You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: ২৯শে সেপ্টেম্বর, রবিবার, ১২ই আশ্বিন, ১৩৮১

কমনওয়েলথ সম্মেলনের যুক্ত ইশতেহার

বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তিতে একটি আন্তর্জাতিক জননীতির আহ্বান জানিয়ে কমনওয়েলথ অর্থমন্ত্রী সম্মেলন শেষে একটি যুক্ত ইশতেহার প্রকাশিত হয়। ২৭ শে সেপ্টেম্বর অটোয়ায় কমনওয়েলথ অর্থমন্ত্রীর সম্মেলন শেষে এই যুক্ত ইশতেহারে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সমস্যার মোকাবেলায় যে কোনো উদ্যোগই নেয়া হোক না কেন, তৃতীয় বিশ্ব তথা উন্নয়নশীল বিশ্বকে রক্ষা করতে হবে এবং তৃতীয় বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জন্য কল্যাণ ডেকে আনতে হবে-এই হলো মূলকথা।
এই প্রসঙ্গে কমনওয়েলথের মিঃ আরনল্ড স্মীথ সাংবাদিকদের কাছে পরিষ্কার বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতি এমনই আন্তঃসম্পর্ক যে বিশৃঙ্খলা এড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সৌপ্রাতৃত্বের ধারণা সম্পর্কে এর একটি অর্থনৈতিক ব্যাখ্যার প্রয়োজন। তিনি আরো বক্তব্য রাখেন যে, বিবেকের খাতিরেই আজ ‘আমরা’ ও ‘তারা’ এই মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে এবং আমরা সবাই একই মানব গোষ্ঠীভুক্ত এ কথাটা মনে প্রানে স্বীকার করে নিয়ে ভালো অথবা মন্দ ফল ভোগের সমান অংশীদার হতে হবে সবাইকে।
কমনওয়েলথ বৈঠকের যুক্ত ইশতেহারে কমনওয়েলথ অর্থমন্ত্রী বর্তমানের বিশ্বব্যাপী গুরুতর মুদ্রাস্ফীতি সমস্যার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তারা একথাও বলেন যে-বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতির দরুন উন্নয়নশীল দেশগুলোর দায় পরিশোধের ঘাটতি বেড়ে চলেছে এবং তার ফল উন্নতকামী দেশগুলোর সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। যার প্রত্যক্ষভাবে এসব দেশের দরিদ্র ও অস্থিতাবস্থা বাড়ছে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর অধিকাংশই প্রাকৃতিক সম্ভাবনা ও কাঁচামাল উৎপাদন সমৃদ্ধ। সেই দিকে ইঙ্গিত রেখেই যুক্ত ইশতেহারে একটা সুষ্ঠু গণনা নীতি গ্রহণের প্রস্তাব রাখা হয় সম্মেলনে। অংশগ্রহণকারী অর্থমন্ত্রীগণ বলেন যে, শিল্পোন্নত দেশগুলোতে আজ তাদের নিজ অর্থনীতির ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পণ্যমূল্যের ওপর চাহিদার বিধিনিষেধের প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করে দেখতে হবে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কাঁচামাল বা পণ্য উৎপাদন করে তার মূল্য সাধারণত নির্ধারিত হয় শিল্পোন্নত দেশগুলি দ্বারা। ফলে কোন পণ্য উৎপাদিত কাঁচামালের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলো কখন কেমন দাম পাবে তা থাকে অনিশ্চিত। অপরদিকে কাঁচামাল শিল্পোন্নত দেশগুলো না নিলে তা দিয়ে শিল্পোৎপাদন করার ক্ষমতা উন্নয়নশীল দেশগুলোর অধিকাংশেরই নেই। ফলে শিল্পোন্নত দেশের চাহিদা ও খেয়াল-খুশি মাফিক পণ্য মূল্য নির্ধারণের ওপরেই তৃতীয় বিশ্বকে নির্ভর করতে হয়। এই অসহায় অবস্থাতে উন্নত দেশগুলো যেন শোষণ না করে সেই কথা রাখা হয়েছে কমনওয়েলথ সম্মেলনে যুক্ত ইশতেহারে।
একথাও, সত্য যে তৃতীয় বিশ্বের কাঁচামালের ওপর উন্নত বিশ্বকে অনেকটা নির্ভর করতে হয়। কারণ তাদের কলকারখানা থাকলেও বিশ্বে উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ করে একচেটিয়া ব্যবসা জমিয়ে রাখার জন্য প্রচুর কাঁচামাল সংগ্রহ করতে হয়। তাদের চাহিদার বাস্তবতা শত-শত কাঁচামাল কেনার মানসিকতায় উন্নত দেশগুলো তৃতীয় বিশ্বের সঙ্গে দর কষাকষি করে এবং অসহায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নিজের গরজেই অবশেষে উন্নত বিশ্বের প্রস্তাবিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে হয়। এবং আরও দুঃখের কথা যে, তাদেরই কাঁচামালে উৎপাদিত পণ্য তাদের কাছেই ফিরে আসে অনেক দামের সামগ্রী হয়। তখনও অসহায় তৃতীয় বিশ্ব তা ক্রয় করতে বাধ্য হয়।
আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংকটের যে আঘাত আজ বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছে তার মোকাবেলায় তাই সম্পদের সুষম বন্টনের প্রসঙ্গও এসেছে। তাই বিশ্ব গণনা নীতি গ্রহণ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের কাঁচামালের দাম নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার প্রদান এই দুটো দিকেই আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মানবতা ও সৌভ্রাতৃত্বের প্রকাশ এখন রাখতে হবে।
সম্প্রতি তৃতীয় বিশ্ব তাদের নিজস্ব সম্পদ, উন্নতি ও প্রগতির ব্যাপারে সচেতন হয়েছে। এ সম্বন্ধে নানা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তৃতীয় বিশ্ব সংহতি ও ঐক্যবদ্ধ পরিচয় দিয়েছে। তেলের মূল্য নির্ধারণ তারই জলন্ত প্রমাণ। এবার তাদেরই কাঁচামালের ন্যায্যমূল্য আদায়ের ব্যাপারে কোন নীতি গ্রহণের প্রস্তাবকে তারা বাস্তবায়িত করতে ইচ্ছুক। নিঃসন্দেহে যুক্ত ইশতেহার তারই ফলশ্রুতি। মুদ্রাস্ফীতি প্রতিরোধ ও সার্বিক উন্নতির জন্য আজ দৃঢ়ভাবে পরিচয় দিক-আমরা কায়মনে তাই প্রার্থনা করি।

