১১ই মার্চ ১৯৪৮ সালে অনুষ্ঠিত হরতাল সম্পর্কে সরকারি বক্তব্য
১১ই মার্চের এই ঘটনাবলী সম্পর্কে পূর্ববঙ্গ সরকারের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় :
বাংলাকে কেন্দ্রের সরকারি ভাষা না করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে ১১ই মার্চ আহুত সাধারণ ধর্মঘটকে কার্যকর করবার জন্যে আজ ঢাকাতে কিছু সংখ্যক অন্তর্ঘাতক এবং একদল ছাত্র ধর্মঘট করার চেষ্টা করে। শহরের সমস্ত মুসলিম এলাকা এবং অধিকাংশ অমুসলিম এলাকাগুলাে ধর্মঘট পালন করতে অসম্মত হয়। শুধুমাত্র কিছু কিছু হিন্দু দোকানপাট বন্ধ থাকে। শহরের এবং আদালতের কাজকর্ম সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিল। রমনা এলাকায় অবশ্য ধর্মঘটকারীরা কিছু কিছু অফিসের লােকদেরকে কাজে যােগদানে বাধা দেয়। পিকেটিং করার উদ্দেশ্যে ছাত্রদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এক একটি দল সেক্রেটারিয়েট, হাইকোর্ট এবং অন্য কতকগুলাে অফিসের সম্মুখে সমবেত হয়। এদের মধ্যে অনেককে শান্তভাবে স্থান ত্যাগ করতে সম্মত করা গেলেও অন্যান্যেরা আক্রমণােদ্যত হয়ে সেখানে অবস্থিত পুলিশ ও অফিস যােগদানে ইচ্ছুক কিছু সংখ্যক লােকজনের উপর ইটপাটকেল ছোঁড়ে এবং অন্যান্য হিংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু করে। এর ফলে পুলিশ লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয় এবং ৬৫ জনকে গ্রেফতার করে। এক সময় দুবার বন্দুকের ফাঁকা আওয়াজ পর্যন্ত করতে হয়। বিক্ষোভ প্রদর্শন ও পুলিশ তৎপরতার ফলে মােট চৌদ্দ ব্যক্তি আহত হন এবং তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে কেউই গুরুতরভাবে অথবা গুলির আঘাতে আহত হননি। খানাতল্লাসীর ফলে যে সমস্ত প্রমাণাদি এখন সরকারের হস্তগত হয়েছে তার থেকে স্পষ্টই বােঝা যায় যে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ এবং প্রশাসনিক হতবুদ্ধিতা সৃষ্টি করে পাকিস্তানকে খর্ব করার উদ্দেশ্যে একটা গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।
সূত্রঃ পূর্ববাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি : বদরুদ্দীন উমর। পৃষ্ঠা ৮২