সহাবস্থানের ভিত নষ্ট করে স্থানীয় রাজনীতি ও শাসকনীতি
ইতিহাস সঠিক তথ্যই দেয় যে মহাবিদ্রোহে যদিও হিন্দু-মুসলমান সিপাহি সেনাই নয়, কোথাও কোথাও নিমবর্গীয় সাধারণ মানুষ এবং দুই ধর্মীয় রাজন্যবর্গের অনেকে ইংরেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তবু বাহাদুর। শাহকে স্মার্ট মেনে নেয়া ছাড়াও মুসলমান প্রাধান্য সেখানে ছিল। পাঞ্জাব ও বাংলা ব্যতিক্রম, বিশেষ করে ইংরেজি শিক্ষিত বঙ্গীয় এলিট শ্রেণী ও পাঞ্জাবি শিখ। এরা বিদ্রোহের পক্ষে ছিলনা। ফলে উত্তরকালে ইংরেজ শাসকদের মুসলমান-বিরূপতা ও সন্দেহ যথেষ্টই ছিল। কিন্তু শিক্ষিত শ্রেণীর উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সেই সঙ্গে মধ্যশ্রেণীর স্বাধিকার চেতনা শাসকদের আবার নতুন করে ভাবায় যে এখন সময় এসেছে অন্যদিকে নজর ফিরাবার । বিশেষ করে বঙ্গীয় নবজাগরণের প্রভাব এবং পাঞ্জাবের একাংশে স্বাধিকার চেতনা ও ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী চেতনার স্বাদেশিকতা রুখতে পরবর্তী শাসকদের চোখে দাবার ছকে মুসলমান যুঁটিগুলােকে প্রাধান্য দেয়ার প্রয়ােজন দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ শাসনতান্ত্রিক ঘটনা, নাম মর্লি-মিন্টো সংস্কার (১৯০৯)। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক কাউন্সিলগুলােতে ধর্মীয় ভিত্তিতে পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা ও মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত আসন। শেষােক্ত বিষয়টিতে কিছু যুক্তি থাকতে পারে কিন্তু স্বতন্ত্র নির্বাচন ব্যবস্থার উদ্দেশ্য নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক অর্থাৎ হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়কে বিচ্ছিন্ন করে দুই ভিন্ন পথ ধরে চলতে বাধ্য করা। সেই পুরনাে নীতি- ‘ভাগ কর এবং শাসন কর । এভাবেই বিচ্ছিন্নতার পথে ছক তৈরি হয়ে যায়। যুক্ত নির্বাচন পদ্ধতিতে যােগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করার সুযােগ (তা যে সম্প্রদায়েরই হােক) আর থাকেনি। রাজনীতির ক্ষেত্রে একসঙ্গে চলার ফলে যে সমপ্রদায়গত সৌহার্দ্য তৈরি হতে পারত তার কফিনে পেরেক ঠোকা হলাে। ইতিহাসবিদগণের এ জাতীয় সমালােচনা কিছুটা অনিচ্ছায় যেন মেনে নেন হডসন এবং দু’একজন বিদেশি ইতিহাসবিদ। অবশ্যই গােটা বিষয়টা গভীরভাবে পরিকল্পিত এবং সে কারণেই লেডি মিন্টো ডায়েরিতে তার স্বামীর চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়ে লিখেছেন যে, মুসলমানদের তুলে ধরতে হবে যাতে তারা ‘রাজ-বিরােধীদের সঙ্গে যােগ না দেয়’ (উদ্ধৃতি হডসনেরই)। এতেও বােঝা যায় ব্রিটিশ রাজপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্য কী ছিল।
তবু লেখক হডসন স্বতন্ত্র নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষে সমর্থন জুগিয়েছেন নানা যুক্তির অজুহাতে। আসলে অনুন্নত মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য। ব্যাপক শিক্ষার ব্যবস্থা এবং কিছু আসন সংরক্ষণই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু শাসক সে। পথে হাঁটেনি। হেঁটেছে ‘রাজ’স্বার্থের পথ ধরে। কিছু সাম্রাজ্যবাদী ভাবনার লেখক, ইতিহাসবিদ নানা যুক্তি ও অজুহাত তৈরি করেছেন সাম্রাজ্যবাদী শাসনের পক্ষে যেন তারা ধােয়া তুলসীপাতা। তা না হলে হডসন লিখতে পারতেন না যে, ব্রিটিশ হিন্দু-মুসলমান প্রতিযােগিতাকে হয়তাে নিজ সুবিধায় ব্যবহার করে থাকতে পারে, কিন্তু তারা তাে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বের জন্মদাতা নয়। তারা ভারতীয় ইতিহাসের ইতিকথা বা আখ্যায়িকা (‘অ্যানালস’) তৈরি করেনি, কিংবা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গ সংঘটিত করেনি। কিন্তু ঘটনা অন্য কথাই বলে। ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারের পর ইংরেজ শাসনের পক্ষে তাদের সিভিলিয়ান বা লেখকরা রাজপুত, মারাঠা ও শিখদের নিয়ে নানা কাহিনী। রচনার মাধ্যমে ঠিকই মুসলমান-বিরােধী পরোক্ষ প্রচারণা চালিয়েছেন। যা উক্ত সম্প্রদায়ের শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যে মুসলমান-বিরােধী মনােভাব বাড়াতে সাহায্য করেছে। আর দাঙ্গা? ধর্ম বা জাতি বা সম্প্রদায়গত বিরােধ নিয়ে দাঙ্গা কি পাশ্চাত্যে হয়নি? জাতিগত যুদ্ধই তাে তারা শত শত বছর ধরে চালিয়েছে। তবে একথাও ঠিক যে, একমাত্র ব্রিটিশরাজ হিন্দু-মুসলমান বিভেদের জন্য পুরােপুরি দায়ী নয় । ঐতিহাসিক, অনৈতিহাসিক নানা কারণ হিন্দু-মুসলমানের। মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। তাতে দু’পক্ষই দায়ী, কম আর বেশি। শাসক ইংরেজ নানা সূত্রে সে বিভেদের সুযােগ নিয়েছে, কখনাে সংঘাত উসকে দিয়েছে। বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে অবহেলা করেছে। এ সত্যটা রবীন্দ্রনাথের লেখায়ও খুঁজে পাওয়া যায় । তবু কথা থাকে, এত সব সত্ত্বেও হিন্দু-মুসলমান। শত শত বছর পাশাপাশি শান্তিতে বসবাস করেছে। বিরােধ তাে পরিবারেও ঘটে। ভাইয়ে ভাইয়ে ঘটে- এটাও বাস্তবতা।
এই যে রাজনৈতিক বিভাজনের ধারা যা ভারত-শাসক ও ব্রিটিশরাজের প্রণীত, একের পর এক সংস্কারনীতিতে। ওই বিভাজনের ধারাই বরাবর বহাল থাকে। যেমন মর্লি-মিন্টোর পর মন্টেগুচেমসফোর্ড সংস্কার (১৯১৯) ওই একই নীতিতে তৈরি। উদ্দেশ্য দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ-বিভাজন যতটা সম্ভব বাড়িয়ে তােলা। এরপর সাইমন কমিশন আসে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে (১৯২৯)। যেমনটা আগে বলা হয়েছে, বিভাজনের জন্য ব্রিটিশরাজ যেমন দায়ী তেমনি দায়ী কংগ্রেস রাজনীতির ভুলভ্রান্তি, সেই সঙ্গে মুসলিম লীগপ্রধান জিন্নার অহমূবােধ ও একাধিপত্যের উচ্চাকাঙ্ক্ষাও দায়ী। তবে শেষ পর্বে (১৯৪৬) এ। বিষয়ে মােহাম্মদ আলী জিন্নার দায়টা অপেক্ষাকৃত বেশি। ১৯০৯ থেকে ১৯১৯ হয়ে ১৯২৯ অবধি সময়- পরিসর বিভাজন-রাজনীতির। নানা ঘটনায় পরিপূর্ণ । এ ক্ষেত্রে সমঝােতার চেয়ে দ্বন্দ্বই বেশি। সেই বহু কথিত রাজনৈতিক ত্রিভুজ যার শীর্ষ বিন্দুতে আসীন রাজ-প্রশাসন সমতলে দুই কোণে দুই সম্প্রদায়ের অবস্থান। আসলে সম্প্রদায় নয়, লীগ-কংগ্রেস দুই সংগঠন দুই কোণে । হিন্দুপ্রধান কংগ্রেস ভূস্বামী, উচ্চ ও মধ্যবিত্তের স্বার্থভিত্তিক সংগঠন যেখানে মুসলমান নেতার সংখ্যা কম নয়। মাওলানা আজাদ, হাকিম আজমল খান, ডা, আনসারী, ডা, সফিউদ্দিন কিচলু, আসফ আলী প্রমুখ। তবু এরা কংগ্রেসের রাজনৈতিক চরিত্রবদল ঘটাতে পারেন নি, বিশেষত সমপ্রদায়গত প্রশ্নে । অন্যদিকে জিন্নার নেতৃত্বে মুসলমান প্রতিনিধিত্বের সংগঠন মুসলিম লীগ যার দাবি লীগই একমাত্র মুসলমান জনগােষ্ঠীর প্রতিনিধি যা ১৯৪৫-৪৬ সনেও সঠিক ছিল না। যাইহােক সরকার পক্ষে বিজননীতির শেষ তাত্ত্বিক পেরেকটি ঠোকা হলাে সুস্পষ্ট ভাষায় কমিউনাল্ড অ্যাওয়ার্ড’ নামে ১৯৩৫-এর ভারত শাসন আইনে। সে প্রসঙ্গ পরে আসছে। লীগও ছিল মুসলমান ভূস্বামী , উচ্চবিত্ত ও এলিট-প্রধান দল ১ যদিও ১৯০৯ থেকে সুস্পষ্টভাবে তাত্ত্বিক বিভাজননীতির প্রয়ােগ, এর সূচনা অনেক আগে থেকে অর্থাৎ ১৯ শতক থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ইংরেজি শিক্ষাগ্রহণ এবং ইংরেজ আনুকূল্যে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন যার ফলে তৈরি হয় শিক্ষিত ইংরেজ সমর্থক হিন্দু এলিট শ্রেণী, সেইসঙ্গে ভূস্বামী ও বণিকশ্রেণী। উনিশ শতকের ব্রিটিশনীতির প্রকাশ ঘটে শাসকদের কাজে ও বক্তব্যে । যেমন। ১৮৪৩ সালে লর্ড অ্যালেনবরাে বলেছিলেন, ‘আমাদের নীতি হলাে হিন্দুদের সঙ্গে সমঝােতা গড়ে তোেলা’।
এর ফলে ১৯ শতকে শিক্ষা ও অর্থনৈতিক দিক থেকে যে নবজাগরণ তা হিন্দু সমাজেরও উচ্চবৃত্তেই আবদ্ধ, নিমশ্রেণীতে নয় । আর অনুন্নত মুসলমান সম্প্রদায়কে তা স্পর্শও করেনি । কথাটা অশােক মিত্র থেকে সুশােভন সরকার প্রমুখ বিদগ্ধজন অনেকে লিখেছেন। ফলে তৈরি হয়েছিল হিন্দুপ্রধান বাবু সম্প্রদায় যাদের নিয়ে কবি সমর সেন থেকে ইতিহাসবিদ বরুণ দে প্রমুখ। বিতর্কের ঢেউ তুলেছেন। এ বিষয়ে উল্লেখ্য কেমব্রিজ ও অক্সফোর্ড গ্রুপের পণ্ডিতগণের ভদ্রলােক তত্ত্ব’। ওই নবজাগরণের একদিকে যেমন ইংরেজ সমর্থন-অসমর্থনের উদারনীতি অন্যদিকে হিন্দু পুনর্জাগরণের ধর্মবাদী ভাবনা (বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ, বন্দেমাতরম) যা পরবর্তী সময়ে অরবিন্দ প্রমুখের হিন্দু জাতীয়তাবাদের তত্ত্ব উপহারে ধর্মীয় স্বাদেশিকতার জন্ম দেয়। এ ব্যাপারে বাঙলা ও পাঞ্জাব অগ্রগণ্য। শিবাজী উৎসব, ভবানী মন্দির ইত্যাদি ধর্মীয় প্রতীকে হিন্দুত্ববাদিতা শুধু জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস নয়, বিপ্লবী সংগঠনগুলােকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। যে জন্য ‘বন্দেমাতরম’ দেবীবন্দনার প্রতীকে আবদ্ধ থেকে যায়, সর্বজনীন রাজনৈতিক স্লোগানে উন্নীত হতে পারেনি। মুসলমান তা গ্রহণ করেনি। কাজেই এমন ধারণা উড়িয়ে দেয়া চলে না যে জনজীবনের অন্দরমহলে নবজাগরণী আহ্বান পৌঁছতে পারেনি। দরিদ্র, নিরক্ষর কুসংস্কারাচ্ছন্ন হিন্দুমুসলমান চাষির সমস্যা ইংরেজি শিক্ষিত হিন্দু বাবু’ সম্প্রদায়ের আলােচ্যসূচিতে স্থান লাভ করেনি। বলাই বাহুল্য, ওই ‘বাবু’ সম্প্রদায়ের কায়েমি স্বার্থমহলগুলাে নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের তাগিদে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে। হিন্দুধর্ম ও হিন্দুত্বের ধ্বজা ধরে তারা অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুযােগ-সুবিধা সীমিত সংখ্যক হিন্দু সুবিধাভােগীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে প্রয়াসী হয়। সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রাচীর তুলে তারা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে অনৈক ও বিভেদের শক্তিকে স্থায়ী করে তােলে। (কেশব চৌধুরী-ভারতীয় জাতীয়ভধাদের ভিত্তি ও স্বরূপ)। ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অন্দরমহলে তাই সামপ্রদায়িকতার চোরাস্রোত থেকেই গেছে । বিপ্লববাদী আন্দোলনে তা আরাে নগ্ন, আরাে স্পষ্ট। স্পষ্ট তার হিন্দুত্ববাদী ধর্মীয় চেতনার নানা প্রতীকে, আচারে ও স্লোগানে যেখানে মুসলমান তরুণের প্রবেশ অসম্ভব। কথাটা মাওলানা আজাদ ও কমরেড মুজফফর আহমদ ভিন্ন ভাষায় স্বীকার করেছেন তাদের লেখা বইতে। বাস্তব ঘটনা ও ইতিহাস তা প্রমাণ করে।
অবাক হতে হয় দেখে যে একদিকে ১৮৮৫ সালে ইংরেজ সিভিলিয়ান হিউমের উদ্যোগে জাতীয় কংগ্রেসের জন্ম ইংরেজ শাসকের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে ‘আবেদন-নিবেদনের রাজনীতি শুরু করার জন্য। অন্যদিকে দুই দশক পর রাজনীতির ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে মুসলমান উচ্চশ্রেণীকে হাতে রাখার প্রয়ােজনে আগা খানের দৌত্যে ও ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহর আগ্রহে ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় ইংরেজ শাসকের উদ্যোগে গঠিত হয় মুসলমানদের রাজনৈতিক সংগঠন ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ। লীগের প্রথম প্রস্তাবে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে ব্রিটিশরাজের প্রতি আনুগত্য সৃষ্টি ও মুসলমানদে রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের কথা বলা হয়। অবশ্য সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের কথাও বলা হয়। এখানেও নবাব, নাইট, ভূস্বামী, বণিকদের প্রাধান্য । তাছাড়া দাবি ছিল স্বতন্ত্র নির্বাচনের। স্বতন্ত্র নির্বাচনের পথ ধরে যে রাজনীতিতে সাংগঠনিকভাবে হিন্দুমুসলমানের দুই স্বতন্ত্র ধারায় যাত্রা শুরু হবে এ সত্য অস্বীকারের উপায় নেই। রাজনীতির এ ভিতটা মােটেই গণতান্ত্রিক চেতনার নয়। সাংগঠনিকভাবে আপাত বিচারে এই ভিন্ন পথে যাত্রা মুসলিম লীগের হাত ধরে হলেও এর মূল। রচয়িতা ইংরেজ শাসন ও তাদের ভেদনীতি যা ইংরেজ ভাইসরয় থেকে। ভাইসরয়ের হাত ধরে বিকশিত হয়েছে। সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষের রাজনীতি ছিল। বিভাজনের মূল কারণ এবং দেশবিভাগের উৎস।
সূত্র : দেশবিভাগ-ফিরে দেখা – আহমদ রফিক