আতাউর রহমান খানসহ বিরােধী সদস্যদের তুমুল বিরােধিতা
সংসদ ভবন: শনিবার জাতীয় সংসদে সরকার ও বিরােধীয় পক্ষের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডার পর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্ত চিহ্নিতকরণ চুক্তিটি বাস্তবায়নের জন্য শাসনতন্ত্রের তৃতীয় সংশােধনী বিলটি ২৬১-৭ ভােটে গৃহীত হয়। আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী শ্রী মনােরঞ্জন ধরের উত্থাপিত এই শাসনতন্ত্রের সংশােধনী বিলটির বিরােধিতা করে বক্তৃতা দেন বিরােধী দলীয় সংসদ সদস্য জনাব আতাউর রহমান খান, সৈয়দ কামরুল ইসলাম, মুহাম্মদ সালেহ উদ্দিন, জনাব আবদুস সাত্তার, জনাব ময়নুদ্দিন আহমদ, শ্ৰী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। তারা বিলটিকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জনমত যাচাইয়ের জন্য প্রচারের আহ্বান জানান। এইদিকে নির্দলীয় সদস্য জনাব আবদুল্লাহ সরকার বিলটিকে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জনমত যাচাইয়ের জন্য প্রস্তাব করেন।
আতাউর রহমান খান: বিলটির ওপর বক্তৃতা করতে গিয়ে জনাব আতাউর রহমান খান। বলেন, সরকার পক্ষ থেকে পরিষদের সদস্যদের জন্য কোন ম্যাপ অথবা জরিপ তথ্য দেয়া হয়নি। ফলে সদস্যদের পক্ষে অন্ধের মতাে বিলটিকে সমর্থন করা ঠিক নয়। তিনি বলেন, ভারতকে কতটুকু অংশ ছেড়ে দেয়া হচ্ছে এবং বাংলাদেশ কতটুকু অংশ পাচ্ছে এটাই সরকারের পক্ষ থেকে সদস্যদের অবহিত করা উচিত ছিল। তিনি বলেন, বেরুবাড়ি বাংলাদেশের অংশ। এইভাবে রংপুর জেলার দহগ্রামও বাংলাদেশের অংশ। ফলে চুক্তিতে ভারত বেরুবাড়ির বদলে বাংলাদেশকে দহগ্রাম দিচ্ছে বলে যে উল্লেখ করা হয়েছে জনাব খান তাকে বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ভারত আমাদের দহগ্রাম আমাদের দিয়ে বিনিময় বেরুবাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। একজন গণপরিষদ সদস্য হিসেবে এটা তিনি মেনে নিতে পারেন না। তিনি বলেন, বর্তমান সংবিধান সংশােধনী বিলটি পাস করার আগে এর ওপর গণভােট নেয়া উচিত। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী। ভারতে যেয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর জনসভা বা মিটিং করে জনগণকে জানান যে, ভারতকে তিনি কি দিবেন এবং ভারত আমাদের কি দেবে। তিনি বলেন, যেহেতু প্রশ্নটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের সাথে জড়িত তাই হঠাৎ করে কিছু করা ঠিক হবে না।
জনাব সালেহ উদ্দিন: সৈয়দ কামরুল ইসলাম মাে. সালেহ উদ্দিন বিলটির তীব্র সমালােচনা করে বলেন, দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হানা সংবিধান সংশােধনী আনা যায় কিনা। তিনি বলেন, কোন দেশের নিজের জমি ত্যাগ করে দেবার ঘটনা ইতিহাসে এই সর্বপ্রথম। তিনি ভারত ও বাংলাদেশের কাগজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, একই দিনে বাংলাদেশের কাগজে লিখেছে বাংলাদেশ লাঠিটিলা পাবে অথচ ভারতের খবরের কাগজে লিখেছে ভারত লাঠিটিলা পাবে, এমতাবস্থায় বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ওপর ভিত্তি করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায়? জনাব সালেহ উদ্দিন সরকারের নিকট তা জানতে চান।
আবদুস সাত্তার: বিরােধী দলীয় সদস্য জনাব আবদুস সাত্তার বলেন, বেরুবাড়ি ভারতের নিকট হস্তান্তরের পূর্বে জনগণের মতামত নেয়া দরকার। তিনি বলেন, সরকার ইচ্ছা করলেই বিলটি পাশ করিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু জনগণ তাদের সে অধিকার দেননি। জনাব ময়নুদ্দিন মানিকও বিলটির বিরােধিতা করেন। তিনি পাস করার আগে জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব করেন। স্বতন্ত্র সদস্য শ্রী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা এবং জনাব আবদুল্লাহ সরকার বলেন, ভারতের সাথে পূর্ব সীমান্ত নিয়ে বাংলাদেশের কোনাে বিরােধ ছিল না। সুতরাং এই নিয়ে ভারতের সাথে নতুন করে চুক্তিতে যাওয়া অবান্তর। তারা বলেন, এর ফল ভারতকে এমন অনেক জায়গা ছেড়ে দিতে হবে যা বাংলাদেশের একান্ত নিজস্ব ছিল।
মনােরঞ্জন ধর: বিরােধী দলের বক্তব্য খণ্ডন করে আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী শ্রী মনােরঞ্জন ধর বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত চিহ্নিত করার জন্য দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীগণ যে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন তা হল একটা ঐতিহাসিক চুক্তি। তিনি বলেন, প্রতিবেশীদের সাথে শান্তিতে বসবাস করার জন্য সীমান্ত চিহ্নিতকরণ চুক্তি একটা প্রাথমিক শর্ত। তিনি বিরােধী পক্ষের যুক্তিকে খণ্ডন করে বলেন, এর ফলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপরে আপাতত আঘাত আশার প্রশ্নই ওঠে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হােসেনও আইনমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন করে ভাষণ দেন।৬৮
রেফারেন্স:
২২ নভেম্বর ১৯৭৪, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত