বাংলার বাণী
ঢাকা: ১৬ই জুন, সোমবার, ২রা আষাঢ়, ১৩৮১
পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মাননীয় রাজ অতিথি রাষ্ট্রপতি শ্রী ভি তি গিরি বর্তমানে বাংলাদেশে সফরে এসেছেন। বাংলাদেশ ও ভারত এই দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র কাছ থেকেও এতোকাল ছিল দূরে। আড়াই বছর হল সে বাধা অপসারিত হয়েছে। বন্ধুসুলভ স্বাভাবিক দৃঢ়তা ও সমঝোতার ভিত্তিতে এখন ভাবের আদান-প্রদান ও সহযোগিতার আদান-প্রদান হয়েছে সহজতর। দুটি বন্ধু দেশই এখন পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরস্পরকে সর্বোচ্চ সাহায্য ও সহযোগিতা দিতে আগ্রহী। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সহ অবস্থানের ভিত্তিতে পারস্পরিক সহযোগিতা একান্তই প্রয়োজন। শান্তি ও প্রগতির জন্য অপরিহার্য।
সফররত রাষ্ট্রপতির সম্মানার্থে রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় রাষ্ট্রপতি জনাব মোহাম্মদ উল্লাহ সেই দিকে ইঙ্গিত করে বলেন যে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে জনগণের প্রগতি এবং এই এলাকার শান্তি স্থাপনের বৃহত্তর পটভূমিতে আরও একধাপ অগ্রগতি হিসেবে দেখা যেতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অন্বেষণেই যে সকল নীতিতে প্রাধান্য লাভ করবে সে ব্যাপারেও তিনি জোর দিয়ে বলেন। শান্তির সন্ধান আর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অন্বেষণকে তিনি পরস্পরের সম্পূরক বলে উল্লেখ করেন।
শ্রী ভি তি গিরির সম্মানার্থে আয়োজিত ভোজসভায় ভাষণদানকালে মাননীয় অতিথি বাংলাদেশ ও তার সম্ভাবনাময় সমৃদ্ধির প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশ ও ভারত সমতা ও পারস্পারিক কল্যাণ এর ভিত্তিতে দু’দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়িয়ে তুলবে। ওই প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে সেই কারণেই বাণিজ্য থেকে শিক্ষা পর্যন্ত ব্যাপক কর্মক্ষেত্রে এ দুটি দেশ সহযোগিতার বিষয়টি একযোগে পরীক্ষা করে সেই সহযোগিতার ভিত্তিক রচনা করা হচ্ছে।
একথা সত্য যে সহ-অবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে পারস্পরিক বন্ধুত্ব সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়। এবং এর সম্পর্ক হঠাৎ সৃষ্টি হয় না। নীতি আদর্শ ও মানবতার ভিত্তিতে অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গতভাবে আন্তরিক সহানুভূতি রেখে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধার সম্পর্কটি ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে হয়। সমগ্র জাতি যেদিন ঘোরতর সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত ছিল তখন বাংলাদেশের পক্ষে ভারতকে শ্রদ্ধা সহযোগিতাও সাহায্যের নিদর্শন রেখেছিল তা অতুলনীয়। রাষ্ট্রপতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন ও কৃতজ্ঞতা জানান।
আমরা জানি দুটি দেশের পথ নির্দেশক মৌল নীতিতে মিল রয়েছে। জোট নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান শুধু নয় বিশ্ব শান্তি ও মানবাধিকারের প্রশ্ন দুটি দেশ সমান শ্রদ্ধাশীল। আত্মশক্তিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে ক্রমশঃ স্বয়ম্বরতার দিকে এগিয়ে যাওয়াই দুটি দেশের প্রধানতম লক্ষ্য। আর এই লক্ষ্যের পর আসা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ দিক পারস্পারিক সৌহার্দ্যময় সম্পর্কে ক্রমোন্নতির মধ্যে ঘোষণাই স্পষ্টতর হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাম্প্রতিক ভারত সফর এবং মাননীয় রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সফর তারই ফলশ্রুতি।
সমগ্র বিশ্ব আজ রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক অস্থিরবস্থা ও শান্তির প্রশ্নে চিন্তাকুল। বৃহত্তর পৃথিবীর অধিবাসী হিসেবে যদি বাংলাদেশ ও ভারত শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ভিত্তিতে দেশীয় জনগণের কল্যাণ কামনায় অর্থনৈতিক উন্নতির সোপান গুলি অতিক্রম করতে পারে সমগ্র বিশ্বের জন্য তা হবে দৃষ্টি স্থাপনকারী মহৎ কর্ম। তেমনতর কল্যাণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি স্বার্থে যেন দুটি দেশ তাদের নিঃস্বার্থ বন্ধুকে কাজে লাগাতে পারে আমরা সেই দিকে চেয়ে আছি।
ইটালির টলটলায়মান কোয়ালিশন সরকার
পশ্চিম ইউরোপের একটি দেশে ইটালি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কি জিনিস তা ইতালি ও জনগণের প্রত্যক্ষ করতে পারেনি। এক মন্ত্রিসভা গঠিত হলো পাশেই মন্ত্রিসভা কতদিনে পদত্যাগ করবে সে নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেল। বিক্ষোভ শোভাযাত্রা আর নির্বাচন তো প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। যে কোনো ইস্যু নিয়ে গণভোট গ্রহণের রেওয়াজ সেখানে আছে। এইতো কদিন আগেই বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে সেখানে গণভোট অনুষ্ঠিত হলো। সরকারি কোয়ালিটি অন্যতম অংশীদার সোস্যালিস্ট পার্টি বিবাহবিচ্ছেদের স্বপক্ষে জনমত গড়ে তুলল আর অন্য কোন সিকদার ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রীট লড়ল বিবাহ-বিচ্ছেদের বিরুদ্ধে। ভোটে হেরে গেল তারা। তারপর থেকেই শুরু হলো মন কষাকষি।
মুদ্রাস্ফীতি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সরকারের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ সৃষ্টি করে চলেছিল। ইতিমধ্যে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে শতকরা ১২৬ ভাগ। সাধারণ মানুষ জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে গড়ে উঠেছে অসন্তোষ ইটালিতে তাই রাজনৈতিক অস্থিরতা দিনের-পর-দিন দানা বেঁধে উঠছে সারা পশ্চিমী দুনিয়ায় অস্থিরতা। ব্রিটেনে নির্বাচন হয়েছে দুর্বল কোয়ালিশন সেখানে ক্ষমতায় বসেছে। ফ্রান্সে এসেছে নতুন প্রেসিডেন্ট গোয়েন্দা কেলেঙ্কারি ছাড়াও পশ্চিম জার্মানির চ্যালেন্সর উইলি ব্রাণ্টের পদত্যাগের পিছনে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক দুরবস্থাও কম দায়ী নয় বলে ওয়াকিবহাল মহল মত প্রকাশ করেছেন। কানাডার ট্রুডো সরকার পার্লামেন্টে অনাস্থার সম্মুখীন হয়েছেন। সেখানেও নতুন করে নির্বাচন হবে চারিদিকে যেমন একটা পালাবদলের পালা। ইটালি কিতা থেকে দূরে সরে থাকতে পারবে?
তিন পার্টের কোয়ালিশন সরকার সপ্তাহ খানেক আগে ইতালির প্রেসিডেন্ট এর কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করেছিলেন। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে তিনি সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি। গত বৃহস্পতিবার রাত্রে প্রেসিডেন্ট গিওভানি ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেট সোশালিস্ট ও সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট কাছে আবেদন রেখেছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এ যাবৎ দেশে যত অর্থনৈতিক গোলযোগ দেখা দিয়েছে তার মধ্যে বর্তমান অবস্থায় সবচাইতে মারাত্মক। এ সময় নিজেদের বিবাদ বিসস্বাদ মিটিয়ে ফেলাই ভালো।
প্রেসিডেন্টের এই আবেদনের প্রেক্ষিতে কোয়ালিশনের তিন দল বৈঠকে মিলিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বৈঠকে হয়তো বর্তমান সরকারের আয়ুষ্কাল বাড়ানোর ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা হবে। কি করে এই সরকার টিকিয়ে রাখা যায় সর্বোপরি বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা মোকাবিলায় কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব তা নিয়ে তিন পার্টির নেতারা মতবিনিময় করবেন। কিন্তু সেই বৈঠকের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে বলে অনেকেই আশা করতে পারছেন না।
সোস্যালিস্ট পার্টির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা এ্যান্টোনিও ল্যাওরফি সাংবাদিকদের বলেছেন- ‘আমরা শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হতে যাচ্ছি কিন্তু অত্যন্ত সন্দেহপ্রবণ মন নিয়ে।’ কোয়ালিশনের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন দল অর্থনৈতিক প্রশ্নের নিজ নিজ দলের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। সেই সিদ্ধান্তগুলো একত্রিত করে পারস্পরিক সমঝোতা’র ভিত্তিতে টলটলায়মান ইটালীয় কোয়ালিশন সরকার আর কতদিন টিকে থাকতে পারে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক