You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: ৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২৩শে চৈত্র, ১৩৭৯

বীমা শিল্পকে ব্যাপকভাবে জনকল্যাণে লাগাতে হবে

বীমা শিল্পে অব্যবস্থা এমনকি অরাজকতার অভিযোগ উঠেছে। ফাইল এরপর ফাইল জমা হয়ে রয়েছে। পলিসি হোল্ডাররা সীমাহীন দুর্ভোগের ভুগছেন। সম্পদ অপচয়, ব্যাপক দুর্নীতি, অযোগ্য কর্মচারীদের আশাতিরিক্ত পদোন্নয়ন এবং ইচ্ছামাফিক বেতন বন্টনে প্রায় বিপর্যয়ের মুখোমুখি এসে ঠেকেছে আমাদের বীমা শিল্প। দুদিন আগেও বীমা কর্মচারীরা সভা ডেকেছিলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী সেদিনও যেমন গত পরশুর জীবন বীমা ফিল্ড কর্মী ফেডারেশনের সম্বর্ধনা সভায় তেমন সকল অরাজকতা এবং আয়ের ব্যবস্থা দূরীকরণের আশ্বাস দিয়েছেন। আসলে সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনে যে বীমা শিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারত সঠিক নীতি এবং আন্তরিক কর্মতৎপরতার অভাবে শিল্পের নিজস্ব অস্তিত্বটাই যেন মিইয়ে গেছে অনেকখানি।
বাংলাদেশ বীমা শিল্পের সম্ভাবনা অথবা প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনার কোন অবকাশ নেই। কারণ পাকিস্তান আমলেই এই শিল্প জনসাধারণের নিকট থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছিল। এ থেকে অর্জিত মুনাফা তদানীস্তন পশ্চিম পাকিস্তানের ছোট-বড় নানা শিল্প গড়ে উঠেছিল। বীমা শিল্পের সম্ভাবনা কে সামনে রেখে এই বাংলাদেশেই কম বীমা কোম্পানি গড়ে উঠেনি। কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর কালে যখন এই শিল্পটিকে জনসাধারণের বৃহৎ স্বার্থে জাতীয়করণ করা হল তখন থেকেই সেখানে অব্যবস্থা এবং অরাজকতা শুরু হল কী কারণে তা এখনই অত্যন্ত গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। অনেকেই মনে করেন জাতীয়করণ কর্মসূচি তথা সমাজতন্ত্রের উত্তরণের এই প্রাথমিক পদক্ষেপ কে বানচাল করার জন্য যে স্বার্থবাদী মহল সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থায় তৎপর রয়েছে তাদের অস্তিত্ব বীমা শিল্পেও বেশ-প্রকট। যে শিল্প ব্যক্তিগত মালিকানায় প্রচুর মুনাফা অর্জনে সক্ষম এবং পলিসি হোল্ডারের স্বার্থ সংরক্ষণে অতি সচেতন ছিল জাতীয়করণের পর যদি সেই শিল্পটির একটা অলাভজনক সংস্থা পরিণত পরিণত হয় অথবা পলিসিহোল্ডার সেই সহানুভূতির কর্মতৎপরতা এবং ব্যবহারিক উষ্ণতা থেকে বঞ্চিত থাকেন তবে স্বাভাবিকভাবেই দোষটা পড়বে সরকারের জাতীয়করণ নীতির উপর। বাণিজ্যমন্ত্রী এই সকল জাতীয়করণ বিরোধী শক্তিকে বীমা শিল্প থেকে হাটিয়ে দেবার আশ্বাস দিয়েছেন। এটা আশার কথা, সুখবর। কিন্তু সেখানে বসবে কারা? অতীতে আমাদের দেশের মিশ্র অর্থনীতির আসনে সাধারণতঃ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বীমা শিল্পের উচ্চ ক্ষমতায় বসানো হতো। সেই প্রথাই এতদিন চলে এসেছে। সমাজবাদী অর্থনীতিতে সেটা আর চলতে পারেনা। সত্যিকারের কর্মক্ষম এবং দক্ষ কর্মীদের নিযুক্ত করতে হবে তাদের যোগ্যতা অনুসারে বিভিন্ন পদে। সাধারণ বীমা কর্মীদের নিকট আমাদের একটা বক্তব্য রয়েছে। আমরা যতটুকু জানি স্বাধীনতা-উত্তরকালে কিছু সংখ্যক কর্মী ইচ্ছামত তাদের পদোন্নতি ঘটিয়েছেন। অসংখ্য পে-স্কেলের প্রবর্তন করা হয়েছে এই শিল্পে। মনে রাখতে হবে সমাজতন্ত্র অথবা জাতীয়করণ কোনটাই আত্মোন্নয়নের জন্য করা হয়না, করা হয় সমাজের সর্বস্তরের মানুষের স্বার্থেই। তাছাড়া তাদের এই স্বেচ্ছাচারিতা যা পরোক্ষভাবে সমাজতন্ত্রের শত্রুদের জাতীয়করণ নীতি বানচালের ষড়যন্ত্র কে সাহায্য করছে, তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। এই গণদুশমনরা নিজেদের দোষ যাতে আপনাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে না পারে সেদিকে সর্তক দৃষ্টি রাখতে হবে আপনাদেরই। অবশেষে সরকারের কাছে আমাদের আবেদন সমন্বিত এবং সুস্থভাবে এই বীমা শিল্প কে অনতিবিলম্বে ঢেলে সাজানো হোক। একটা সুস্পষ্ট নীতি সাধারণ কর্মচারী এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের সামনে তুলে ধরতে হবে।

প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি চাই

গত বুধবার প্রায় প্রত্যেকটি সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় ডিগ্রী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাবার খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। এ সম্পর্কে ডাকসুর নেতৃবৃন্দ প্রামাণ্য দলিল সাংবাদিক সম্মেলনে পরিবেশন করেছেন। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে যে, ডিগ্রী পরীক্ষার কিছু প্রশ্ন পরীক্ষার আগেই খোলা বাজারে পাওয়া গেছে। এবং এক শ্রেণীর লোক এই প্রশ্ন নিয়ে ব্যবসা করেছেন। শুধু তাই নয়, এবারের পরীক্ষায় পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেতরে টোকাটুকি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এবারের ডিগ্রী পরীক্ষায় নকল প্রতিরোধের জন্য সরকার পুলিশ রক্ষাবাহিনী, ও সেনা বাহিনী নিয়োগ করেছেন। সহযোগী হিসেবে এগিয়ে এসেছেন ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ছাত্র ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন জনসভায় সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের নৈতিক অধঃপতন কে রোধ করার জন্য ইতিপূর্বে বহুবার আবেদন জানিয়েছেন।
শিক্ষা হল জাতির উন্নতির প্রধান ও একমাত্র মাপকাঠি। এই শিক্ষা শুধু পুঁথিগত নয়-সামগ্রিক। কারণ শিক্ষার সঙ্গে হল অন্তত সম্ভাবনাময় মানব শিশুর সর্বতোমুখী বিকাশ। শিক্ষা বলতে তাই উন্নত মানের নৈতিকতা, যুক্তি, বুদ্ধি, চিন্তা, বিচার ও কল্পনা শক্তির বিকাশকে আমরা বুঝে থাকি।
নকল করা কাজটি ভীষণভাবে নৈতিকতাহীন কর্ম। এই নৈতিকতা শুধু যে ছাত্রছাত্রীর মধ্যে নেই তা নয়, তাদের অধিকাংশ অভিভাবকদেরই নেই। এই নীতি বিগর্হিত সমাজের সমাজের এত ভয়াবহ ও ব্যাপক মুখ বাদান করে দেশীয় ঐতিহ্য ও অগ্রগতিতে ভীতি প্রদর্শন করছে যে তা একটু সজাগ দৃষ্টি থাকলেই বোঝা যায়। একে রুখবে কে? অবশ্যই দেশের জনসমাজ এবং সরকার। সরকার তার কর্তব্যে যথেষ্ট একাগ্রতা ও বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছেন। ছাত্রসমাজও এগিয়ে এসেছেন নকল বিরোধী আন্দোলনকে সফল করে তুলতে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেনাবাহিনী নিয়োগ করে সরকার একটা বিশেষ ঝুকিও নিয়েছেন। অথচ এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাবার মতো ঘটনা সংঘটিত হওয়াতে সমগ্র জাতি আজ মর্মাহত ও ব্যথিত।
ছাত্র সমাজের নৈতিক অধপতনের জন্য গণ টুকাটুকি শুরু হওয়াতে ঘরে-বাইরে আজ সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। রক্তাক্ত বিপ্লবে বিজয়ী বীর বাঙ্গালীদের মান-সম্মান ধুলায় লুণ্ঠিত হচ্ছে। আমাদের দেশের ডিগ্রির কোন মূল্যই নেই বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।
জাতির কলঙ্ক মোচনের জন্য যখন সরকার ও ছাত্র প্রতিষ্ঠানের সহ অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গুলো সক্রিয়ভাবে এগিয়ে এসেছেন তখনই একদল তথাকথিত বুদ্ধিজীবী নামধারী সমাজ বিরোধী দুষ্কৃতিকারীর অপকর্মের ফলে সামগ্রিকভাবে নকল বিরোধী অভিযানই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। আমাদের মতে এরা চোরাকারবারি, মুনাফাখোর ও মজুদদার সহ অন্যান্য দুষ্কৃতিকারীদের অপরাধের তুলনায় এদের অপরাধ কোন অংশে কম নয়। এরাও একশ্রেণীর শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী নামধারী দুষ্কৃতিকারী। সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত বাংলাদেশের সমাজতন্ত্র কায়েমের ঊষালগ্নে যারা সমাজ জীবনে কলঙ্ক কালিমা লেপন করতে চায়, যারা দেশকে নিয়ে যেতে চায় অধঃপতনের অতল গহ্বরে সেই সব অপরাধীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য আমরা সরকারের কাছে আবেদন করছি।

নয়া রেডক্রস আদেশ

বাংলাদেশ রেডক্রস সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির আদেশ জারি করা হয়েছে। এ আদেশ অনুসারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি রেডক্রসের প্রধান হবেন এবং তিনি চেয়ারম্যান মনোনয়ন করবেন। রাষ্ট্রপতি আদেশে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই সংস্থাটি স্বায়ত্তশাসিত হবে এবং রেডক্রসের মৌলিক নীতি অনুসরণে সবসময় কাজ চালিয়ে যাবে এছাড়া রেডক্রস সমিতি তার সকল কাজে নিরপেক্ষতা, পক্ষপাতহীনতা, স্বাধীনতা, সার্বজনীনতা, মানবতা ও অন্যান্য মৌলিক নীতি পালন করে চলবে। রাষ্ট্রপতির এই বর্তমান আদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়েছে বলে ধরা হবে। এখন থেকে রেডক্রসের সার্বিক প্রধান হবেন দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রশাসনিক প্রধান হবেন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর রাত রেডক্রসকে যে পরিমাণ গুরুত্ব দিয়ে গঠন করা হয়েছিল তার চাইতে অনেক বেশি গুরুত্ব বৃদ্ধি পেলো বর্তমান রাষ্ট্রপতি আদেশ মোতাবেক রেডক্রসের নতুন সংগঠনে। নবগঠিত রেডক্রসের গুরুত্ব প্রথম রাষ্ট্রপতি হওয়ায় যে পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে তাকে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে এই সংস্থাকে রক্ষা করতে হবে। রাষ্ট্রপতি পদমর্যাদা যেহেতু দেশেত সর্বোচ্চ সীমাহীন সেহেতু তাঁর সম্মান ও মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে সংস্থার চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে কাজ করে যেতে হবে। ইতিপূর্বে বাংলাদেশ রেডক্রস প্রসঙ্গে বহু বিতর্ক আমরা লক্ষ্য করেছি। এসকল বিতরকের বা সন্দেহের অবসান ঘটিয়ে রাষ্ট্রপতি নেতৃত্বে রেডক্রস একটি মানবতামুখী কল্যাণকামী সংস্থা হিসেবে দেশে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!