You dont have javascript enabled! Please enable it!

বিডিআর রিক্রুটদের সমাপনী কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধুর অভিবাদন গ্রহণ

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে কোন মূল্যে চোরাচালানী, মুনাফাখখার, দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসবাদীদের উৎখাত করার উদ্দেশ্যে সর্বশক্তি আঘাত হানার জন্য বাংলাদেশ রাইফেলসের জোয়ানদের নির্দেশ দিয়েছেন। মানুষের দুঃখ কষ্টের বিনিময়ে যারা দেশের সম্পদ পাচার করে তাদের কোন জাত ধর্ম নেই বলে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু তাদের মানুষ নামে নরপশু বলে অভিহিত করেন। দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসবাদী, চোরাচালানীকে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করার জন্য প্রয়ােজন হলে সকল বাহিনীকে নিয়ােগ করে চরম আঘাত হানা হবে বলে বঙ্গবন্ধু ঘােষণা করেন।

বৃহস্পতিবার সকালে পিলখানায় বিডিআর রিক্রুটদের তৃতীয় শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে বিডিআর জোয়ানদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতাকালে তিনি এই ঘােষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু আরাে বলেছেন যে, দেশের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। অনেক মায়া দেখিয়েছি বলে তিনি বলেন, চোরাচালানীদের কার্যকলাপ সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে আর ক্ষমা করা যায় না। তিনি বলেন, যারা রাতের অন্ধকারে গােপনে হত্যা করে, লুট করে, অনেক কষ্টে বিদেশ থেকে আনা দ্রব্য পাচার করে তারা দেশের শত্রু।

তিনি বলেন যে, আমি চরম অবস্থায় পৌছেছি। বিদেশে এদের জন্য বদনাম হচ্ছে। এসব সমাজশত্রুদের উৎখাতের জন্য চরম আঘাত হানার জন্য সরকার প্রস্তুত হচ্ছে বলে তিনি ঘােষণা করেন। বিডিআরের জোয়ানরা, সেনাবাহিনী, ছাত্র, কৃষক, মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে দেশকে স্বাধীন করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার ডাকে সেদিন অস্ত্র ধরেছিল বিডিআর, অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী কণ্ঠে তিনি আরাে বলেন, আমার একটি হুকুম আছে। আমি আবেদন করছি। আদেশ করছি। আমি প্রধানমন্ত্রী একথা আপনারা ভুলে যান। দেশের একজন। নাগরিক হিসেবে আপনাদের একজন হিসেবে আবেদন করছি, বঙ্গবন্ধু হিসেবে, জাতির পিতা হিসেবে আদেশ করছি, যে কোনাে মূল্যে চোরাচালানী বন্ধ করতে হবে। আমি আশা করি বিডিআর তা পারবে। তারা আমার আদেশ পালন করবে। তিনি বলেন, চোরাচালানীর কথা শুনলে লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে। বিডিআর কেন তা বন্ধ করতে পারবে না? বার বার কেন সেনাবাহিনী নিয়ােগ করতে হবে?

আমার মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। তিনি আরাে বলেন, আজ আমার মানুষ দুঃখী, না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির ফলে দেশের অর্থনীতির ওপরে এসেছে। আঘাত। তাছাড়া মার্চ মাসে যুদ্ধকালে পাকিস্তানি বাহিনী কোনাে সম্পদ রেখে যায়নি, শুধু দিয়েছে সাড়ে সাত কোটি মানুষ। তাদেরকে নিয়ে তাদের ঈমানের জোর নিয়ে দেশকে গড়ার কাজে আত্মনিয়ােগ করেছি। ৩৫ বছর কারাগারে, দেশের পথেপথে, গ্রামে গ্রামে কাটিয়েছ। ফাঁসির কাষ্ঠে যাওয়া ঝুঁকি নিয়েছেন, সারাজীবন সংগ্রাম তিনি করেছেন বলে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, এসব করেছি এজন্য যাতে এদেশের মানুষ মানুষের মতাে করে বাঁচতে পারে।

সমাজ শত্রুদের উৎখাত করা নির্দেশ: তিনি আরাে বলেন, অনেকে বলেন বঙ্গবন্ধু কঠোর হও। কেমন কঠোর ছিলাম ইয়াহিয়া-আইয়ুব জানত। কিন্তু চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী। এখন। এক শ্রেণির মানুষ এদেশের সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে খাচ্ছে। দেশের সম্পদ পাচার করছে। গােপনে হত্যা করছে, এসব সমাজ শত্রুদের উৎখাত করার জন্য তিনি নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আগে আমার কিছু ছিল না। এখন আমার রক্ষীবাহিনী আছে, বিডিআর আছে, পুলিশ আছে, সামরিক বাহিনী আছে, ছাত্র আছে, বাংলার কৃষক আমার, বাংলার মানুষ আমার। এসব সমাজ শত্রুদের উৎখাত করতে কেন সরকার পারবে না বলে প্রশ্ন করে তিনি সর্বশক্তি নিয়ে আঘাত হানার নির্দেশ দেন।

জওয়ানদের প্রশংসা: বিডিআরের জোয়ানদের অসুবিধা আছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মানুষ কষ্টে আছে, বিডিআর তা থেকে আলাদা নয়। তিনি দৃঢ় আশা প্রকাশ করেন দেশের মানুষের এই দুঃখ ইনশাল্লাহ থাকবে না। আবার সােনার বাংলা শস্য শ্যামলা হয়ে উঠবে, সেদিন বেশি দূরে নয়। এ বিশ্বাস আমার আছে। বিডিআর বাহিনীর ঐতিহ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বাহিনীর ইতিহাস দেশবাসী জানে। পিলখানায় ৭১-এর ২৫ মার্চ পাকিস্তানি আক্রমণের উল্লেখ করে তিনি আরাে বলেন, সেদিন তিনি বিডিআরের সদর দফতরে যােগাযােগ করে বার্তা পাঠান। আর বিডিআর বাহিনী সেই বার্তা দেশের আনাচে কানাচে পৌছে দিয়েছে। মাতৃভূমিকে ভালােবাসে বলে তারা সেদিন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।১৬

রেফারেন্স:

৫ ডিসেম্বর ১৯৭৪, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!