You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: ৯ এপ্রিল সোমবার, ২৬শে চৈত্র, ১৩৭৯

রঙের রাজা বিদায় নিলেন

রঙের রাজা পিকাসো পরিণত বয়সে বিদায় নিলেন। রঙের রাজা পিকাসো রং নিয়ে সারাজীবন খেলা করেছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন। নীল, হলুদ, লাল-সবুজের চৌহদ্দি পেরিয়ে সময় স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পিকাসো শান্তির পারাবতও এঁকেছেন। তুলির আঁচড়ে শান্তির জয়গান গেয়েছেন পিকাসো।
স্পেনের মাটিতে জন্ম নিয়ে তিনি স্পেন তথা বিশ্বের মানুষকে আপন জনের মতই ভালোবেসেছেন। মানুষকে ভালোবেসে তিনি মানবতার সেবায় নিজেকে দিয়েছেন উজার করে। তাই জীবনের প্রথম পাদে আঁকা ছবি ‘গানিকায়’ ফুটে উঠেছে শোষণ অত্যাচার আর অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদের বিমুর্ত রূপ।
রংয়ের রাজা পিকাসো একটি নাম। একটি ইতিহাস। শিল্প কলার সেবায় নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে পিকাসো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন চিত্রকলার সাহায্যেও মানুষের সেবা করা যায়। মানুষের মানস জগতে ঘটানো যায় বিপ্লব।
জীবনের গভীরে ডুব দিয়ে পিকাসো যে অভিজ্ঞতার জারক রস সঞ্চয় করেছেন তাই তিনি ঢেলে দিয়েছেন ছবির ক্যানভাসে। তাই তার ছবি শুধু ছবি নয়। শুধুমাত্র শিল্পের জন্য শিল্পকলা নয়। জীবনের জন্যে শিল্পকলা। জীবন ও সমাজের গতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য একদিন বাস্তব প্রয়োজনে যে শিল্পকলার জন্ম হয়েছিল সেই শিল্পকলাকে পিকাসো মনেপ্রাণে ভালোবেসেছেন। আর তাই নিজে বিমুর্তধর্মী ছবি এঁকেও পরবর্তী নিজের ছবিকে সমালোচনা করতে এতটুকুও সংকোচ করেননি। বিমূর্তধর্মী ছবি সম্পর্কে পিকাসোর স্পষ্ট ভাষণ চমকে দিয়েছে তথাকথিত উঁচু তলার সমজদারদের।
ভ্যানগগ, মাইকেল এঞ্জেলো র্যামব্রাষ্ট যে জাদু দেখিয়ে বিশ্বকে বিমোহিত, বিমুগ্ধ করেছিলেন পিকাসোও সেই পথ অনুসরণ করে রঙের জাদু দেখিয়ে বিদায় নিলেন। পিকাসোর মৃত্যুতে কবিগুরুর ভাষাতেই আমরা বলবো, এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ, মরণে তাই তুমি করে গেলে দান। পিকাসো এসে ছিলেন। বিদায় নিলেন। যাবার সময় রেখে গেছেন শান্তি পারাবত আর তুলির অসংখ্য স্বাক্ষর।

গণতান্ত্রিক অঙ্গনে নতুন ইতিহাস

গত পরশু স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন যে, বাংলাদেশের সংসদ বিশ্বের স্বীকৃত সংসদীয় রীতি-নীতি এবং ঐতিহ্য গভীরভাবে মেনে চলতে সংকল্পবদ্ধ। গণতন্ত্রের ইতিহাসে বাংলাদেশের সংসদ এমন একটি সুমহান ঐতিহ্য স্থাপন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যা বিশ্বের অন্যান্য সংসদও মর্যাদার সঙ্গে হাজার অনুসরণ করবে বলে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে উল্লেখ করেন। বিরোধীদলীয় প্রবীণ সংসদ সদস্য জনাব আতাউর রহমান খান আশা প্রকাশ করে বলেছেন যে, বাংলাদেশের সংসদ শুধু বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশের সংসদে স্বীকৃত ঐতিহ্য ও নীতিই মেনে চলবে না বরং নতুন ঐতিহ্য স্থাপনের মাধ্যমে একটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। নব-নিযুক্ত স্পিকার জনাব মুহাম্মদউল্লাহ বলেছেন যে, তিনি দলীয় সংসদ সদস্য হলেও স্পিকার হিসেবে নির্দলীয় ভূমিকা পালন করে যাবেন। সর্বশক্তি দিয়ে সংসদীয় মর্যাদা ও ঐতিহ্য অক্ষুন্ন রাখার কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন।
সংসদীয় গণতন্ত্রের একটি সুমহান ইতিহাস রয়েছে। এই ইতিহাসের পথ বেয়েই বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি রচিত হবে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশে সংসদীয় ইতিহাসে এমন একটি ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে চায়, যে ঐতিহ্য থেকে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র থেকে শিক্ষা নিতে পারে। গণতান্ত্রিক অঙ্গনে বাংলাদেশ যে নবতর ইতিহাস সৃষ্টি করতে চায় সেজন্য প্রতিটি সংসদ সদস্যকে বিভিন্ন নীতিমালা গভীরভাবে মান্য করে চলতে হবে। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব পোষণ না করলে এবং পরমত-সহিষ্ণুতার পরিচয় না দিতে পারলে সংসদীয় গণতন্ত্রের ভরাডুবি হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমরা আশা করি, সংসদের প্রতিটি সদস্যই সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতিনীতি মর্যাদার সঙ্গে প্রতিপালন করবেন। সংসদে সব দলেরই সমান অধিকার রয়েছে। এই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যদি কোনো অগণতান্ত্রিক পথ বেছে নেয়া হয়, তাহলে গণতান্ত্রিক আদর্শ খর্ব হতে বাধ্য। একদল অপর দলের প্রতি এবং দল-মত-নির্বিশেষে সংসদের সবাইকে সংবিধানের আলোকে ঐতিহ্য সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ নবজাত বাংলাদেশের প্রতি আজ সমগ্র বিশ্ব তাকিয়ে আছে। বাংলাদেশের সংসদের তাই সংখ্যালঘু সংসদের অধিকার ও সুযোগ সুবিধা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অধ্যক্ষ ও উপ-অধ্যমকে পক্ষপাতহীন আচরণ করা একান্ত আবশ্যক। সংসদ অধ্যক্ষ অবশ্য অধিবেশনের শুরুতেই সুনির্দিষ্টভাবে আশ্বাসবাণী উচ্চারণ করেছেন যে, সকল পরিস্থিতিতে সকল সদস্যকে তিনি সমান অধিকার ও সুবিধা সংরক্ষণের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন। কাজেই আমরা আশা করতে পারি যে, জাতীয় সংসদে অধিকারের প্রশ্নে কোনো রকম অপ্রীতিকর অবস্থার উদ্ভব হবে না। একথা সত্য যে, বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এক নবতর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে সংসদ সদস্যদের সর্বতোরকম সহযোগিতা চাই। পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহযোগিতা ছাড়া সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস রচিত হতে পারে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। তাই বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের বিকাশ একান্ত কাম্য। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সংসদ সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে ভবিষ্যতে এক গৌরবময় ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন সেই আশা অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। এবং গণতান্ত্রিক অঙ্গনে সৃষ্টি হবে এক নতুন ইতিহাস।

ফ্রি-ষ্টাইল প্যাকেজিং

বর্তমানে খোলাবাজারে এবং পথের ধারে ধারে যে সমস্ত খাদ্য দ্রব্য বিক্রি হচ্ছে তার পারিপার্শ্বিকতা দেখলে যে কোন সাধারণ স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তি শিউরে উঠবার কথা। তবু পিপাসার্ত ও ক্ষুধার্ত জনসাধারণ স্বাস্থ্যবিধি কে উপেক্ষা করে অল্প পয়সার বিনিময়ে ক্ষুগ্নিবৃত্তি করে থাকে ঐসব ফেরিওয়ালার কাছ থেকে। এ ছাড়াও রয়েছে অন্য আরেক উৎপাত। আর তা হল অসাধু ব্যবসায়ীদের অননুমোদিত প্যাকেট ও বোতলজাত খাদ্য বিক্রি।
গতকাল বাংলার বাণীতে ‘ফ্রি ষ্টাইল প্যাকেজিং এবং তারপর’ শীর্ষক সচিত্র সংবাদে বলা হয়েছে, ‘স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সরকারি অনুমোদন ছাড়াই ব্যাপকহারে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেট ও বোতলকৃত খাদ্য অবাধে বাজারে ছাড়া ও বিক্রি হচ্ছে। এটা রোধ করার কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’
খবরে আরও বলা হয় যে এর দ্বারা শিশু তরুণ ও শহরের নাগরিকগণ নানা প্রকার ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে যা কালে সমাজদেহে পঙ্গুত্ব ও স্থবিরতার অভিশাপ বয়ে আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞগণের ধারণা।
এই শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ীরা জেনে-শুনে ও বুঝে সচেতনভাবে স্বাস্থ্য-নীতি বিগর্হিত কাজটি করে যাচ্ছে। দেশের জনসাধারণের স্বাস্থ্যের বিনিময়ে টাকা লুটছে দু’হাতে। পুষ্টিহীন খাদ্য বোতলে ভরে মহামারীর আকারে পান্ডুর, আমাশয়, টেপওয়ার্ম তথা স্নায়ুবিক রোগের বীজ ছড়াচ্ছে।
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস মহা সারম্বের উদযাপিত হল। স্বাস্থ্য সম্বন্ধে বহু তথ্য, বহুল প্রচার ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু জাতীয় স্বাস্থ্যের এমন মারাত্মক পরিপন্থী কাজ গুলো ও ব্যবসাগুলো বন্ধ করার কোন কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে বলা হয়নি। ‘স্বাস্থ্য জন্ম নেয় গৃহে’ এই কথাটাই ছিল এবারের মূল প্রচার।
স্বাস্থ্য সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে সচেতন হওয়ার মধ্যেই জাতীয় স্বাস্থ্য যে নির্ভরশীল এতে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বও কম নয়। অননুমোদিত ‘ফ্রি ষ্টাইল প্যাকেজিং’ এর মত ন্যাক্কারজনক পন্থা অবলম্বন করে যারা দেশের সার্বিক স্বাস্থ্যবিধিকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে তাদের সমুচিত শাস্তি হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
আমরা যতদূর জানি স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে এ ধরনের খাদ্যদ্রব্য অবাধে বিক্রি যেন না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় বিধি বিধান ও ব্যবস্থা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মচারীদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এই ধরনের অননুমোদিত অস্বাস্থ্যকর খাদ্য দ্রব্য খোলাবাজারে বিক্রি হয় কি করে সেটাই আমাদের প্রশ্ন।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!