প্রাদেশিক নির্বাচন ও দলীয় সম্পর্কের জের
ভারতবর্ষ নামক এক প্রাচীন সভ্যতার ভূখণ্ডে বহুভাষী ও বহু জাতিসত্তার, এমনকি বহুধর্মে বিশ্বাসী জনতার উপস্থিতিতে সেকুলার আদর্শের রাজনীতি যে অসম্ভবের সাধনা ইংরেজ শাসিত ‘ব্রিটিশ ভারত’ তেমন প্রমাণ ভালােভাবেই রেখেছে। তাই পূর্বে কথিত সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষে অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষবৃক্ষে জল ঢালতে কসুর করেনি যেমন শাসক, তেমনি দুই প্রধান। সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক সংগঠন ও তার কুশীলবগণ। তবে শাসকের দায় ছিল অপেক্ষাকৃত বেশি। কারণ তারা পরিস্থিতি দূষিত করেছেন। তাই বলা যায় সংঘাত বা বিরূপতা, প্রতিযোগিতা বা একা তখৃতে আসীন হওয়া একমাত্র সত্য ছিল না। রাজনৈতিক সহাবস্থানের মানসিকতাও সে ক্ষেত্রে প্রকাশ পেয়েছে। তবে সঠিক সময়ে সে আহ্বানে সাড়া দিতে না পারাটা ছিল দুর্ভাগ্যের অর্থাৎ সুফল অর্জনে ব্যর্থতার কারণ এবং তা পালাক্রমে এদিক-ওদিক থেকে। এর মধ্যে যেকোনাে পক্ষ থেকে হােক সদিচ্ছার ছিল বড় প্রয়ােজন। শাসক ইংরেজের ভেদনীতির মধ্যেও তেমন সম্ভাবনা একাধিকবার উকি দিয়ে গেছে কিন্তু অপরপক্ষ যুক্তি ও বাস্তবতাকে দুহাত তুলে সর্বদা কাছে টেনে নিতে পারেনি। সন্দেহ নেই ১৯৩৫ সালের সাম্প্রদায়িক রােয়েদাদ ছিল হিন্দুমুসলমান রাজনৈতিক সম্প্রীতির ওপর মস্ত বড় খাড়ার আঘাত। তবু ১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনের ফল তার বৈচিত্র্য নিয়ে সম্প্রীতি বা সহাবস্থানের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। কিন্তু ঘটনা তা কাজে লাগাতে দেয়নি। এ সাতকাহনে আপাতত তিন কারিগর হচ্ছেন হক, জিন্না, নেহরু। আছেন গান্ধিও। এদের হাতের টানে রাজনীতির রথ কখনাে সামনে এগিয়েছে বা পিছু হটেছে। যে হাতের টান আসলে রাজনৈতিক কূটনীতি ও রাজনৈতিক দাবার চালের চাতুর্য । তাতেই ঠিক হয়ে যায় হার-জিত, অগ্রপশ্চাৎ যাত্রা। ১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলমানপ্রধান গুরুত্বপূর্ণ দুই প্রদেশ পাঞ্জাব ও বঙ্গদেশে মুসলিম লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। বাংলায় তখনাে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি স্বতন্ত্র নির্বাচন সত্ত্বেও মাটির গভীরে শিকড় চালাতে পারেনি । জিন্নার আহ্বান বঙ্গীয় মুসলমান-মানসে তখনাে মুগ্ধতা তৈরির মতাে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেনি। বলতে গেলে সবকিছু মিলে ত্রিশঙ্কু অবস্থা। স্বতন্ত্র আসনে জয়ীর সংখ্যা ছিল এককভাবে সবচেয়ে বেশি। পরে অবশ্য তাদের কেউ লীগে কেউ হক সাহেবের প্রজাপার্টিতে যােগ দিয়েছে । কিন্তু তাতে অবস্থার হেরফের হয়নি।
এ অবস্থায় বঙ্গদেশে হিন্দু-মুসলমান সমন্বয়ে অসাম্প্রদায়িক যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠনের একটা বড় সুযােগ তৈরি হয় এবং বঙ্গের সংসদীয় রাজনীতির সম্প্রদায়নির্ভর ধারাবদলের সুযােগ কংগ্রেস দলের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য হাতছাড়া হয়ে যায়। ফজলুল হকের প্রজাপার্টি তৃণমূল স্তরের মুসলমান ও নমঃশূদ্র হিন্দু সমর্থনে একটি অসাম্প্রদায়িক দল। নীতিগত দিক থেকে মুসলিম লীগের চেয়ে কংগ্রেসের কাছাকাছি। স্বভাবতই ফজলুল হক চেয়েছেন কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথভাবে মন্ত্রিসভা গঠন করতে। বঙ্গীয় কংগ্রেসের বিভিন্ন গ্রুপেরও ইচ্ছা ছিল প্রজাপার্টির সঙ্গে মিলে বঙ্গে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠন করা । কিন্তু কংগ্রেস হাইকমান্ডের বিশেষ ভাবে কংগ্রেস সভাপতি নেহরুর আপত্তির কারণে তা সম্ভব হয়নি। নেহরু স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে যুক্তফ্রন্ট সম্ভব নয়। হুমায়ুন কবিরের বক্তব্যও এদিক থেঞ্চেভিন্ন নয়। তার ভাষায় ফজলুল হকের অব্যাহত আহ্বানে কংগ্রেস সাড়া দেয়নি বলে বঙ্গে একটি অসাম্প্রদায়িক মন্ত্রিসভা গঠনের সব সুযােগ নষ্ট হয়ে যায়। ফজলুল হককে ঠেলে দেয়া হয় মুসলিম লীগের দিকে । কংগ্রেস নেতারা জিন্নার নির্বাচনপূর্ব বাংলা অভিযানের কথাটা একবারও ভেবে দেখেননি। তাদের অদূরদর্শী পদক্ষেপ শুধু ফজলুল হককে পথচ্যুত করতে সাহায্য করেনি, বাংলায় সেকুলার রাজনীতির সম্ভাবনা সমূলে নষ্ট করেছে। চিত্তরঞ্জনের ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ নস্যাৎ করার পর কংগ্রেসের এই আঘাত বঙ্গে মুসলিম লীগকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করেছে, দেশবিভাগের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। রাজনীতিকদের ব্যক্তিস্বার্থ এতই প্রবল যে সেখানে সম্প্রদায় প্রশ্নও স্থান পায় না। যেমন প্রজাপার্টির দিক থেকে কংগ্রেসের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পর নলিনীরঞ্জন সরকারের দৌত্যে মুসলিম লীগের সঙ্গে প্রজাপার্টির সমঝােতা এবং শেষ পর্যন্ত বঙ্গে ফজলুল হকের নেতৃত্বে লীগ-প্রজাপার্টির যৌথ মন্ত্রিসভা গঠন। বিস্ময়ের হলেও সত্য যে নলিনীরঞ্জন হলেন ওই মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী যে জন্য তিনি কংগ্রেস দল থেকে বহিষ্কৃত।
আর নানাভাবে বিতর্কিত নলিনীরঞ্জন যেমন ফজলুল হকের জন্য, তেমনি পরােক্ষে দেশবিভাগের জন্যেও এক অশুভ নিয়তি । যেমন পরবর্তীসময়ে কেন্দ্রে ভি.পি. মেনন। ক্ষমতার প্রতি উচ্চাকাঙ্ক্ষা আবুল কাশেম ফজলুল হকের বরাবরই ছিল, যা রাজনীতিক মাত্রেরই থাকে, কম আর বেশি। বিরল সংখ্যক এর ব্যতিক্রম। আর এ ক্ষমতার জন্য তিন দিকে সর্বনাশের সূচনা। যেমন হক সাহেবের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, তেমনি প্রজাপার্টির সর্বনাশ, সর্বোপরি বঙ্গে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির দ্রুত বর্ধন যা দেশবিভাগের সম্ভাবনা তৈরি করে। ক্ষমতা এমনই বিষয় এবং তার টান এমনই অন্ধতা তৈরি করতে পারে যে প্রজাপার্টির স্থপতি একবারও ভেবে দেখেননি, নবাব-নাইট-খাজা মুৎসুদ্দি ও ভূস্বামীপ্রধান মুসলিম লীগ দলের সাহায্যে ক্ষমতার আসনে বসে প্রজাবন্ধু ফজলুল হক তার ভূমিপুত্রদের জন্য প্রতিশ্রুত সুযােগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে পারবেন কি না। কংগ্রেসেও ভূস্বামীর উপস্থিতি রয়েছে, তবে সেখানে মতাদর্শনির্ভর শিক্ষিত বুদ্ধিজীবির সংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশি, বিশেষ করে বঙ্গে। কাজেই কৃষক প্রজাপার্টির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এমনকি তাদের আদর্শগত কর্মসূচি, যেমন বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথা বিলােপ, ভূমি সংস্কার, কাঁচা পাটের সর্বনিম মূল্য নির্ধারণ ইত্যাদি কৃষিবান্ধ কর্মসূচির মৃত্যু ঘটল- এমন কথাই বলতে হয়। এ মন্ত্রিসভার প্রতি তাই দৃঢ়সমর্থন অবাঙালি ইস্পাহানি, আদমজী প্রমুখ পুঁজিপতি ও ভূস্বামীর এমনকি বেনিয়া বিড়লাদেরও, যাদের সঙ্গে নলিনীরঞ্জনের সম্পর্ক তখনাে অটুট, নেপথ্যে কংগ্রেসপ্রধান এম কে গান্ধি। এমনকি এ যুক্তবন্ধনে খুশি ইংরেজ শাসকও। কারণ মুসলিম লীগ তাদের স্বার্থ, স্থানীয় ইউরােপীয় স্বার্থ নিশ্চিত করবে।
কিন্তু এসবের ভারবাহী হবেন প্রজাবন্ধু ফজলুল হক। তবু মানতেই হয় মূলত হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি তথা অসাম্প্রদায়িকতার বিবেচনা থেকেই মুসলিম নিম্নবর্গীয়দের স্বার্থরক্ষা মাথায় রেখে ফজলুল হক কংগ্রেসের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝােতার চেষ্টা চালান। বিশেষ করে বসু পরিবারের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে। এক্ষেত্রে একটি রাজনৈতিক চিন্তার সাদৃশ্য লক্ষ্য করার মতাে যে, হক যেমন বঙ্গীয় রাজনীতিতে অবাঙালি প্রাধান্যের বিরােধী তেমনি ছিল বসু পরিবার, বিশেষ করে সুভাষচন্দ্র। এ দ্বন্দ্বই কিন্তু উভয়ের জন্য রাজনীতিক্ষেত্রে কাল হয়ে দাঁড়ায়। একদিকে ইস্পাহানি, আদমজী বিশেষ করে ইস্পাহানি যার সঙ্গে জিন্নার গভীর ঘনিষ্ঠতা। অন্যদিকে জি. ডি. বিড়লা যারা বঙ্গে বিশেষত রাজধানী কলকাতায় মাড়ােয়ারি স্বার্থরক্ষা ও বিস্তারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, আবার যার ও যাদের সঙ্গে কংগ্রেসের মূল ব্যক্তি গান্ধির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। গান্ধি-রাজনীতির সঙ্গে বিড়লাদের গূঢ় সম্পর্ক ইতিহাসের সত্য হয়ে আছে। আর এ কথাও সত্য যে, মূলত মাড়ােয়ারি অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণে সুভাষ বিড়লাবিরােধী আর গান্ধি সুভাষ-বিরােধী যেমন রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতায় তেমনি মাড়ােয়ারি তথা বিড়লাদের মতাে বেনিয়াদের স্বার্থরক্ষার টানে। এ দ্বন্দ্বের অবশেষ পরিণতি কংগ্রেস থেকে সুভাষের বহিষ্কার এবং তার কংগ্রেস-রাজনীতি তথা রাজনৈতিক জীবনের ইতি । ঠিক যেমন লীগ-প্রধান জিন্নার কূটচালে পরবর্তী সময়ে ফজলুল হকের প্রজা-রাজনীতির, এমনকি সাময়িক হলেও সেই চল্লিশের শেষে ক্রান্তিক্ষণের রাজনীতির অবসান । তাই দেশবিভাগের কুটিল-জটিল রাজনীতির অন্ধকার সময়ে ফজলুল হক অপাঙক্তেয়, রাজনৈতিক প্রভাববিচ্যুত।
দুই বাংলাপন্থী অসাম্প্রদায়িক ভিন্নধারার রাজনীতিকের মধ্যে কী আশ্চর্য মিল! আরাে আশ্চর্য যে, বাংলার ক্ষেত্রে নেহরুর ভূমিকাও বিস্ময়করভাবে বাংলাবিরােধী। এবং তা এ অর্থে যে অন্যত্র ভিন্নমতের হলেও জওহরলাল বঙ্গে কংগ্রেস-প্রজাপার্টি কোয়ালিশনের বিরােধী। এ প্রসঙ্গে অন্যতম নকশাল নেতা সুনীতিকুমার ঘােষ তার ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য রাজ’ গ্রন্থে ‘গান্ধী-বিড়লা-ব্রিটিশ রাজ’-এর গভীর নৈকট্যের কথা এবং জওহরলাল নেহরুর সুভাষ-বিরােধিতা ও কংগ্রেস-প্রজাপার্টির কোয়ালিশন-বিরােধিতার কথা উল্লেখ করেছেন। নেহরুর ওই ভূমিকার বিরুদ্ধে সুভাষু স্পষ্ট করেই আপন অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন এই বলে যে, বঙ্গদেশে সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরােধে কংগ্রেসপ্রজাপার্টি যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠন খুবই জরুরি ও দরকারি। ক্ষুব্ধচিত্তে তিনি তার চিঠিতে নেহরুকে এমন কথাও লিখেন, দেশে পূর্ণ স্বরাজের সংগ্রাম তাে এখন। বন্ধ। যদি তা শুরু করতে চান এবং দেশের অন্যত্র কংগ্রেস মন্ত্রিত্ব গ্রহণে আগ্রহী হয় তাহলে আমার বলার কিছু নেই। ব্রিটিশবিরােধী সংগ্রাম শুরু করলে বঙ্গে যুক্তমন্ত্রিসভার কথা আর উঠবে না। এ প্রশ্নের কোনাে জবাব মেলেনি নেহরুর কাছ থেকে। দেশবিভাগের তাৎক্ষণিক ও সাময়িক উত্তেজনা থিতিয়ে আসার পর বঙ্গীয় রাজনীতি (বেঙ্গল পলিটিক্স) নিয়ে অনেক গবেষণা, অনেক লেখালেখি হয়েছে, যেমন হয়েছে ১৯৪৭-এর দেশবিভাগ ও বঙ্গবিভাগ নিয়ে। এ ইতিহাস রচনা ও ঘটনার বিচার-বিশ্লেষণ দেখা গেছে প্রধানত পশ্চিমবঙ্গে; পূর্ববঙ্গে এবং বাংলাদেশে তা অপেক্ষাকৃত কম। এর অর্থ বােঝা কঠিন। বাঙালি মুসলমান পাকিস্তান চাইলেও সাতচল্লিশে বঙ্গবিভাগ চায়নি। উল্লিখিত অনীহা আমাদের ইতিহাস চেতনার পরিচয় দেয় না।
ইতিহাস-ঐতিহ্য জাতি হিসেবে নিজেকে বুঝতে-চিনতে ও ভবিষ্যৎ দেখতে সাহায্য করে- তা সে ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভুল-শুদ্ধ, কাক্ষিত-অনাকাক্ষিত, সঠিক-বেঠিক যেমন ঘটনাই থাকুক না কেন। অনেক সময় ইতিহাস-চর্চা ভুল পদক্ষেপ শুদ্ধ করতেও সাহায্য করে থাকে। যাই হােক পূর্বোক্ত লীগ-প্রজাপার্টি সমঝােতা নিয়ে কৃষক প্রজাপার্টি (কে.পি.পি.) নেতা আবুল মনসুর আহমদও আরাে কয়েকজন সহযােগীর মতাে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন এই বলে যে, কংগ্রেস-প্রজাপার্টির সমঝােতা বঙ্গীয় রাজনীতিকে সম্পূর্ণ ভিন্নধারায় নিয়ে যেতে পারত। আমাদেরও তাই ধারণা। যে কারণে ১৯৩৭-এর নির্বাচন ও রাজনৈতিক সমঝােতা নিয়ে এত কথা বলা। ঘটনার এই বাঁকফেরা বিন্দু থেকে বঙ্গে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চোরাস্রোত জোরালাে হয়ে ওঠে। এবং ইতিহাস পাঠক জানেন, বঙ্গীয় রাজনীতির স্বাতন্ত্র্যবাদিতাই পরে দেশবিভাগের নিয়ন্ত্রক শক্তি হয়ে উঠেছিল। এসব ঘটনার পেছনে ছিল অবাঙালি রাজনীতি ও তার কেন্দ্রীয় শক্তির বঙ্গ-বিরােধিতা- যেমন কংগ্রেসে তেমনি মুসলিম লীগে। যেমন হকের বিরুদ্ধে তেমনি চিত্তরঞ্জন ও সুভাষের বিরুদ্ধে। ইতিহাসের কী অমােঘ গতি, কী তার অদ্ভুত চরিত্র! আশ্চর্য, ইতিহাসের ছােট ছােট ঘটন্য, বা আপাত গুরুত্বহীন কুশীলবগণের ভূমিকা কী সব অদ্ভুত কার্যকারণ পরম্পরায় ভবিতব্য হয়ে উঠেছিল যা জাতীয় জীবনে, রাষ্ট্রীয় জীবনে অবিশ্বাস্য গুরুত্ব বহন করেছে। এ সময়ের রাজনীতিতে কত যে পরস্পরবিরােধী স্রের্ত, যা শেষ পর্যন্ত দেশবিভাগকে অনিবার্য করে তুলেছে। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে ইস্পাহানি, হারুন, আদমজীদের মতাে বিড়লা-গােয়েঙ্কারাও দেশবিভাগের পক্ষে। এবং তা উভয় পক্ষের পুঁজিবাদী স্বার্থে । সে ক্ষেত্রে লীগ কংগ্রেস বাইরে যা-ই বলুক না কেন এ কথা সত্য যে, কেন্দ্রীয় লীগ-কংগ্রেস দুই-ই ছিল বঙ্গ-বিরােধী। বহু ঘটনা তার প্রমাণ। বঙ্গে কোয়ালিশন নিষিদ্ধ হলে সিন্ধু ও আসামের ক্ষেত্রে তা প্রযােজ্য হবে না কেন? এমন সব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন ওঠে তৎকালীন রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ দাবার খুঁটি ফজলুল হকের প্রাসঙ্গিক বিশ্বাস ও ভাবনা কেমন ছিল, যে ফজলুল হক। শেষ পর্যন্ত দ্বিজাতিতত্ত্বের সাময়িক শিকার।
সূত্র : দেশবিভাগ-ফিরে দেখা – আহমদ রফিক