You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: ৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২২শে চৈত্র, ১৩৭৯

সত্যি ন্যায্যমূল্যে ভোগ পণ্য মিলবে?

অবশেষে হয়তো ভোগ্যপণ্য কর্পোরেশনের মহাকান্ড জনগণের ভোগে লাগতে যাচ্ছে। এতদিন এই কর্পোরেশনের অধীনস্থ ন্যায্যমূল্যের দোকান নিয়ে নানা কেলেঙ্কারির কথা বিভিন্ন সংবাদপত্র প্রকাশ হয়ে আসছিল। অপরপক্ষে এর সমস্যাদির বিষয়ে নিয়েও কম কথা বলা হয়নি। সবকিছু মিলিয়ে যেটা পরিষ্কার হয়ে উঠেছিল তা হলো বঙ্গবন্ধুর জনসাধারণের কল্যাণ কে সামনে রেখে ন্যায্যমূল্যে ভোগ্যপণ্য সরবরাহের যে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন নানা সমস্যা, সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব এবং ব্যাপক অসাধুতার ফলে তা ব্যর্থ হতে চলেছে। সব সমস্যা গুলোকে একত্রিত করে তাই নতুন পন্থা খুঁজে বের করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পনের সদস্যের একটি কমিটি পরিকল্পনা সব দিক বিচার বিশ্লেষণ করে কিছু সুপারিশ রেখেছেন। কর্পোরেশন নেওয়া হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে।
সুপারিশে কর্পোরেশনকে চলতি মাসে আরো তিন কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। কর্পোরেশনের কমিশনও বাড়িয়ে দেওয়া হবে শতকরা পনেরো ভাগ থেকে শতকরা বিশ ভাগে। ন্যায্যমূল্যে ভোগ্যপণ্য সরবরাহের পরিকল্পনা গৃহীত হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত বহু অর্থই ব্যয়িত হয়েছে। শুধু কর্মচারীদের বেতন এবং ভাড়া বাবদ খরচ হচ্ছে মাসে চুয়াল্লিশ লাখ টাকা। এতকিছু ব্যয় খরচের পরও কিন্তু সাধারণ মানুষের কাজে লাগেনি। অসৎ কিছু লোক এ পরিকল্পনার পেছনে ব্যয় অর্থ থেকে বেশি মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ন্যায্যমূল্য সরবরাহের জন্য যে পণ্য সরকারী গুদাম থেকে ছাড়া হয়েছিল তাও খোলা বাজারে চড়া দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এখন হাত বদলেছে। নতুন পরিকল্পনা সুপারিশ ও রয়েছে। কামরুজ্জামান সাহেব পুরোনো সরকারে তার দায়িত্ব অত্যন্ত সুচারুভাবে পালন করেছেন। ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ এবং কোটি লোকের পুনর্বাসনে তিনি যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন নতুন সরকারের এই নতুন দায়িত্বটিও তেমনি সফলতার সঙ্গে কার্যকরী করতে পারবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছা অনুসারে পরিকল্পনাটির সফল বাস্তবায়ন হলে জনগণের দুর্ভোগের অনেকটা উপশম হবে। আর তা বাস্তবে করতে গেলেই দরকার হবে সৎ কর্মী বাহিনীর। কারণ সদিচ্ছা এবং মহৎ পরিকল্পনায় তার বাস্তবায়নে শেষ কথা হতে পারে না।

নয়া সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশে নবনিযুক্ত সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত মিঃ আঁদ্রেফোমিন গত মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন। তেজগাঁ বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে মাননীয় রাষ্ট্রদূত বলেছেন, আমাদের দু’দেশের বন্ধুত্ব সম্পর্ক শক্তিশালী করার জন্য আমি কাজ করে যাব।
উপমহাদেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিকীকরণের ব্যাপারে সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্ভাব্য ভূমিকা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সোভিয়েত সরকারের ভূমিকা সুবিদিত। আমরা এতদঞ্চলের উত্তেজনা প্রশমিত রূপ দেখতে চাই।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে মিঃ ফোমিন বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রথম রাষ্ট্রদূত মিঃ পপোভের স্থলাভিষিক্ত হলেন।
বাংলাদেশ ও সোভিয়েত রাশিয়ার বন্ধুত্ব সুনিবিড়। দু’টো দেশই পরস্পরের মঙ্গল কামনা করে। সোভিয়েত রাশিয়ার জনগণ মহান লেনিনের নেতৃত্বে অক্টোবর বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র কায়েম করেছেন। বাংলাদেশের জনগণ বাংলার নয়নমণি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সূর্যকে ছিনিয়ে এনেছেন। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজতন্ত্রের উত্তরণে বদ্ধপরিকর। দুটো দেশের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যদি এক হয় তাহলে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধ হয় আরো সুদৃঢ়। নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মিঃ ফোমিন মৈত্রীর বন্ধন কে আরো ঘনিষ্ঠ করার উদ্দেশ্যেই সোভিয়েত জনগণ ও সরকার এর প্রীতি ও শুভেচ্ছার বাণী নিয়ে এসেছেন। স্বাধীনতার পর মাত্র পনোরটি মাস অতিবাহিত হয়েছে। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে এগুতে হয়েছে নানান সমস্যা ও সংকটের পাহাড় ঠেলে। দেশের আভ্যন্তরীণ সমস্যা ও সংকটের সুযোগ নিয়ে কোন কোন মহল বাংলাদেশ-সোভিয়েত রাশিয়া, বাংলাদেশ-ভারত বিরোধী প্রচারণায় লিপ্ত রয়েছে। এদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যই হলো পারস্পারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি করা এবং পরবর্তী পর্যায়ে উভয় দেশের বন্ধুত্বে ফাটল ধরানো। এটা যে শুধুমাত্র বিশেষ মহল করছে তা নয়। অন্য আরেকটি মহলও নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সোভিয়েত রাশিয়ার নাম ভাঙ্গিয়েছে। তাদের কথাবার্তায়, আচার-আচরণে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশের সঙ্গে সোভিয়েত রাশিয়ার বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপনের কৃতিত্ব তাদেরই। অথচ বাস্তবে তা নয়। বাংলাদেশের জনগণ ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের জয়যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয় এ নীতিতে বিশ্বাসী। বাংলাদেশ বিশ্বের সকল নিপীড়িত, নির্যাতিত ও শোষিত মানুষের সঙ্গে রয়েছে। আর এ কারণে বাংলাদেশের নীতি ও আদর্শের প্রতি রয়েছে সোভিয়েত রাশিয়ার পরিপূর্ণ আস্থা ও সমর্থন।
মিঃ ফোমিন একজন প্রবীণ ও অভিজ্ঞ কূটনীতিবিদ। উপমহাদেশের বিভিন্ন সমস্যাবলি সম্পর্কে সম্যক ধারণা তার রয়েছে। অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি যে নিজ দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারবেন এ বিশ্বাস আমাদের রয়েছে।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!