You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.09 | নিউ ইয়র্ক টাইমস, ৯ ডিসেম্বর , ১৯৭১ নিক্সন এবং দক্ষিণ এশিয়া - সংগ্রামের নোটবুক

নিউ ইয়র্ক টাইমস, ৯ ডিসেম্বর , ১৯৭১
নিক্সন এবং দক্ষিণ এশিয়া

এটা ঠিক যে আমাদের ভারতীয় বন্ধুদের কাছে বলা ভুল হবে যে প্রেসিডেন্ট নিক্সন মার্কিন জনমতের প্রতিকূল দিকে সাঁতরে চলেছেন। সত্য কথা হলো, উপমহাদেশ নিয়ে আমাদের জনগণের খুব অল্প অংশেরই কোন রকমের মতামত আছে। আর উপরে উপরে আমাদের জনমতের যা কিছু প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে, তার অনেকটাই যেকোন প্রেসিডেন্ট এর কথা ও কাজ দ্বারা প্রভাবিত হতো। তাছাড়া বিভিন্ন সংবাদপত্রের সম্পাদকীয়তে এবং কলামে যুদ্ধের যেই ভয়াবহ চিত্র যা ছাপা হচ্ছে , তা উস্কানিমূলক এবং সমাধানের অন্য সব সম্ভাব্য রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছে, এই সময়ে যেটা ঠিক হচ্ছে না।

আমি একটা পয়েন্টে জোর দিতে চাই, যা অন্য তেমন কেউ বলছে না , কেননা কেউ এটা বলে ধরা খেতে চাচ্ছে না যে যুদ্ধের বিকল্প যুদ্ধের থেকে খারাপ পরিণতি বয়ে নিয়ে আসতে পারে। আমার পয়েন্ট হচ্ছে, স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পূর্ব বাংলার জন্য শুধুমাত্র একটাই বাস্তব সমাধান খোলা আছে, যা কিনা দশ মিলিয়ন শরণার্থীর বেশিরভাগকে ফিরিয়ে আনতে পারে এবং পূর্ব বাংলার পুনর্গঠনে সাহায্য করতে পারে, সেটা হলো, আর তা হলো, পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা লাভ। ২৫শে মার্চ থেকে যে দুর্বিষহ বীভৎস পরিস্থিতি সেখানে তৈরী করা হয়েছে তার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হলো বর্তমানের অবস্থা ,এবং সেখান থেকে পিছনের দিকে হাঁটার কোন রাস্তা এখন আর খোলা নেই। সুতরাং ১) অন্তত গত পাঁচ মাস ধরে আমেরিকার নীতি যেই অবিভক্ত পাকিস্তান এর প্রতি সমর্থন দিয়েছে, তা ব্যর্থ হয়েছে ২) গতবারের নির্বাচিত বাংলাদেশের সরকারের দ্বারা চালিত সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামের প্রতি ভারতের যেই অকুন্ঠ সমর্থন, সেটা এখন শুধু মানবিক দিক থেকেই বোধগম্য নয়, বরং এটাই এখনকার পরিস্থিতিতে একমাত্র গঠনমূলক রাস্তা যা এখন খোলা আছে।

আমি মনে প্রাণে মনে করি ভারতীয়রা তাদের প্রত্যক্ষ সমর্থন একটু কম করলে এবং দীর্ঘ সময় নিয়ে এটা সমাধানের চেষ্টা করলে হয়তো ভালো হতো । কিন্তু সত্যি কথা বলতে এখানে কোন পক্ষ যদি সবচেয়ে কম ধৈর্য দেখিয়ে থাকে, যা এই পরিস্থিতিকে আরো গভীর হতাশার দিকে নিয়ে গেছে, সেটা হলো নিক্সন প্রশাসন। বল এখন ভারতের কোর্টে এবং তাদের দেখাতে তে হবে যে, তারা মুখে যা বলছে অর্থাৎ সত্যিকার অর্থে স্বাধীন বাংলাদেশই শুধু তাদের লক্ষ্য, যেখান থেকে এই শরণার্থীরা এসেছে, তারা যেন আবার সেখানে ফেরত যেতে পারে এবং এটা ছাড়া তাদের অন্য কোন উচ্চাভিলাষ নেই। ভারতীয় নেতাদের উপরে একটা গুরু দায়িত্ব আছে এবং সেটা হলো নিচিত করা এই যুদ্ধ যেন দীর্ঘ মেয়াদে না চলে এবং পূর্ব বা পশ্চিম হোক, বড় আকারে যেন চারদিকে ছড়িয়ে না পরে। আর ইতিমধ্যে পরিস্থিতি যে দিকে মোড় নিয়েছে, ওয়াসিংটন এর দায়িত্ব হবে অন্তত চুপচাপ থাকা।

***জন পি. লুইস ডিন – উডরো উইলসন স্কুল অফ পাবলিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার , প্রিন্সটন, প্রাক্তন ডিরেক্টর – ইউ এস এ.ই.ড , ভারত ১৯৬৪-৬৯