You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.12.08 | বাংলার বাণী সম্পাদকীয় | ভারতের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর | কামধেনু মরিচ! | শেখ মণি - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ৮ই ডিসেম্বর, রোববার, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৩৮১

ভারতের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী ওয়াই, বি, চ্যবন গতকাল বাংলাদেশে এসেছেন তিন দিনের সরকারি সফরে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভের পর শ্রী ওয়াই, বি, চ্যবনের এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা মিলিত হবেন। তিনি রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ভারত এবং বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করবেন। তবে বাণিজ্য সংক্রান্ত আলোচনা প্রাধান্য পাবে বলে জানা গেছে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কিত আলাপ-আলোচনা এবং উভয় দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে ভারতের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী শরণ সিং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন। সর্বোপরি এতদিন ভারত-বাংলাদেশের মধ্যেকার সকল আবশ্যকীয় বিষয়ে সরাসরি তদারকি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজও তারাই দুই দেশের প্রয়োজনীয় বিষয়ের উপর আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। বস্তুতঃ আমাদের মুক্তি সংগ্রামের ঐতিহাসিক পাদপীঠে দাঁড়িয়ে ভারতের সঙ্গে যে সম্পর্ক অনিবার্যভাবে গড়ে উঠেছিল তাঁর বাস্তবিক মূল্যায়ন স্বাধীনতা-উত্তরকালে উভয় দেশের জনগণই করতে পেরেছিল। সেই মহা মূল্যবান স্মৃতিবিজড়িত সৌহার্দ্যকে আরো বাস্তবমুখী করে গড়ে তোলার দায়িত্ব উভয় দেশের সরকারের।
স্বাধীনতা লাভের তিন বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। ইতিমধ্যে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার পথ আরো সম্প্রসারিত হয়েছে। নতুন নতুন ক্ষেত্রে যেমন সম্পর্ক গড়ার পথ উন্মুক্ত হয়েছে তেমনি দু-একটি ক্ষেত্রে সমস্যাও দেখা দিয়েছে। বৃহত্তর ও পরিবেশের সম্পর্ক এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে গেলে কিছু কিছু সমস্যার উদ্ভব হওয়া মোটেই অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে আমাদের বিরাট সীমান্ত রয়েছে। এধরণের প্রতিবেশী দেশের মধ্যে একটি ছোট বড় সমস্যার সৃষ্টি সব সময়েই হয়ে থাকে। কিন্তু সে কারণে প্রতিবেশীর সঙ্গে রচিত মূল বন্ধুত্বের কোনো ব্যাঘাত ঘটতে পারে না। সে ক্ষেত্রে গভীর আন্তরিকতা এবং বাস্তব কর্মসূচি নিয়ে উভয় দেশের নেতৃবৃন্দকে উদ্ভুত সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। স্বাধীনতা লাভের অব্যাবহিত পরেই ভারত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। যখন বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশের স্থায়িত্ত বা টিকে থাকা না-থাকা নিয়ে পর্যালোচনা করছিল তখন ভারতে এগিয়ে আসে আমাদের বাণিজ্য ক্ষেত্রে সফল করে তোলার জন্য। নিতান্তই বাণিজ্যিক নিয়ম-কানুনের উপরে নির্ভর করে উভয় দেশ পণ্য আদান-প্রদানের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। নানা প্রতিকূলতার দরুন সে সকল চুক্তি সম্পূর্ণভাবে কার্যকরী করা সম্ভব না হলেও উভয় দেশের নেতৃবৃন্দ বরাবর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সমস্যার সঠিক সমাধানের জন্য। বিভিন্ন ক্ষেত্র উদ্ভূত প্রতিকূলতাকে উত্তরণ করে উভয় দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি কার্যকর হয় তার জন্য যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ভারত-বাংলাদেশ দুটিই মূলতঃ বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি কাটিয়ে উকে একে সম্পূর্ণভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব দেশের সরকারের। বস্তুতঃ বাণিজ্যিক ঘাটতি দেশগুলোতেই নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বাণিজ্যচুক্তি গুলো যথার্থভাবে কার্যকর হয় না। অত্যন্ত সতর্কভাবে যদি পরিচালনা করা যায় তাহলে আমাদের বিশ্বাস উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি মূলক সমস্যা গুলোর সমাধান হতে পারে। স্মরণ করা যেতে পারে যে, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে আমাদের মুক্তি যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্ক ছিল তা হচ্ছে -প্রতিরোধমূলক বিরোধধর্মী। উভয় দেশের জাতীয় পরিকল্পনা রচিত হতো তাও ছিল একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। বাংলাদেশের অভ্যূত্থান হবার পর অতীতের ২৫ বছরের প্রতিদ্বন্দ্বি মূলক প্রবনতার রাতারাতি অবসান হয়তো হবে না। এর জন্য উভয় দেশের নেতৃবৃন্দকে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করে অগ্রসর হতে হবে।
উভয় দেশের আন্তরিক সহযোগিতার মাধ্যমে যেমন চোরাচালান রোধ করতে হবে তেমনি পানি সম্পদ বন্টনের বিষয়টিও নিষ্পত্তি করতে হবে। ফারাক্কা প্রশ্নে উভর দেশের নেতৃবৃন্দকে আরো বাস্তবমুখী পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। এই বিরাট সমস্যাটি সমাধানের জন্য ক্রুগ মিশনের রিপোর্টে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রচেষ্টার উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। বস্তুতঃ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের যৌথ প্রচেষ্টায় কাজ করা হলেও তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বেলায় তা করা হয়নি।
স্বাধীনতার পূর্বে আমাদের দেশের পাটের চাহিদা ছিল বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। ভারতের সঙ্গে যেহেতু বৈরীভাব সেহেতু পাটের ক্রেতা হিসেবে তারা তৎকালে এখানকার ব্যবসায়ীদের নিকট ততটা গ্রহনীয় ছিল না। ফল এ পাট ব্যবসাও শিল্প সম্পূরক না হয় উল্টো পথে অগ্রসর হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী ওআই, বি, চ্যবন বাংলাদেশে এসেছেন। আমরা আশা করছি তিনি পূর্বাপর সকল বিষয়ে পর্যালোচনা করে একটি কার্যক্রম গ্রহণ করতে সাহায্য করবেন। বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দও সহযোগিতার প্রশ্নে এ ব্যাপারে আগ্রহী বলে আমাদের বিশ্বাস। সর্বোপরি ভারত-বাংলাদেশের মধ্যেকার সকল বিষয়াদি পর্যালোচনা ও সমস্যার সমাধানের জন্য উভয় দেশের রাজনৈতিক নেতাদের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণই সবচেয়ে বেশি কার্যকরী এবং গঠনমূলক হতে পারে বলে আমাদের ধারণা।

কামধেনু মরিচ!

এক টাকা সেরে চার আনা এক পোয়া মরিচ বাড়িতে এনে বরাবরই যার অর্ধেকটাই অপচয় হয়েছে, সেই কাঁচামরিচ যখন মার্কেটে হঠাৎ করে অমূল্যধন হয়ে গেল-সরাসরি যেয়ে মাথায় বাড়ি পড়ল তখন অপচয় কারীদের অর্থাৎ আমাদের মত ছাপোষা মানুষের।
সেই মরিচের উপরেই সবচাইতে বড় টেক্কা মেরেছেন বরিশাল জেলার খেপুপাড়ার মেনাজ উদ্দিন বেপারী। বাংলার মাটিতে বোম্বাই জাতের চারা লাগিয়ে একটা গাছের মরিচ বেঁচে তিনি পেয়েছেন মোট ৯০০ টাকা। এ যেন কামধেনুর দুধ দেয়া। গাভী দুধ দিয়েই চলেছে-দুধের অফুরন্ত উৎসের বুঝিবা শেষ নেই, মেহনাজ উদ্দিনের গাছটির ওই একই অবস্থা। ৯০০ টাকার মরিচ বিক্রি হয়েছে গাছের পাতার ডগায় ডগায় আরো প্রাপ্তির সম্ভাবনা।
শুনেছি রাজধানীতে জহুরুল হক হলের অঙ্গনে এক একর জায়গায় ছাত্ররা মরিচ গাছ লাগিয়েছে। জানিনা জাতে দেশী কি বোম্বাই। যদি বোম্বাই হয়, এ যাবৎ হলের ছাত্ররা তো বটেই- সূর্যসেন, সলিমুল্লাহ, রোকেয়া, শামসুন্নাহার প্রত্যেকের ডাইনিং হলে কাঁচা লঙ্কার সরাসরি যাবে একথা নিশ্চিত করে বলা যায়। এবং ওই কাঁচা লঙ্কার সূত্রে প্রতিটি হলে ছাত্রদের সখ্যতা বাড়বে। তাহলে খোদ রাজধানীতে সবার ঘরে ঘরে একটি করে ওই ধরনের মরিচ গাছ লাগালে ১৬ টাকাতে উঠা কাঁচা লঙ্কার ইজ্জত কোথায় যেয়ে পৌঁছাবে তা কি ভেবে দেখেছেন? ইদানিং খবর পাচ্ছি প্রত্যেকের বাড়িতে বাড়িতে টবে মরিচ গাছ লকলকিয়ে উঠছে। শীতের হিমেল হাওয়ায় সেগুলো তরতরিয়ে বড় হচ্ছে। যারা এখনও পতিত জায়গা আর টবে কাজ শুরু করেনি উপযুক্ত সময়ের সদ্ব্যবহার বরিশালের মেনাজ উদ্দিন বেপারীর অনুকরণে একটি করে মরিচ গাছ লাগান, আলুভর্তা দশটা বোম্বাই মরিচ মচমচিয়ে ভাঙতে কি আর গিন্নির রক্তচক্ষুর কথা ভাবতে হবে? মিটসেফ আর খাবার টেবিলে কিংবা লবনের পাত্রে কাঁচা লঙ্কার সাবেক ট্র্যাডিশন বইয়ে দিতে বাঁধা কোথায় থাকবে? সাবাস মেনাজ উদ্দিন বেপারী! সাবাস ব্যাপারীর কামধেনু মরিচ!

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন