বুদ্ধিজীবী নিধন
মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরাও সক্রিয় ছিল, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পর গঠিত শান্তি কমিটিগুলি ছিল বাঙালীর জন্য অশান্তি কমিটি, তার পর গােদের ওপর বিষ ফোড়ার মতাে ছিল রাজাকার বাহিনী, এগুলি প্রধানত এদেশের কুলাঙ্গারদের নিয়েই গঠিত হয়েছিল। বিহারীদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল আল-শাম্স এবং ইপকাফ (ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্স)। এখানেই শেষ নয় গড়ে তােলা হয়েছিল ‘আল্-বদর বাহিনী নামক গোপন ডেথ স্কোয়াড’; এই বাহিনীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রও ছিল, একাত্তরের সাংস্কৃতিক রাজাকাররা অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীদের তালিকা প্রণয়ন করে পাকিস্তানী সেনাপতি মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলির কাছে দিয়েছিল, সেই তালিকা অনুযায়ী অলি-বদর বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে দেশের মাথা সেরা বুদ্ধি ও পেশাজীবীদের গােপন আবাস থেকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে প্রথম মােহাম্মদপুর ফিজিকেল ট্রেনিং সেন্টারে আলবদর ঘাঁটিতে স্থাপিত ‘টর্চার সেন্টারে’ নির্মম দৈহিক নির্যাতনের পর রায়েরবাজার বধ্যভূমি এবং মীরপুর গােরস্থানে নিয়ে নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করেছিল। ১৯৭১ সালের আল-বদর বাহিনী তুলনীয় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে জার্মানীর হিটলারের ফ্যাসিস্ট নাৎসী বাহিনীর গেস্টাপাে বা এস এস ফোর্সের সঙ্গে, যাদের কাজ ছিল ইহুদি বুদ্ধিজীবী হত্যা। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সাহিত্যিক-সাংবাদিক হত্যার মধ্য দিয়ে, মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং দেশের প্রধান প্রধান সাহিত্যিক সাংবাদিক, বৈজ্ঞানিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী অধ্যাপকদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। ১৯৭১ সালের ২৫-২৭ মার্চের মধ্যে পাকিস্তান বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক, দর্শন বিভাগ। ভ, গােবিন্দ চন্দ্র দেব
বিজ্ঞানী ড. আবুল কালাম আজাদ
ড. সিদ্দিক আহমদ
ড. আমিনউদ্দিন
চিকিৎসক ডা. ফজলে রাব্বী
ডা. আলীম চৌধুরী
এদের মধ্যে যাদের রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয় তাদের অনেকের বিকলাঙ্গ লাশ সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি, যাদের মীরপুর গোরস্থানে হত্যা করে ধানক্ষেতে গণকবরে পুঁতে রাখা হয়েছিল তাদের দেহ সনাক্ত এবং বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়। রায়েরবাজার বধ্যভূমি তখন ছিল জলাভূমি কারণ তখন শহর রক্ষা বাঁধ ছিল না, ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১ ওখানে যে-সব বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়েছিল একটা পরিত্যক্ত ইটের ভাটার গর্তে পানির মধ্যে তাদের লাশ কুকুরে-শকুনে খেয়ে এমন অবস্থা করেছিল যে ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতার কয়েকদিন পর সে জায়গা খুঁজে বের করে মুনীর চৌধুরী, মােফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখের লাশ আমরা খুঁজে পাইনি। শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে জহীর রায়হান বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর মীরপুর অঞ্চলে নিখোঁজ হন। মীরপুর বধ্যভূমির খোজ পেয়েছিলাম স্বাধীনতার অনেক দিন পর, পুলিশের একজন ডিএসপি’র সহায়তায় পূর্ব পাকিস্তান সড়ক পরিবহন সংস্থার যে মাটি লেপা বলে বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে। যাওয়া হয়েছিল সে বাসের ড্রাইভারকে টাঙাইলের গ্রামাঞ্চল থেকে ঢাকায় এনে তার। সাহায্যে জায়গা সনাক্ত করে লাশগুলি আমরা তুলে নিয়ে আসি। এসব লাশের যথারীতি ময়না তদন্ত এবং দাফন-কাফন হয়। এদের নামাজের জানাজায় যোগদানের পর মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ আমাকে ক্ষুব্ধ ভাবে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও কেন এই সব বুদ্ধিজীবীরা ঢাকা ছেড়ে যাননি, একই প্রশ্ন মুনীর চৌধুরীর ধানমণ্ডির পৈতৃক নিবাসে সদ্য লন্ডন প্রত্যাগত বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী আমাকে করেছিলেন। আমি তাদের বােঝাতে চেষ্টা কবেছিলাম যে যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে কেউ নিজের বাড়িতে ছিলেন না, তাঁরা সবাই লুকিয়ে ছিলেন, সে সব স্থান থেকে তাদেরকে খুঁজে খুঁজে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
