You dont have javascript enabled! Please enable it!

ঢাকা শহরে সক্রিয় ক্র্যাক প্লাটুন

মুজিবনগর সরকার, প্রশাসন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও তৎকালীন ছাত্রশিক্ষকদের অবদান এতটা ব্যাপক যে। এককভাবে বাংলাদেশের অপর কোন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা তার সমকক্ষ ছিল না আর সে জন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে চরমমূল্য দিতে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর স্বাধীনতার লাল সূর্য ওঠার প্রাক্কালে, এটাই হলাে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়তি।  মুক্তিযুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় মুক্তিবাহিনীর গেরিলা তৎপরতাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। যে সব গেরিলা বাহিনী ঢাকা নগরীতে অভূতপূর্ব দুঃসাহসী অভিযান পরিচালনা করে তাদের সদস্যদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র । এই সব গেরিলা বাহিনীর অন্যতম ক্র্যাক প্লাটুন’ গড়ে উঠেছিল ২নং সেক্টরের দুঃসাহসী সেনাপতি মেজর হায়দারের নেতৃত্বে, সদস্যদের মধ্যে মোফাজ্জল হােসেন (মায়া), শহীদুল্লাহ খান (বাদল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, এই প্লাটুনের তৎপরতা সম্পর্কে জানা যায় এ. এস. এম সামছুল আরেফিন রচিত “মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান গ্রন্থ থেকে। ক্র্যাক প্লাটুনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অপারেশন ছিল, হােটেল ইন্টারকনটিনেন্টালে, ৫ ও ১১ কেভি পাওয়ার স্টেশান, যাত্রাবাড়ী ব্রিজ, হামিদুল হক চৌধুরীর প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রি, বি ডি আর গেইট ও ধানমণ্ডি, ভােগ ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প আক্রমণ ও ধ্বংস সাধন! মাদারটেক ও ত্রিমােহিনীতে পাকিস্তান সেনা শিবির, বৈদ্যের বাজার ও রূপগঞ্জ থানা আক্রমণ, বিস্ফোরণ এবং শত্রুর জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি।

আদিল খান (টুটুল), এস এ খুরশীদ রেজা (টুলু) প্রমুখকে নিয়ে গঠিত ঢাকা (দক্ষিণের) গেরিলা দল ১৯৭১ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে নিউমার্কেটের কোনার পেট্রোল পাম্পটি উড়িয়ে দেয়, এই দলই আমি রিক্রুটমেন্ট অফিস এবং একাত্তরে ঢাকা টেলিভিশনে বিভিন্ন নাটকে বাংলাদেশের নায়কদের ব্যঙ্গ করে সৃষ্ট বিভিন্ন চরিত্র রূপদানকারী ফতেহ লােহানীর ওপর আক্রমণ চালিয়েছিল । ঢাকা (উত্তরের) গেরিলা দল নাসিরউদ্দিন ইউসুফ (বাচ্চু), অভিনেতা রাইসুল ইসলাম (আসাদ) প্রমুখকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল। এই দলের দুঃসাহসী অভিযানের মধ্যে ছিল কাকরাইল মােড়ের পেট্রোল পাম্প ধ্বংস, সিঙ্গাইর থানার একটি গ্রামে ১৪জন এবং নভেম্বরে পল্টনে গাড়ি বােমার বিস্ফোরণ  ঘটিয়ে ১৬জন পাক সেনা হত্যা। শাহবাগে রেডিও পাকিস্তানে বিস্ফোরণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে বিস্ফোরণ। ঐ সব গেরিলা দল মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন কলেজের ছাত্রদের নিয়ে গঠিত ছিল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শেষ কয়েক মাস ঢাকা নগরীতে সন্ধ্যা হতে না হতেই বিস্ফোরণের শব্দ শােনা যেত। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে কারফিউ ও ব্ল্যাক আউটে জনমানব শূন্য অন্ধকার ভূতুড়ে শহরে নাগরিকদের মনোবল অক্ষুন্ন রাখার প্রক্রিয়া ছিল স্বাধীন বাংলা বেতারের অনুষ্ঠান আর নগরীর দিক দিগন্ত থেকে ভেসে আসা বিস্ফোরণের বিচিত্র আওয়াজ। বলা বাহুল্য যে দুঃসাহসী মুক্তিযােদ্ধা সেনাপতি মেজর হায়দারের নেতৃত্বাধীন ক্র্যাক প্লাটুন এবং অন্যান্য গেরিলা বাহিনীর সদস্যদের একটা বড় অংশ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহসী ছাত্ররা। 

সূত্র : স্বাধীনতা সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় – রফিকুল ইসলাম

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!