You dont have javascript enabled! Please enable it!

উৎপাদন বাড়িয়ে অনাহার মুক্তির চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন: বঙ্গবন্ধু

ঢাকা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা সংগ্রামের সমাপ্তি এবং আরেক সংগ্রামের সূচনা। অর্থনৈতিক সেই সংগ্রাম অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য।

তিনি বলেন, জাতি আজ তিন মহাশত্রুর মােকাবিলা করছে। এই তিন মহাশত্রু হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সমাজশত্রু। এদের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ সংগ্রামে সরকারকে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছে। শেখ মুজিব বলেন, স্বজনপ্রীতি দুর্নীতি ও আত্মপ্রবঞ্চনার উর্ধ্বে থেকে আজ আমাদের সকলকে আত্মসমালােচনা আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে সুন্দর ও সমৃদ্ধ ভাবী ভবিষ্যত গড়ে তােলার শপথ নিতে হবে। আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর এজন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঔপনিবেশিক শাসন ও শােষণ থেকে সােনার বাংলাকে মুক্ত করার সুমহান দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে সকল অকুতােভয় বীর শহীদ অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সমাপ্তি হয়েছে এবং সাথে সাথে অনেক বেশি সময় সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য সংগ্রামের সূচনা হয়েছে। নিরলস পরিশ্রম ও সৎ প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সংগ্রামে জাতি অবশ্যই জয়যুক্ত হবে বলে তিনি দৃঢ় আশা প্রকাশ করেন।

জাতির পিতা তাঁর ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি ও পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া বিপুল ঋণের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, শূন্য হাতে জাতিকে যাত্রা শুরু করতে হয়। এমতাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই তিন বছর জাতিকে কিছু দিতে না পারার স্পষ্ট বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী সেদিন রেখেছিলেন। এতদসত্ত্বেও ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ, বিভিন্ন শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের বর্ধিত বেতন ভাতা ও যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রশাসনিক তৎপরতার কথা উল্লেখ করেন। একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের যথার্থ প্রশাসনিক কাঠামাে গড়ে তুলতে সরকারকে বিরাট দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে।

বিভিন্ন সমস্যা: জাতির পিতা তাঁর ভাষণে নবীন রাষ্ট্রের একাধিক সমস্যার কথা উল্লেখ করেন। বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যাদির ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ দিক থেকে ফসলহানি ও সমাজশত্রুদের কার্যকলাপ এগুলাের মধ্যে প্রধান বলে তিনি উল্লেখ করেন। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি হ্রাস, খাদ্য সংগ্রহ অভিযান, প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যাপক ব্যবহার ও সারসহ অন্যান্য কৃষি সামগ্রীর উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সমাজ বিরােধীদের দমনে সেনাবাহিনী নিয়ােগসহ কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী জনগণের সক্রিয় সাহায্য কামনা করেন। আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা আজ প্রতিষ্ঠিত বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

সাম্প্রদায়িকতার প্রতি হুঁশিয়ার: সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, সােনার বাংলা গড়তে সােনার মানুষ চাই। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও আত্মপ্রবঞ্চনার উর্ধ্বে সকলকে আত্মসমালােচনা, আত্মসংযােগ ও আত্মশুদ্ধি মনােনিবেশ করার জন্য তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান।

অনাহারে দেশের কয়েক হাজার লােক মারা গেছেন, প্রধানমন্ত্রী অকপটে তা স্বীকার করেন। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের কর্ম-প্রচেষ্টার কোন অভাব ছিল না বলে তিনি জানান। অতীতের মতাে ভবিষ্যতেও তিনি জনগণের পাশে থাকবেন বলে জাতির পিতা স্পষ্ট ঘােষণা করেন। আল্লাহর নামে শপথ করে তিনি একটা সুন্দর ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দেন। পবিত্র জাতীয় দিবসে সকলকে একই শপথে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।৪৩

রেফারেন্স:

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭৪, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!