যা ভিন্দেশী পাকিস্তানী সৈন্যদের পক্ষে সম্ভবপর ছিল না, যা একমাত্র তাদের সহকর্মী, প্রতিবেশী বা ছাত্রদের দ্বারাই সম্ভবপর ছিল, এবং কার্যত হয়েছিল তা-ই। এটা কি ভাবা যায় যে, আদর্শগত মতবিরােধিতার জন্যে আমরা যারা এক সঙ্গে বছরের পর বছর কাজ করেছি সহকর্মী হিসেবে, এ ছাড়াও যে যারা আমার শিক্ষক বা ছাত্র ছিলেন এবং আমার সম্পর্কে জানেন, তিনি গোপনে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার অবস্থান খুঁজে বের কবে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলির কাছে একাডেমি ফর পাকিস্তান স্টাডিজ’ এর মাধ্যমে প্রদান করবে! তারপর ধরে নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে নিক্ষেপ করবে অথবা ‘আল-বদর’ লেলিয়ে দিবে বিরতিহীন রকেট ও বােমা বর্ষণ, গুলি বিনিময়, বিস্ফোরণ, সান্ধ্য আইন এবং নিপ্রদীপের মধ্যে ধরে নিয়ে যাবে। কারাে চোখ, কারাে বুক উপড়ে নিয়ে বা হাত কেটে দিয়ে বধ্যভূমিতে নিয়ে কোতল করবে শিয়াল, কুকুর, কাক, ‘শকুনের জন্য? নিজেদের গণ কবর নিজেদের দিয়ে। খুঁড়িয়ে সেখানে দাঁড় করিয়ে গুলি মেরে মৃত বা অর্ধমৃত অবস্থায় মাটি চাপা দেবে। অবিশ্বাস্য হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর এইরকম অবিশ্বাস্য মানবতাবিরােধী যুদ্ধাপরাধ চলেছে, যার কোন বিচার হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হলেও পরবর্তীতে আদালত বা রাজনৈতিক প্রভাবে তাদের অধিকাংশই পুনর্বাসিত হয়েছিলেন। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই ‘রমনাব মাঠে পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশে থেকেও আমরা যারা দৈবক্রমে বেঁচে গিয়েছিলাম, তারা বিজয় উৎসব করতে পারিনি। যুদ্ধ শেষ হলে আমাদের গোপন আস্তানা থেকে বেরিয়ে আসার পর আমাদের প্রধান ও একমাত্র কাজ ছিল।
আমাদের নিখােজ সহকর্মীদের অনুসন্ধান করা। পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও ১৬ই ডিসেম্বর রাজাকার আল-বদর বাহিনী আত্মসমর্পণ করেনি, মীরপুরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিহারী অঞ্চলে গিয়েছি মুনীর চৌধুরী, মােফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর খোজে। কোথাও লাশ পড়ে আছে শুনলে সেখানে ছুটেছি, তখনও আমার সহকর্মী মােহাম্মদ মনিরুজ্জামান বা সৈয়দ আকরম হােসেন নয় মাস কালের আত্মগােপন শেষে ঢাকা ফিরে আসেনি । প্রফেসর নীলিমা ইব্রাহিম ১৯৭১ সালে অপহৃত হতভাগ্য নারীদের উদ্ধারে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্ট বা সেনা ছাউনি সংলগ্ন বন্দী নারী শিবিরগুলি থেকে একাত্তরের সবচেয়ে হতভাগ্য মা বােনদের উদ্ধারে পাগলের মতাে ছােটাছুটি করছেন। এর মধ্যেও আমরা রায়ের বাজার বধ্যভূমি এবং মীরপুর গােরস্থান সংলগ্ন গণকবর থেকে ঢাকা মেডিকেল মর্গে লাশ এনে সনাক্ত করে তাদের দাফন-কাফন বা সত্ত্বারের ব্যবস্থা করেছি। এ ভাবেই আমাদের বিজয় উৎসব পালিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড আমাদের বিশেষত বাংলা বিভাগের শিক্ষক-ছাত্রদের মনে এমন গভীরভাবে দাগ কেটেছিল যে স্বাধীনতার পর আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্তপূর্ণ। হয়ে উঠেছিল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিরক্ষার ব্যবস্থা করা, এই ভাবনা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে আমরা মীরপুর বধ্যভূমিতে প্রাপ্ত সহকর্মীদের লাশ দাফন করি। প্রতি বছর ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসরূপে পালন করার উদ্যোগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ থেকেই নেয়া হয়েছিল। ১৯৭২ সালের ১৪ই ডিসেম্বর সকালে বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলা বিভাগ থেকেই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণ এবং জগন্নাথ হল গণ কবরে পুষ্প অর্পণ, মীরপুর-মােহাম্মদপুর বধ্যভূমিতে পুস্পার্ঘ্য প্রদানের মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন বা ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ পালন চালু হয়।। ১৯৭২ সালের ১৪ই ডিসেম্বর প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বাংলা বিভাগের উদ্যোগে, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলােচনা সভার আয়োজন করা হয় উপাচার্য প্রফেসর মােজাফফর আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধান অতিথি ছিলেন, রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। শহীদ বুদ্ধিজীবী বক্তৃতামালার প্রথম বক্তৃতা ছিল শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী সম্পর্কে, যা আমি দিয়েছিলাম এবং পরে বাংলা বিভাগ থেকে প্রকাশ করা হয়েছিল।
প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলােচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে প্রফেসর নীলিমা ইব্রাহিম, চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরী, প্রকৌশলীদের পক্ষ থেকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জহুরুল হক এবং সাংবাদিকদের তরফ থেকে এহতেশাম হায়দার চৌধুরী ভাষণ দিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালনের আগে ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ পালনের মাধ্যমে আমরা মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতাকে চিরস্থায়ী রূপ দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার মধ্য দিয়েই আমাদের কর্তব্য সমাপন হয়েছে এটা আমরা মেনে নেইনি। আমাদের সেদিন মনে হয়েছিল শুধু শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন নয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে আত্মাহুতি দেয়া বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিকে ভাস্বর করে রাখার জন্য প্রতীক চাই! ঐ মনােভাব নিয়েই ১৯৭৩ সালের নভেম্বর মাসের গােড়ার দিকে বাংলা বিভাগ থেকে প্রফেসর নীলিমা ইব্রাহিম, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, সৈয়দ আকরম হােসেন ও আমাকে নিয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধিদল কয়েকজন ছাত্র সহ তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত করে মীরপুর বা রায়েরবাজারে একটি শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করার অনুরােধ জানাই, তিনি সম্মত হন এবং এক মাসের মধ্যে মীরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মাণের নির্দেশ দেন, রায়েরবাজার বধ্যভূমি তখন ছিল পানির নীচে। ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু মীরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উপাচার্য প্রফেসর আবদুল মতিন চৌধুরী এবং বাংলা বিভাগের প্রধান প্রফেসর নীলিমা ইব্রাহিম ভাষণ দেন। বাংলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ছাড়াও পরিবেশন করে ‘মরণসাগর পাড়ে তােমরা অমর তােমাদের জয়। স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় দিবসের একদিন আগে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের তাৎপর্য যেন আমরা কখনাে বিস্মৃত না হই।
কলাভবনের প্রাঙ্গণের “অপরাজেয় বাংলা, একাত্তরের বীর মুক্তিযােদ্ধা ও শহীদদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কারণ সেদিন থেকে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘােষণা এবং বাঙালির সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ও সূচনা হয়। ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলার জনগণের সঙ্গে সশস্ত্র সংগ্রামে যােগদান করে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি সৈনিক, বৈমানিক ও নাবিকরা। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ইস্ট পাকিস্তান বাইফেলস্ ও পুলিশ বাহিনীর বাঙালির সদস্যগণ, তাদের সঙ্গে আনসার বাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র ও তরুণরা। আসলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল সশস্ত্র জনযুদ্ধ কারণ সর্বস্তরের বাঙালি নর নারী ও কিশােররা পর্যন্ত ছিলেন এই জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের সৈনিক কিন্তু এই যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি বেসামরিক সরকার কর্তৃক আর সে জন্যেই তা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযােগিতা পেয়েছিল। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা গৌরবময়, আলােচ্য গ্রন্থে সে সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানের একটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তুলে ধরা হলাে মাত্র।
সূত্র : স্বাধীনতা সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় – রফিকুল ইসলাম