সভায় মাহমুদ আলী তার দীর্ঘ ইউরোপ আমেরিকা সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন কোন দেশই ভারতের পক্ষে নাই। জাতিসঙ্ঘ প্রতিনিধিদলের দলনেতা করায় দলের পক্ষ থেকে রোববার তাকে সংবর্ধনা দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
কাশ্মীরের উধমপুরে এক জনসভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেছেন ভারতের সাম্প্রদায়িক দল গুলো দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি বলেন জনসংঘের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দাবীর আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে জনগণকে সজাগ থাকার আহবান জানিয়েছেন। [কালান্তর ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
রয়াল ক্যালকাটা গলফ ক্লাব বাংলাদেশের শরণার্থী সাহায্যে ৪৬ হাজার টাকা দান করেছে। ক্লাবের ক্যাপ্টেন বি এম খইতান আজ রাজ্যপাল ডায়াসের কাছে এ অর্থ প্রদান করেন। কলকাতার আরিস ইন্ডাস্ট্রি জ বাংলাদেশের শরণার্থী সাহায্যে পশ্চিম বঙ্গ রেডক্রসকে ১০০০০ টাকা দান করেছে। প্রতিষ্ঠানের এমডি যে সি নান গিরা পশ্চিম বঙ্গ রেডক্রস সভাপতি জেসি দে এর হাতে এ অর্থ প্রদান করেন। পশ্চিম বঙ্গের জেনারেল ইন্সুরেন্স এমপ্লয়িজ এসোসিয়েশন বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের সাহায্যে ৫৭৭৭৭ টাকা বাংলাদেশ মিশনকে দান করেছে। [কালান্তর ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রী ফখরুদ্দীন আলী আহমেদ বলেছেন শরণার্থী সমস্যা সত্ত্বেও ভারত ১৯৭২ সালে কোন খাদ্য আমদানি করবে না। [যুগান্তর ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
পররাষ্ট্র সচিব টি এন কাউল বয়রা, বনগাঁও এর কয়েকটি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন কেন্দ্রীয় পুনর্বাসন সচিব পি এন লুথরা। তিনি বনগাঁও হাসপাতালও পরিদর্শন করেছেন। কাউল আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ সরকার এখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন জাতিসংঘের আসন্ন অধিবেশনে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করা হবে। বাংলাদেশের মানুষের গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক সমাধানই কেবল শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে পারে। [যুগান্তর ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেছেন পূর্ব পাকিস্তানে ব্রিটিশ স্বেচ্ছাসেবী দল ওমেগার ৪ সদস্য পাকিস্তান সরকারের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের যশোর কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। ৪ জনের মধ্যে ৩ জন ব্রিটিশ এবং একজন আমেরিকান। তাদের ২ জন পুরুষ ২ জন মহিলা। তারা যশোরের বেনাপোলে অবৈধ অনুপ্রবেশের পর আটক হয়েছেন। মুখপাত্র বা ঢাকার ব্রিটিশ কন্সাল জেনারেল তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে পারেনি। ওমেগা সদস্যরা আটক হওয়ায় কলকাতা পাক উপ দুতাবাসের সামনে [বন্ধ] জনতা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। রজারস মুডি নামে তাদের এক সদস্য কলকাতায় বলেছেন ইউরোপ ও মার্কিন উপদুতাবাসের সামনেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হবে এবং পূর্ব পাকিস্তানে তারা আরও লোকজন প্রেরন করবেন। তিনি বলেন, ওমেগা দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে অপারেশন ওমেগার সমর্থকেরা লন্ডনে পাকিস্তান হাইকমিশনের সামনে ৯ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ করবেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পাকিস্তানি দূতাবাসের সামনেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হবে। [যুগান্তর ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সরণ সিংহ তিন দিনের সফরে আগামীকাল শ্রীলঙ্কা যাবেন। তিনি সেখানে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী শ্রিমা ভো বন্দরনায়েক কে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সহানুভুতিশীল করার একটা প্রচেষ্টা নিবেন। এ ছাড়াও তিনি সোভিয়েত ভারত চুক্তি নিয়ে দেশটির কোন সংশয় থাকলে তা দূর করার প্রচেষ্টা নিবেন। তিনি শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলের নেতাদের সাথেও বৈঠক করবেন। তিনি পাকিস্তানের সেনা পরিবহন বন্ধে শ্রীলঙ্কাকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যাবহার বন্ধে এবং পাকিস্তানী বিমানে জ্বালানী সরবরাহ বন্ধের প্রচেষ্টা নিবেন। [যুগান্তর ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
পশ্চিমবঙ্গে প্রবল বন্যায় বনগাঁ মহকুমার শরণার্থী শিবির গুলোতে ত্রান সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ওয়াই বি চ্যাবন জামসেদপুরে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম ভারত সমর্থন করে যাবে। তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে মনে করিয়ে দেন, ভারত এখন আগের থেকে বেশি শক্তিশালী এবং যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত ও সক্ষম। পশ্চিমবঙ্গ সফর শেষে কলকাতা ত্যাগকালে কলকাতার দমদম বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন শরণার্থী খরচ নির্বাহের জন্য আগামী ডিসেম্বরের আগে নতুন কোন কর বসানো হবে না। তিনি বলেন আগামী বাজেটে শরণার্থীদের জন্য ২৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন কেন্দ্র এখন বকেয়া কর আদায়ে মনোযোগ দিবে। তিনি বলেন মার্কিন পি এল ৪৮০ চুক্তির সাহায্য নেয়া বন্ধ করতে হবে। [যুগান্তর ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
ভারত সফররত যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ এবং ভারতে দেশটির সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক জন কেনেথ গলব্রেথ ৮ সেপ্টেম্বর কলকাতায় সাংবাদিকদের বলেন, পূর্ব বাংলায় পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী যে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছে, এ ব্যাপারে তাঁর কোনো সন্দেহ নেই। এই গণহত্যা সংঘটনে যারা অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে, তারাও গণহত্যাকারীর মতো সমান অপরাধে অপরাধী। তাই নিক্সন ও তাঁর সরকারও একই অপরাধে অপরাধী। তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুযায়ী বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ।
Prepared by Salah Uddin