You dont have javascript enabled! Please enable it! 1969 | অসহযােগ আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় - সংগ্রামের নোটবুক

অসহযােগ আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ পূর্ব বাংলায় অনুষ্ঠিত প্রথম সাধারণ নির্বাচনে বায়ান্নোর একুশের প্রতীক ২১-দফার ভিত্তিতে হক-ভাসানী-সােহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে গঠিত যুক্তফ্রন্ট তদানীন্তন ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে শােচনীয়ভাবে পরাজিত করার পর শেরে বাংলার নেতৃত্বে পূর্ব বাংলায় যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠিত হয়েছিল। ‘যুক্তফ্রন্ট সরকার’ পঞ্চাশ দিনের বেশি ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকার যুক্তফ্রন্ট সরকারকে ভেঙে দিয়েছিল। সে সুযােগ অবশ্য করে দিয়েছিল ‘৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর তড়িঘড়ি শেরে বাংলার নেতৃত্বে গঠিত কৃষক শ্রমিক দলের ক্ষমতা দখল। যুক্তফ্রন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ; কি যুক্তফ্রন্ট সরকারে আওয়ামী লীগ প্রথমে যােগ দেয়নি, যদিও ওই দলের ১৪৩ জন সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কৃষক শ্রমিক দলের ৪৮ জন, নেজামে ইসলামের ২২জন, গণতন্ত্রী দলের ১৩ জন আর খেলাফতে রব্বানী পাটির ছিলেন ২ জন। শেরে বাংলা সরকার গঠনের পর কলকাতায় গিয়ে কিছু দায়িত্বহীন কথাবার্তা বলে পাকিস্তান সরকারকে সুযােগ করে দিয়েছিলেন তার মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়ার। শেষ মুহুর্তে আওয়ামী লীগ যুক্তফ্রন্ট সরকারে যোগ দিলেও সরকারকে রক্ষা করতে পারেনি। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার আলােকে ‘৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আর কোনাে ফ্রন্ট গঠন না করে এককভাবে প্রাদেশিক পরিষদ ও জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল ৬-দফাকে গণভােটের ইস্যু করে। ‘৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মূল শক্তি ছিল ‘৬৯-এর গণআন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রসমাজ। অনেক ছাত্রনেতা ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। ১৯৭০ সালের ৭ ও ১৭ ডিসেম্বর সর্বত্র এবং মহাপ্রলয়ে বিধ্বস্ত এলাকায় ১৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ও পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের ২টি ছাড়া সবকটি আসন (পূর্ব পাকিস্তান থেকে) আর প্রাদেশিক পরিষদে ৩১০টির মধ্যে ২৯৮টি আসন আওয়ামী লীগ দখল করে। জাতীয় পরিষদ এবং প্রাদেশিক পরিষদে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় পাকিস্তানের কেন্দ্রে এবং পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের সরকার গঠন করার কথা। কিন্তু নির্বাচনের এই ফলাফল পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক ও আমলাতন্ত্রের সব   হিসাবকে ভুল প্রতিপন্ন করায় ষড়যন্ত্র শুরু হয় জেনারেল ইয়াহিয়া খান এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর দ্বারা। ‘৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারকে পূর্ব পাকিস্তানে গদিনসীন হওয়ার সুযােগ দিয়ে পাকিস্তানি শাসক ও শােষক চক্র যে ভুল করেছিল, ‘৭০ সালের নির্বাচনের পর সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি না করতে গিয়ে তারা আরাে বড় ভুল করে বসল । ১৯৭১ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের জঙ্গি শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া ৩ মার্চ আহত ‘জাতীয় পরিষদের ঢাকা অধিবেশন স্থগিত করার ঘােষণা দিলে সমগ্র পূর্ব বাংলা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ‘৬৯-এর গণআন্দোলনের চাইতেও বড় আন্দোলন তথা সংঘাতের সূত্রপাত হয় ।

জেনারেল ইয়াহিয়া খানের এই আকস্মিক ঘােষণার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী ঢাকার বিক্ষুব্ধ মানুষ পথে নেমে আসে। ঢাকা একটি বিক্ষুব্ধ নগরীতে পরিণত হয় জেনারেল ইয়াহিয়ার একটি সংক্ষিপ্ত বেতার ভাষণে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, দোকানপাট, কলকারখানা সব বন্ধ হয়ে যায় । চারদিকে শুধু সংগ্রামী জনতার জঙ্গি মিছিল, লক্ষ্য পল্টন ময়দান । হােটেল পূর্বাণীতে তখন আওয়ামী লীগ পরিষদ দলের জরুরি সভা চলছিল। হােটেলের সামনে জনসমুদ্র, বিক্ষুব্ধ জনতা দিকনির্দেশনা চায়। বঙ্গবন্ধু সভা থেকে বেরিয়ে এসে জনতাকে সংযত করার চেষ্টা করেন। তিনি বিক্ষুব্ধ জনতাকে ধৈর্য। না হারিয়ে পরিস্থিতি মােকাবেলার প্রস্তুতির আহ্বান জানান। কিন্তু অধীর জনতা অবিলম্বে স্বাধীনতা ঘােষণার দাবি জানাতে থাকে। ওইদিন বিকেলে পল্টন ময়দানে এক স্বতঃস্ফুর্ত বিরাট জনসভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা তােফায়েল আহমেদ, সিরাজুল আলম খান, আ, স, ম. আবদুর রব, নূরে আলম সিদ্দিকী প্রমুখ ছাত্রনেতা বক্তৃতা করেন। তারা জনসাধারণকে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ও নির্দেশমতাে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানান; কিন্তু ক্ষুব্ধ জনতা অবিলম্বে স্বাধীনতা ঘােষণার দাবি জানাতে থাকে। বঙ্গবন্ধু ওইদিন সন্ধ্যায় হােটেল পূর্বাণীতে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কর্তৃক জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি মঙ্গলবার। টাকা নগরীতে, বুধবার সারা দেশে হরতাল এবং ৭ মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে জনসভায় পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচির রূপরেখা দেয়ার ঘােষণা দেন। ২ মার্চ ঢাকায় পূর্ণ দিবস হরতাল পালিত হয়। জঙ্গি মিছিলে আর স্বাধীনতার স্লোগানে ঢাকার আকাশ-বাতাস। মুখরিত হতে থাকে রাতের পর দিন, দিনের পর রাত। ২ মার্চ ঢাকায় সর্বাত্মক হরতাল পলিনের সময় ফার্মগেটে সামরিক বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৯ ব্যক্তি হতাহত হয়েছিল । অপরদিকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের পদ থেকে ভাইস অ্যাডমিরাল আহসানকে অপসারণ এবং সামরিক আইন প্রশাসক লে. জেনারেল ইয়াকুব খানকে গভর্নরের দায়িত্বভারও দেয়া হয়। তবে এই নিয়ােগ ছিল কয়েকদিনের জন্য। কারণ বেলুচিস্তানের কসাই নামে পরিচিত জেনারেল টিক্কা খান ৭ মার্চ তার স্থলাভিষিক্ত হন। 

১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবন প্রাঙ্গণে এক ঐতিহাসিক সভায় প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সভা ডাকা। হয়েছিল বটতলায় কিন্তু অভূতপূর্ব জনসমাগমের কারণে সভামঞ্চ কলাভবন গাড়ি  বারান্দায় নিয়ে সেখান থেকে মাইকযােগে ‘অবিরাম স্বাধীনতার শ্লোগান দেয়া হচ্ছিল। সকাল পৌনে দশটায় ডাকসু ভিপি আ.স.ম. আবদুর রব মাইকযােগে সভায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। সভার শুরুতে ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী সমবেত ছাত্রদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও নির্দেশ অনুযায়ী স্বাধীনতার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ গ্রহণ করান। সভায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ এবং ‘ডাকসু সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন বক্তৃতা করেন। এ সভাতেই সর্বপ্রথম লাল-সবুজ জমিনের পটভূমিকায় লাল সূর্যের বৃত্তে সোনার বাংলার মানচিত্র সংবলিত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ডাকসুর ভিপি আ, স. ম. আবদুর রব। সভায় অসহযোগ আন্দোলন শুরু এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশক্রমে স্বাধীনতার সংগ্রাম পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভাশেষে তােফায়েল আহমেদ, নূরে আলম সিদ্দিকী, আ, স, ম, আবদুর রব, শাজাহান সিরাজ, আবদুল কুদুস মাখনের নেতৃত্বে এক বিরাট শোভাযাত্রা স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে স্বাধীনতার স্লোগান দিতে দিতে বায়তুল মােকাররম পর্যন্ত যায়। ২ মার্চ রাতে বেতার ঘােষণার মাধ্যমে হঠাৎ ঢাকা শহরে কারফিউ জারি করা হয়। সান্ধ্য আইন জারির ওই ঘোষণা প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ছাত্রাবাস, শ্রমিক, কাঁচাবাজার, বস্তি এলাকা থেকে ছাত্র-জনতা কারফিউর বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ শ্লোগান দিতে দিতে রাস্তায় নেমে আসে এবং কারফিউ ভঙ্গ করে সারা রাত বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তাদের স্লোগান ছিল-‘সান্ধ্য আইন মানি না’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরাে বাংলাদেশ স্বাধীন করাে’, ‘তােমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ, জয় বাংলা’। ঢাকা শহরময় সান্ধ্য আইন ভঙ্গ এবং অসংখ্য ব্যারিকেড নির্মিত হয়। ডিআইটি এভিনিউর মোড় এবং মর্নিং নিউজ পত্রিকা অফিসের সামনে রাত সাড়ে নয়টায় সামরিক বাহিনী জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। জনতার এক বিরাট মিছিল কারফিউ এবং সামরিক ব্যারিকেড ভেঙে গভর্নর হাউসের দিকে এগিয়ে গেলে সেখানেও সামরিক বাহিনী গুলি চালায়।

২ মার্চ সারা রাত শহরের বিভিন্ন অংশে কারফিউ ভঙ্গকারীদের ওপর সেনাবাহিনী ও পুলিশের গুলিবর্ষণে বহু হতাহত হয়। মার্চ রামপুরায় ব্যারিকেড তৈরি করতে গিয়ে সেনাবাহিনীর গুলিতে ১৮ বছরের জঙ্গি ছাত্রনেতা ফারুক ইকবাল শহীদ হন। ৩ মার্চ আন্দোলনের তীব্রতা আরাে বৃদ্ধি পায়। আগের রাতে শহীদদের লাশ জনতা মিছিল করে জহুরুল হক হলে নিয়ে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা সমবেতভাবে এই শহীদদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন। করেন। শহীদদের লাশ শোভাযাত্রাসহ আজিমপুর গোরস্থানে নিয়ে দাফন করা হয়। ওইদিন শহরে গুজব রটে যে সেনাবাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইন দখল করে নিয়েছে। ফলে হাজার হাজার মানুষ লাঠি, রড, দা, কুড়াল নিয়ে রাজারবাগে সমবেত হয়। অপরদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহত মুমূর্ষদের রক্ত দেয়ার জন্য জনতা ভিড় করে। ৩ মার্চ সকাল ১১টায় গণহত্যার প্রতিবাদে ড, মােজাফফর আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে কলাভবন বটতলায় এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইতােমধ্যে ঢাকার বাইরে  দেশের বিভিন্ন স্থানেও সান্ধ্য আইন জারি করা হলে সেসব স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটে । চট্টগ্রামে অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটলে সেখানে আন্দোলনরত বাঙালিদের ওপর সশস্ত্র অবাঙালিদের লেলিয়ে দেয়া হয় । ফিরােজ শাহ কলােনি, ওয়্যারলেস কলােনি, আমবাগান, পাহাড়তলী ও আশপাশের এলাকায় সারা দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রায় চারশ’ হতাহত হয়েছিল। ৩ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের বিভিন্ন পার্লামেন্টারি গ্রুপের। ১২জন নেতাকে ১৫ মার্চ ঢাকায় এক বৈঠকে যােগদানের আমন্ত্রণ জানান। এদের মধ্যে ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান, জুলফিকার আলী ভুট্টো, খান আবদুল কাইয়ুম খান, মিয়া মমতাজ দৌলতান, মওলানা মুফতি মাহমুদ, খান আবদুল ওয়ালী খান, মওলানা শাহ আহমদ নুরানী, আবদুল গফুর আহমদ, মােহাম্মদ জামাল কোরেফা, নুরুল আমীন, মেজর গোলদার ও মালিক জাহাঙ্গীর খান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘বন্দুকের মুখে প্রেরিত এই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ বিকেলে পল্টন ময়দানে এক বিশাল জনসভায় ৭ মার্চ পর্যন্ত আন্দোলনের কর্মসূচি ঘােষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে ছিল প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল, সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার ও জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত ট্যাক্স ও খাজনা দেয়া বন্ধ, নির্ভীকভাবে সংবাদপত্রে খবর পরিবেশন ইত্যাদি । এর মধ্যে যদি সরকারের মনােভাব পরিবর্তন হয়, তাহলে ৭ মার্চ রেসকোর্সের জনসভায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘােষণাৱ কথা তিনি জানান। ৩ মার্চ পল্টনের বিশাল জনসভায় যােগদানকারী লাখ লাখ মানুষ স্বাধীনতার ঘােষণা প্রত্যাশা করেছিল। আংশিকভাবে হলেও তা পূরণ করে স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক প্রচারিত স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঘােষণাপত্র” । ৩ মার্চ ১৯৭১ স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক প্রচারিত ঘােষণাপত্রে রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সােনার বাংলা আমি তােমায় ভালবাসি” গানটিকে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত’ ঘােষণা করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল ডাকসু ভিপি আ স ম আবদুর রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্স মাখন এবং ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ সমন্বয়ে। ৩ মার্চ পল্টনের জনসভায় স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঘােষণাপত্রটি পাঠ করেন শাজাহান সিরাজ। ঘােষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক এবং স্বাধীনতা আন্দোলন পরিচালনার জন্য। কর্মপন্থা ও আন্দোলনের ধারা এবং “জয় বাংলা’কে স্বাধীনতা সংগ্রামের আনুষ্ঠানিক শ্লোগান ঘােষণা করা হয়।

পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে লাখ লাখ মানুষের সামনে স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ওই ঘোষণাপত্র প্রচার করে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করার জন্য চাপ সৃষ্টি এবং স্বাধীনতার জন্য জনসাধারণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটিয়েছিল। ছাত্রসমাজের এই উদ্যোগের লক্ষ্য  ছিল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আপােসের পথে নয় সংগ্রামের পথে যেতে বাধ্য করা। ছাত্রসমাজ পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনাে ধরনের আপােস আলােচনার পুরােপুরি বিপক্ষে ছিল। লক্ষণীয় যে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযােগ আন্দোলনের মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং জাতীয় সঙ্গীত নির্ধারণ ও বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা সংগ্রামের সর্বাধিনায়ক ঘােষণা করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘৬৯-এর গণআন্দোলন এবং ‘৭০-এর অসহযােগ আন্দোলনের নেতাদের স্থির সিদ্ধান্ত ছিল যে, পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষ কোনাে অবস্থাতেই ‘৭০-এর নির্বাচনে ঐতিহাসিক রায় মেনে নেবে না। তারা আলােচনার নামে সময় ক্ষেপণ করবে এবং সর্বাত্মক সামরিক অভিযানের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করে পূর্ব বাংলার মানুষকে দমন করতে ব্যাপক আগ্রাসন চালাবে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমস্যা ছিল-আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সরাসরি সংঘাত, সংঘর্ষ ও সংগ্রামের পথে গেলে পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষ বিশ্বজনমতকে বিভ্রান্ত করার এবং বাঙালিদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের সংগ্রামকে বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আখ্যা দিয়ে তা দমন করার জন্য অভিযানকে বৈধতা প্রদানের সুযােগ পাবে। এমনি এক জটিল পরিস্থিতিতে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু রমনা রেসকোর্স ময়দানে তার ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের চতুর্থ দিনটি পূর্ণ হরতাল, বিক্ষুব্ধ শোভাযাত্রা, গায়েবানা জানাজা, সভা ও স্বাধীনতার শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। পূর্ব বাংলার সর্বত্র বেসামরিক শাসন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়ে।

অকার্যকর কারফিউ বা সান্ধ্য আইন তুলে নেয়া হলেও ঢাকা বিমান বন্দরে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। ঢাকা নগরীর সর্বত্র ব্যারিকেড রচনা চলতে থাকে, সকল সরকারিবেসরকারি অফিস-আদালত, সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প সংস্থা, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, বিমান, রেল, স্টিমার, লঞ্চ, বাস, ব্যাংক, বীমা, স্টক এক্সচেঞ্জ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওইদিন বন্ধ থাকে। ৪ মার্চ বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতিতে শােষণ ও ঔপনিবেশিক শাসন বজায় রাখার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানাের আহ্বানে বাংলাদেশের প্রতিটি নারী, পুরুষ ও শিশু যে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দিয়েছে, সে জন্য বীর জনগণকে অভিনন্দন জানান। পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন ওইদিন এক জরুরি সভায় বাংলার জনগণের সার্বিক মুক্তি আদায়ের গণআন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘােষণা করে। ওইদিন বেতার ও টেলিভিশন শিল্পীরা এক বিবৃতিতে জানান যে, তারা ২ মার্চ থেকে বেতার ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান বর্জন করছেন। তারাও এ সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা ঘােষণা করেন। ৫ মার্চ টঙ্গী শিল্প এলাকায় সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণের ফলে বহু শ্রমিক হতাহত হয় ফলে সমগ্র টঙ্গী শিল্প এলাকা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষুব্ধ জনতা টঙ্গীর কংক্রিট ব্রিজের পাশের কাঠের সেতুটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়, বড় বড় গাছ ফেলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে, তারা রাস্তা বন্ধ করে দেয়- যাতে সামরিক বাহিনী চলাচল  করতে না পারে। চট্টগ্রামে ইতােমধ্যে নিহতের সংখ্যা ২২২ জনে উন্নীত হয়। রাজশাহী এবং যশােরেও সামরিক বাহিনীর গুলিবর্ষণে বহু নিরস্ত্র মানুষ প্রাণ হারায়। ৫ মার্চ ঢাকায় ছাত্রলীগের উদ্যোগে এক জঙ্গি লাঠি মিছিল বের করা হয়। ডাকসু সহ-সভাপতি আ, স, ম, আবদুর রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদুস মাখন ও অন্যান্য ছাত্রনেতা বাঙালির সংগ্রামের প্রতীক লাঠি নিয়ে শােভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন। ওইদিন ঢাকার লেখক ও শিল্পীরা জনগণের সংগ্রামে একাত্মতা ঘােষণা করেন এবং শহীদ মিনারে ড, আহমদ শরীফের সভাপতিত্বে এক সভায় মিলিত হয়ে স্বাধীনতার। শপথ নেন। ৬ মার্চ পাকিস্তানের জঙ্গি শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে বাংলাদেশের বিক্ষুব্ধ মানুষকে দুষ্কৃতকারী আখ্যা দিয়ে জাতীয় পরিষদের স্থগিত অধিবেশন ২৫ মার্চ আহ্বান করেন। এটা ছিল ইয়াহিয়া খানের ভাওতাবাজি । মূলত গণহত্যার উদ্দেশ্যে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র আনতে সময় নেয়াব। জন্যই এই কৌশল অনুসৃত হচ্ছিল।

৭ মার্চ ১৯৭১, রমনা রেসকোর্স ময়দান জনসমুদ্র। মুহুর্মুহু গর্জনে ফেটে পড়ছে। জনসমুদ্র। লাখ লাখ কণ্ঠে একই আওয়াজ, স্বাধীনতার বজ্রশপথ । বাতাসে উড়ছে। অসংখ্য পতাকা, সােনার বাংলার মানচিত্র শােভিত লাল সূর্যের পতাকা, শ্লোগানের সঙ্গে সঙ্গে উত্থিত হচ্ছে বাঙালির সংগ্রামের প্রতীক অসংখ্য বাঁশের লাঠি। মঞ্চে মাইকে শ্লোগান দিচ্ছেন স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা আ. স. ম. আবদুর রব, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আবদুল কুদুস মাখন। স্লোগান দিচ্ছেন। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান আবদুর রাজ্জাক। লাখ লাখ কণ্ঠে ফিরে আসছে। শ্লোগানের জবাব বজ্রনির্ঘোষে । শ্লোগানে শ্লোগানে উদ্দীপ্ত হচ্ছে জনসমুদ্র, ‘জয় বাংলা’, ‘আপােস না সংগ্রাম- সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘পরিষদ না রাজপথ-রাজপথ রাজপথ, বীর বাঙালি অস্ত্র ধরাে বাংলাদেশ স্বাধীন করাে’, ‘তােমার দেশ আমার দেশ-বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ । বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু সভামঞ্চে এসে উপস্থিত হন এবং তার ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন, যে ভাষণের মূল কথা ছিল-‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ৭ মার্চের ওই জনসভায় বঙ্গবন্ধুর ওই ঐতিহাসিক ঘােষণা ছিল বস্তুত পক্ষে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতির আহ্বান। সে জন্যই তার ভাষণের মধ্যে তিনি বলেছিলেন, এরপর যদি একটি গুলি চলে, এরপর যদি আমার লােককে হত্যা করা হয়তােমাদের কাছে আমার অনুবােধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা। তােমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু-আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তােমরা বন্ধ করে দেবা। আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব।…এই দেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা চলছে, বাঙালিরা বুঝে-শুনে কাজ করবা। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে  তুলুন এবং আমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরাে দেবাে, এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলী।

মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনটি পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণ বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করেছে স্বাধীনতার সশস্ত্র সংগ্রামে, বঙ্গবন্ধু উচ্চারিত স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে মাতৃভূমির শৃঙ্খল মােচনে প্রাণ দিয়েছে অগণিত মুক্তিসংগ্রামী। ৭ মার্চ শেখ সাহেবের রমনা ময়দানের ভাষণ ঢাকা বেতার থেকে সরাসরি সম্প্রচার করার কথা ছিল। বস্তুত বেতার সম্প্রচারের আয়ােজনও হয়েছিল, কিন্তু সামরিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রতিবাদে বেতারের কর্মচারীরা বেতার ভবন ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। ফলে ঢাকা বেতারের প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। সামরিক কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে ৮ মার্চ সকালে শেখ সাহেবের ধারণকৃত ভাষণ। প্রচার করার অনুমতি দেয়। ফলে পুনরায় বেতারের সমপ্রচার শুরু হয়। বস্তুত ২ থেকে ২৫ মার্চ সংবাদপত্র এবং বেতার ও টেলিভিশন আওয়ামী লীগের নির্দেশমতােই পরিচালিত হচ্ছিল। বেতার ও টেলিভিশনে পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত সম্প্রচার ও জাতীয় পতাকা প্রদর্শন বন্ধ করে দেয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশের সর্বত্র কালো পতাকা উত্তোলনের আহ্বান জানায়।

২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক আগ্রাসন শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত বাংলাদেশে আর কোথাও পাকিস্তানি পতাকা ওড়েনি। ২৩ মার্চ দেশব্যাপী প্রত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার প্রতিকৃতি প্রকাশ ও বাংলাদেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর আগ্রাসনের অন্যতম টার্গেট ছিল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও কালাে পতাকা। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ লে. জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খানকে অপসারণ এবং জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও গভর্নর নিযুক্ত করা হয়, যদিও কোনাে বিচারপতি তাকে গভর্নরের শপথ বাক্য পাঠ করাতে অস্বীকৃতি জানান। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি আগ্রাসন শুরু হওয়ার সময় জেনারেল নিয়াজী। ছিলেন পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর প্রধান আর জেনারেল টিক্কা খান গভর্নর। ১৯৭১ সালের ৯ মার্চ জহুরুল হক হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অবিলম্বে জাতীয় সরকার গঠনের আহ্বান জানানাে হয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের স্বাধীন বাংলাদেশ’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণাপত্র অনুমােদন করা হয়। ১৪ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশে ঢাকা নগরীর বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি চেকপােস্ট বসানাে হয়, যাতে পাকিস্তানে সম্পদ পাচার এবং সামরিক বাহিনীকে রসদ সরবরাহ করা না যায় । ঢাকা নগরী তখন নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশে । 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্বের মুক্তিকামী জনগণের সমর্থন কামনা এবং আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন ও চীনের কাছে তাদের সরবরাহকৃত সমরাস্ত্র দ্বারা বাঙালি গণহত্যা প্রয়াস বন্ধ করার আহ্বান জানানাে হয়। পাকিস্তান থেকে সামরিক বাহিনী ও অস্ত্রশস্ত্র বােঝাই বিমান চলাচল বন্ধের জন্যও প্রতিবেশী দেশগুলাের প্রতি আবেদন করা হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ওই সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুদ্ধিজীবীর কাছে অসংখ্য তারবার্তা প্রেরণ করে তাতে পাকিস্তানি সামরিক চক্রের গণহত্যা চক্রান্তের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ এবং আসন্ন গণহত্যাযজ্ঞ থেকে পাকিস্তানিদের নিবৃত্ত করার জন্য অনুরােধ জানানাে হয়েছিল। জেনারেল ইয়াহিয়া খান একদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলােচনার প্রহসন; অন্যদিকে পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক সামরিক অভিযান, জেনােসাইড বা গণহত্যা এবং বাঙালি ‘এথনিক ক্লিনসিং’-এর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কাজ সম্পূর্ণ করতে থাকেন।

সূত্র : স্বাধীনতা সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় – রফিকুল ইসলাম