জ্যৈষ্ঠের কাঁঠাল যেন ভাদ্রে না পাকে

সংবাদটা যদি সত্যি হয় তাহলে রীতিমতো আতঙ্কজনক বৈকি! গতকাল স্থানীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে যে, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতার ফলে ৩০ কোটি টাকার কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
প্রকাশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণীর কর্মচারী “চরম অযোগ্যতা, ব্যর্থতা ও দুর্বলতার দরুন এবং আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতার ফলে সরকারের ৩০ কোটি টাকার কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচী শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে কিনা সে সম্পর্কে মারাত্মক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গত ১৫ই সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার কথা।
পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে আরে দেখা যাচ্ছে যে, গত একমাসে পরিকল্পনাটি সর্ব মোট ৫ রদবদল করা হয়েছে। সর্বশেষে গৃহীত চূড়ান্ত কর্মসূচি অনুযায়ী কোন থানায়, কি পরিমান এলাকাকে উক্ত কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করা যায় তার বিবরণ গত ২৩ শে সেপ্টেম্বর এর মধ্যে পাঠাবার জন্য নির্দেশনামা জারি করা কথা ছিল। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে কিন্তু সেই নির্দেশ নামা দেরিতে সচিবালয়ের দেয়াল ডিঙিছে বটে তবে এখনো তা সব জায়গায় পৌঁছে নি। আমরা গোড়াতেই বলেছি যে, সংবাদটি রীতিমতো আতঙ্কজনক। কেন তা আর বিস্তারিত বিশ্লেষণ এর অপেক্ষা রাখে না। তবু গ্রামবাংলার ভাষায় বলতে হয় ‘সাজতে সাজতে ফেচ্চা (ফিঙ্গে) রাজা। অর্থাৎ অন্যান্য পাখিরা যখন সাজগোজ করতে ব্যস্ত তখন ফিঙ্গে যথা সময়ে পৌঁছে রাজার আসনটি দখল করেছিল। ফিঙ্গের রাজা হবার পেছনে ছিল সময়ানুবর্তিতা। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে দেখা যাচ্ছে একশ্রেণীর আমলাদের মধ্যে ‘সাজগোজ’ করার প্রবণতা। এক কথায় একে বলা যায় ‘কাজের নামে অকাজ।’ যদি তাই না তবে তাহলে ভয়াবহ বন্যার ফলে খাদ্যশস্য ও অর্থনৈতিক দিক থেকে বিধ্বস্ত বাংলাদেশের যখন যুদ্ধকালীন জরুরি ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির কাজ আরম্ভ হওয়ার কথা ছিল সেখানে সামান্য একটি নির্দেশ নামা অনেক দেরিতে পাঠানো হয়েছে এবং তাও সব জায়গায় এখনো পৌঁছেনি। শুধু তাই নয় কর্মসূচির কাজ শুরু হবার কথা ছিল গত ১৫ই সেপ্টেম্বর। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে পরিকল্পনাটি ভবিষ্যৎ কি!
কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি বাস্তবায়ন তো আর ছেলের হাতের মোয়া নয় যে চাইলেই তার পাওয়া যাবে। এ জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন বন্যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাসমূহের তথ্যাবলী। কোথায়, কোন এলাকায় বিশেষ কর্মসূচি অনুযায়ী আলু, গম, তেলবীজ, শাকসবজি প্রভৃতি লাগানো যায়, সর্বনিম্ন পর্যায়ে প্রস্তাবিত ৫০০ একর জমি নিয়ে কোথায় কোথায় ব্লক উন্নয়ন কমিটি গঠন করা যায় ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কিত পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট। তার উপর আবার রয়েছে বীজ, সার, ঋণ প্রভৃতি সংক্রান্ত রিপোর্ট। এছাড়াও রয়েছে প্রস্তাবিত কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য কর্মী প্রশিক্ষণ। অথচ সময় মাত্র ৩ মাস। যেভাবে, যে প্রক্রিয়ায় ও পদ্ধতি তে কাজকর্ম এগুচ্ছে তাতে ৩ মাস কেন আগামী ৬ মাসেও তা বাস্তবায়িত হবে কিনা সে সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কর্মসূচিতে প্রধান লক্ষ্যই হলো শীতকালীন ফসল। কিন্তু ভাবসাবে দেখা যাচ্ছে শীত কেন গ্রীষ্মকালেও কোন কিছুই হবে না। সুতরাং এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতি আমাদের অনুরোধ দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতি লক্ষ্য রেখে জ্যৈষ্ঠের কাঁঠালকে ভাদ্র মাসে পাঁকাবেন না অর্থাৎ সাদামাটা ভাষায় বললে বলতে হয় ধীরে চলো নীতিটি মেহেরবানী করে পরিহার করতে হবে।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!