You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.10.27 | রাজনীতিকরাই দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ী, ত্রাণকার্য জোরদারে বুদ্ধিজীবীদের ডাক | বাংলার বাণী - সংগ্রামের নোটবুক

রাজনীতিকরাই দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ী, ত্রাণকার্য জোরদারে বুদ্ধিজীবীদের ডাক

ঢাকা: রবিবার অপরাহে ঢাকার বাংলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বুদ্ধিজীবীদের এক সমাবেশে বিভিন্ন বক্তা দেশের বর্তমান দুর্যোগকালে বুভুক্ষু মানুষের ত্রাণকার্যে এগিয়ে আসার জন্য ছাত্র শিক্ষক ব্যবসাজীবী সকল শ্রেণির বুদ্ধিজীবীর নিকট উদ্বাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। প্রবীণ সাহিত্যিক অধ্যাপক মনসুর উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় বক্তৃতা করেন অধ্যাপক কবির চৌধুরী, শ্রী রণেশ দাশগুপ্ত, অধ্যাপক ইব্রাহিম খা, জনাব কামরুল হাসান, জনাব কলিম শরাফি, জনাব জি আর আহমদ, বেগম সানজিদা খাতুন, ড. অজয় রায়, জনাব কে, এস, আলম ও জনাব হাসান ইমাম।

কবির চৌধুরী: অধ্যাপক কবির চৌধুরী তার ভাষণে বলেন যে, দেশ আজ এক ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় বুদ্ধিজীবী মহলের কিছু বাস্তব কাজ করা দরকার। তিনি বলেন, দেশের সংকট একেবারে অনভিপ্রেত ছিল না। কিন্তু বর্তমান মুহূর্তে এই সংকটকে কৃত্রিম বলে মনে হয়। জনাব চৌধুরী বলেন, দেশে যাদের কিছুই ছিল না আজকে তারা সমাজের মাথা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। অথচ যাদের পেটে ভাত, পরনে মােটা কাপড় ছিল তারা ক্ষুধার তাড়নায় মৃত্যুবরণ করছে। সরকার এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সেখানে দুঃখ যাতনাকে সকলে মিলে ভাগ করে নিবে। এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য একটি সামাজিক বিপ্লবের প্রয়ােজন বলে তিনি মতাে প্রকাশ করেন।

অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খাঁ: প্রবীণ সাহিত্যিক অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খাঁ দেশে ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীসহ সকলের নিকট আর্তমানুষের ত্রাণকার্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমার সকলে মিলে যদি কাজ করি, তাহলে সংকটের কিছুটা লাঘব হতে পারে।

রণেশ দাশগুপ্ত: প্রবীণ সাহিত্যিক ও সাংবাদিক শ্রী রণেশ দাশগুপ্ততার ভাষণে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থায় বড় রকমের ফাঁক রয়েছে। এ ফাকটা বন্ধ করা গেলেই দেশের মানুষের পরিত্রাণ সম্ভব। কিন্তু এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী বলে বর্ণনা করে শ্রী দাশগুপ্ত বলেন, আমাদের মৃত্যুপথযাত্রী মানুষগুলােকে বাঁচাতে হবে। এ জন্য তিনি লঙ্গরখানাগুলােকে ভিত্তি হিসেবে ধরে ত্রাণকার্য শুরু হওয়া উচিত বলে মতাে প্রকাশ করেন।

কামরুল হাসান: প্রখ্যাত শিল্পী কামরুল হাসান দেশের বর্তমান অবস্থার জন্য রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীদেরকে দায়ী করেন। গণঐক্যজোটের গণস্বার্থ রক্ষা করতে পেরেছেন কিনা তা আগামী পরশুর মধ্যে তিনি তার জবাব চান। জনাব কামরুল হাসান আরাে জানতে চান সরকারের ফায়ারিং স্কোয়াডের কি হল? বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার জন্য দেশের একশ্রেণির অসৎ বুদ্ধিজীবীদেরকেও দায়ী করেন।

জি আর আহমদ: জনাব জি আর আহমদ তার ভাষণে বলেন, রাজনীতিবিদদের দ্বারা সমস্যা সমাধান হবে না। তারা শুধু রক্ত চান। কিন্তু কাউকে ব্লাড ব্যাংকে রক্ত দিবার পরামর্শ দেন। সততা ও ন্যায় নীতির অভাবে দেশে আজ এত সংকট বলে তিনি মন্তব্য করেন।

কে এম আলম: জনাব কে এম আলম বর্তমান খাদ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারের নিকট শ্বেতপত্র দাবী করেন। প্রসঙ্গত তিনি আইন করে জমি বেচাকেনা বন্ধ করে দেবার জন্য সরকারের নিকট আহ্বান জানান। সভায় অন্য বক্তারাও বর্তমান মুহূর্তে মানুষকে বাঁচানাের স্বার্থে ত্রাণকার্যে এগিয়ে আসার জন্য বুদ্ধিজীবী সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।৮১

রেফারেন্স:

২৭ অক্টোবর ১৯৭৪, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত