You dont have javascript enabled! Please enable it!

৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | আজকের এদিনে

কলকাতার বাংলাদেশ মিশনকে বাংলাদেশ হাইকমিশন নামে নামকরন করা হয়েছে এবং হোসেন আলীকে হাইকমিশনার পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভারতের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক সেলের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ বিষয়ে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডি পি ধর সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর মিশনপ্রধানের পদবি ও মিশনের নাম বদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। [দৈনিক যুগান্তর ৭ সেপ্টেম্বর]
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ব্যক্তিগত দূত সুলতান মোহাম্মদ খান এই দিন মস্কোতে সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে গ্রোমিকোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সুলতান মোহাম্মদ খান সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। [দৈনিক যুগান্তর ৭ সেপ্টেম্বর]
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা দিবসের অনুষ্ঠানে নিযুক্ত চীনা কন্সাল জেনারেল কুং চেং
পাকিস্তানের করাচীতে পাক চীন মৈত্রী সমিতির পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা দিবসের অনুষ্ঠানে নিযুক্ত চীনা কন্সাল জেনারেল কুং চেং বলেন পাকিস্তানের জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষা, বিদেশী হামলা ও হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামে চীনা সরকার ও তার জনগন সর্বদা দৃঢ় সমর্থন করে যাবে। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা তাদের নিজেদের সমাধান করা উচিত এবং এই বিষয়ে কাহাকেও হস্তক্ষেপ করতে দেয়া উচিত নয় এবং ইহাই তাদের নেতা মাও এবং তার সরকারের নীতি। [ইত্তেফাক ৭ সেপ্টেম্বর]
পাকিস্তানের প্রতি ইরান ও সৌদি মনোভাব
প্রতিরক্ষা দিবস উপলক্ষে করাচীর এক হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তানে নিযুক্ত ইরানী কন্সাল জেনারেল এই দিনে বলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে কোন বিদেশী হামলার সময় তার দেশের সরকার ও জনগন সবসময় পাকিস্তানের পাশে থাকবে। ইরান ও পাকিস্তান একই গাছের দুইটি অঙ্গ। তিনি ১৯৬৫ সনের যুদ্ধে পাকিস্তানী সৈন্যদের বীরত্বপূর্ণ অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। অনুষ্ঠানে সউদি কন্সাল শালেহ কাতানি উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি তার ভাষণে বলেন তার দেশের জনগন পাকিস্তানের সুখ দুঃখের অংশীদার হতে চায়।
প্রদেশে প্রতিরক্ষা দিবস উদযাপন
‘শির দেগা, নেহি দেগা আমামা’ এ শ্লোগান দিয়ে শুরু হয় পাকিস্তানিদের প্রতিরক্ষা দিবস। এই দিবসকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন সভা ও মিছিল। রাস্তায় তোরণ নির্মাণ করা হয়। এ উপলক্ষে সকল পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। পত্রিকায় বিশেষ সম্পাদকীয় লেখা হয়। ক্রোড়পত্রে ১৯৬৫ সনের যুদ্ধে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানীদের বীরত্বগাথা তুলে ধরে। ক্রোড়পত্রে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া, নৌ বাহিনী প্রধান, বিমান বাহিনী প্রধানের বানী প্রচার করা হয়।
সকল রাজনৈতিক দল ঢাকা ও বড় শহরে সভা সমাবেশ ও মিছিল করে। পাকিস্তান অনুগত বুদ্ধিজীবীরা বিভিন্ন সভা সেমিনার সিম্পজিয়ামে পাকিস্তানের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। সকল সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
কোন কোন রাজনৈতিক দল সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করে। রেডিও দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে। কিছু কিছু অনুষ্ঠান তারা সরাসরি সম্প্রচার করে। টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে।
যে সকল শিল্পীরা প্রতিরক্ষা দিবসের অনুষ্ঠানমালায় অংশ নেন তাদের মধ্যে আছেন বেদার উদ্দিন, ওস্তাদ ফজলুল হক।
বুলবুল ললিত কলা একাডেমী তাদের একাডেমী প্রাঙ্গনে সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ইকবাল নজরুল সোসাইটির মুশায়েরা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কাজী মোতাহার হোসেন
রেডিওতে আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী [দৈনিক পাকিস্তান/দৈনিক সংগ্রাম ৭ সেপ্টেম্বর]
দালাল তৎপরতা
পিডিপি পূর্ব পাকিস্তান সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আলী পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ঢাকায় পৌঁছে বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের বলেছেন ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় এখনও আসেনি। সময় আসিলেই জনগন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের স্বাগত জানাবে এবং সে সময় এখনও আসেনি। তিনি বলেন যাহাদের উপযুক্ত মনে করা হবে তাদের মধ্য হতেই ক্যাবিনেটের সদস্য নেয়া উচিত। বর্তমানে নির্বাচিত বা অনির্বাচিত এমন প্রশ্ন করা উচিত নয়। তিনি বলেন পূর্ব পাকিস্তানে বেসরকারী গভর্নর সরকারের একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। এ জন্য প্রেসিডেন্ট প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। প্রত্যেক সৎ চিন্তাশীল বেক্তির এ সিদ্ধান্ত স্বাগত জানানো উচিত। তিনি তার বিদেশ সফরকে সফল উল্লেখ করেছেন। তিনি সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স,জার্মানী, ব্রিটেন, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা সফর করেছেন। তিনি বলেন তিনি এসব দেশে পূর্ব পাকিস্তানীরা বিচ্ছিন্নতা চায়না তা বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন। এ সকল দেশ এখন বুঝে পূর্ব পাকিস্তানীরা এক পাকিস্তানে বিশ্বাসী। [ইত্তেফাক ৭ সেপ্টেম্বর]

প্রতিরক্ষা দিবসের বানীতে জামাত প্রাদেশিক প্রধান গোলাম আজম জনগণকে পাকিস্তানের আদর্শে দৃঢ়ভাবে অটল তাহাকার এবং যে কোন প্রকার অভ্যন্তরীণ বহিরাক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উদ্দেশে সব রকমের আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকার আহবান জানান। [দৈনিক সংগ্রাম ৭ সেপ্টেম্বর]
পাকিস্তান প্রতিরক্ষা দিবসের কার্জন হলে পাকিস্তান ইয়থ কালচারাল সোসাইটি আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য দেন ডঃ হাসান জামান, মোহর আলী, কর্নেল বশীর আহম্মদ।
পাকিস্তান কাউন্সিল আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখেন পাকিস্তান অবজারভার সম্পাদক আবদুস সালাম, তিনি বলেন ৬৫ সালে দেশের জনগন দেশকে রক্ষার জন্য প্রান দিতে প্রস্তুত ছিল বর্তমানেও তারা প্রান দিতে প্রস্তুত। ৬৫ সালে তাদের আমরা সমুচিত শিক্ষা দিয়াছি এবং এবারো প্রয়োজনে সেই শিক্ষাও দিবো। দেশ আক্রান্ত হলে জনগনের মধ্যে আর বিভেদ থাকবে না তখন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে লড়বে। পূর্ব পাকিস্তানে এমন কেউ নেই যে ভারতীয় দাসত্তে আবদ্ধ হতে চায়। জগন্নাথ কলেজের অধ্যাপক আজাহার কাদরী এক দীর্ঘ প্রবন্ধ পাঠ করেন। পূর্ব পাকিস্তানের সর্বাধিক প্রচারিত উর্দু পত্রিকা ওয়াতান সম্পাদক নাসিম আহমেদ এই সভায় প্রবন্ধ পাঠ করেন।
প্রতিরক্ষা দিবস উপলক্ষে মহসিন হলে হলের প্রভোস্ট ওয়াদুদুর রহমানের সভাপতিত্তে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় এতে উপস্থিত ছিলেন ডঃ মোহর আলী, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, একেএ জালাল উদ্দিন মোস্তফা, ডঃ হাবিবুল্লাহ, মতিউর রহমান নিজামি। অনুষ্ঠানে বক্তারা ৬৫ যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গৌরবময় ভুমিকা আলোচনা করেন এবং ভারতের বিরুদ্ধে তাদের সেনাবাহিনীকে উজ্জীবিতকরন মূলক আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানে অনেক বিদেশী সাংবাদিক উপস্থিত ছিল।
প্রতিরক্ষা দিবস উপলক্ষে ঢাকা শহর শান্তি কমিটির উদ্যোগে মইনুদ্দিন মেমোরিয়াল হলে আলোচনা সভায় অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক মীর ফখরুজ্জামান।
প্রতিরক্ষা দিবস উপলক্ষে পাকিস্তান ইয়থ কাউন্সিল আয়োজিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ হাসান জামান। প্রধান অতিথি ছিলেন কাইউম মুসলিম লীগ সাধারন সম্পাদক খান এ. সবুর। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন শাহ আজিজুর রহমান,
বক্তৃতায় খান সবুর বলেন পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য প্রতিটি পাকিস্তানী ঐক্যবদ্ধ। সেনাবাহিনী একা নয় তাদের সঙ্গে আছে সমগ্র জাতি। দুই লাখ ছেলে রাজাকার প্রশিক্ষন নিয়েছে। আরও নিবে। তিনি এই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি আহবান জানান।
সবুর বলেন শরণার্থীরা পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসতে চায়না তারা নাকি বাংলাদেশে ফিরবে আমি বলি তাদের পূর্ব পাকিস্তানে ফিরতে হবে। আর না হলে তারা যেন স্থায়ী ভাবে ভারতে থেকে যায়। তিনি বলেন পূর্ব পাকিস্তানীরা নিজেদের পাকিস্তানী হিসেবেই বিশ্বাস করে এবং পাকিস্তানী হিসেবেই বাচতে চায়। তারা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কাউকে হস্তক্ষেপ করতে দিবে না। তিনি ভারতকে সতর্ক করে বলেন জনগন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পিছনে আছে যদি সে পাকিস্তান আক্রমনের সাহস করে তা হলে তারা পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য সবরকম কিছু করবে।
প্রতিরক্ষা দিবস উপলক্ষে ঢাকা শহর শান্তি কমিটির উদ্যোগে মইনুদ্দিন মেমোরিয়াল হলে আলোচনা সভায় অংশ নেন জামাতে ইসলামী পূর্ব পাকিস্তান সভাপতি গোলাম আজম। গোলাম আজম তার বক্তৃতায় পাকিস্তানকে বাচাতে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য আহবান জানান। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক মীর ফখরুজ্জামান। বক্তৃতা করেন নেজাম নেতা মওলানা সিদ্দিক আহমেদ, পিডিপি ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল জব্বার খদ্দর। জামাতের মওলানা আব্দুস সোবহান, মুসলিম লীগের সিরাজ উদ্দিন ও ফয়েজ বক্স। অনুষ্ঠানে সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য আব্দুস সোবহান বলেন কলেমার আহবান, ভ্রাতৃত্ব বোধের অনুভুতি, ইসলামী আদর্শের অনুপ্রেরণা এ তিনটি জিনিষেই আমরা ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলাম কিন্তু সে যুদ্ধের শিক্ষাকে আমরা পরে কাজে লাগাইনি। ফলে জাতির জীবনে এখন ভয়াবহ দুর্ভোগ নেমে এসেছে।
প্রতিরক্ষা দিবস উপলক্ষে কনভেনশন মুসলিম লীগ সভা করে বায়তুল মোকাররমে। এতে বক্তব্য রাখেন প্রাদেশিক সাধারন সম্পাদক শামসুল হুদা, সাবেক জাতীয় পরিষদ সদস্য আব্দুল আওয়াল, প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এএনএম. ইউসুফ প্রমুখ। এএনএম. ইউসুফ তার বক্তব্বে বলেন দেশপ্রেমিক জনগন অখণ্ড পাকিস্তানের পতাকা তলে ঐক্যবদ্ধ। সভা শেষে বৃষ্টির মধ্যেই তারা মিছিল করে পুরাতন ঢাকায় যায়।

প্রতিরক্ষা দিবস উপলক্ষে পল্টন ময়দানে শান্তি ও কল্যাণ কমিটি এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। উপস্থিত ছিলেন কমিটির সভাপতি মৌলভি ফরিদ আহমেদ এবং সাধারন সম্পাদক মওলানা নুরুজ্জামান। ফরিদ আহমেদ বলেন পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে বদ্ধ পরিকর শক্তি সমুহের বিরুদ্ধে লড়বার জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ভারত যুদ্ধে পরাজিত হলেও পাকিস্তানকে টুকরা করার জন্য এখনো ষড়যন্ত্র করছে। আলোচনা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এর আয়োজন করা হয়। শিল্পী ফজলুল হক ও বেদার উদ্দিন সঙ্গীত পরিবেশন করেন। [দৈনিক পাকিস্তান/দৈনিক সংগ্রাম ৭ সেপ্টেম্বর]

ইসলামী ছাত্রসংঘ এদিন সকাল ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে ছাত্র-গণজমায়েত ও মিছিলের আয়োজন করে। এতে বক্তব্য রাখেন দলের অল পাকিস্তান সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী, ঢাকা শহর ছাত্রসংঘের সভাপতি শামসুল হক ও সাধারণ সম্পাদক শওকত ইমরান। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা শহর ছাত্রসংঘের সভাপতি শামসুল হক। নিজামী বলেন ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মীরা দেশের প্রতিটি ইঞ্চি ভুমি রক্ষা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। পাকিস্তানের অস্তিত্ব রক্ষার্থে তারা ভারতের ভূখণ্ডে আঘাত হানতেও প্রস্তুত। ছাত্র সংঘ কর্মীদের এ সুযোগ দানের জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন বিগত ২৪ বছরে যারা পাকিস্তানের কমবেশি ক্ষতি করেছে তাদের আর পরীক্ষা করা উচিত হবে না। পুনরায় তাদের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সুবিধা দেয়া হলে দেশের আরও ক্ষতি হবে। এবার যদি সরকার বিচার বিশ্লেষণে ভুল করে তবে সেনাবাহিনী ও জনগনের ত্যাগ বৃথা যাবে। তখন পাকিস্তানকে রক্ষা করা যাবে কিনা তা একমাত্র আল্লাহই জানে।
সভায় ৬৫ যুদ্ধের শহীদের জন্য দোয়া ও তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা ও পাকিস্তানের সংহতির জন্য দোয়া করা হয়। পরে তারা একটি মিছিলের আয়োজন করে। [দৈনিক সংগ্রাম ৭ সেপ্টেম্বর]

ভারতের তৎপরতা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরিতে এক সমাবেশে তেজদিপ্ত ভাষণে বলেছেন পাক জঙ্গি শাহী বাংলাদেশে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। তিনি বলেন জনগনের দাবী কোন সরকার কোনদিন দাবিয়ে রাখতে পারেনি। পৃথিবীর ইতিহাস সে সাক্ষ্য দেয়। তিনি বলেন বাংলাদেশে যা ঘটছে তাতে আমরা নীরব হয়ে বসে থাকতে পারিনা। বাংলাদেশের ব্যাপার আমাদেরও ব্যাপার কারন বাংলাদেশের ৮০ লাখ শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। তিনি বলেন পাকিস্তান যদি ভারত আক্রমণ করে তবে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী তার সমুচিত জবাব দিতে প্রস্তুত আছে। তিনি পাকিস্তানের জঙ্গি শাসকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ভারত যেকোনো আক্রমণ মোকাবিলা করতে এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তির উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানের সামরিক শাসকেরা কোনো দুঃসাহসিক ঝুঁকি নিলে ভারত-সোভিয়েত চুক্তি তার বিরুদ্ধে প্রবল বাধা হয়ে দাঁড়াবে। সমাবেশে পর্যটন মন্ত্রী করন সিংহও বক্তৃতা করেন। পরে ইন্দিরা গান্ধী সীমান্তের পুঞ্ছ পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানকার ভারতীয় জওয়ানদের প্রস্তুতি এবং সতর্কতা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। পরে তিনি প্রথমে আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন পরে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। তিনি জম্মুতে আরও একদিন অবস্থান করবেন। [দৈনিক কালান্তর, ৭ সেপ্টেম্বর/ সাপ্তাহিক বিপ্লবী বাংলা সমসাময়িক]
অর্থমন্ত্রী ওয়াই বি চেভন সকালে কলকাতা পৌঁছেই বিমানবন্দর থেকে সল্টলেক শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। শিবিরটি বিমানবন্দরের কাছেই। সল্টলেক শরণার্থী শিবির পরিদর্শন কালে অর্থমন্ত্রী ওয়াই বি চেভন শরণার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন এক শ্রেণীর স্বার্থনুসান্ধি লোক তাদের বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি বলে তাদের উচিত এদের থেকে সতর্ক থাকা এবং সরকারের সাথে সহযোগিতা করে যাওয়া। তিনি বলেন শরণার্থীদের দুঃখ দুর্দশা লাঘবে ভারত সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। শিবিরে তিনি এক ঘণ্টা সময় কাটান। এসময়ে তিনি সেখানে দায়িত্বরতদের সাথে আলাপ আলোচনা করেন। শিবির ত্যাগ করার আগে তিনি সেখানে হাসপাতাল পরিদর্শন করেন ও রোগীদের খোজ নেন।
দফতর বিহিন মন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডিপি চট্টোপাধ্যায় দিল্লী থেকে কলকাতা এসে সল্টলেক শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। [দৈনিক কালান্তর ৭ সেপ্টেম্বর]

Prepared by Salah Uddin

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!