বাংলাদেশকে যথাসাধ্য সাহায্য
দিন: সিনেটর পার্সির আবেদন। ওয়াশিংটন: বাংলাদেশের এই গুরুতর প্রয়ােজনের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ ও জনগণ যা কিছু সাহায্য দিতে পারেন তার সবই বাংলাদেশের জন্য প্রয়ােজন রয়েছে এবং বাংলাদেশ তা পাবার দাবীদারও। মার্কিন সিনেটর চার্লস পার্সি এ কথা বলেন। কংগ্রেসীয় রেকর্ডে ১৭ অক্টোবর তার এই বিবৃতিটি স্থান পায়। সিনেটর বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সমস্যাগুলাের আবর্তে পড়েছে। তবে এগুলাে বাংলাদেশের অকুতােভয় জনগণ ও তাদের আত্মউৎসর্গীকৃত মহান নেতা যে সব সমস্যাগুলাের মােকাবেলা করছেন তার সম্মুখে ম্লান হয়ে পড়েছে বলে চার্লস পার্সি বলেন। তিনি বলেন, আমরা অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশায় পতিত জনগণের সাথে রয়েছি।
পূর্ণ বিবরণ: মি. প্রেসিডেন্ট এই শরৎকালে আমি আমার বিশিষ্ট সহকর্মী মিসােরীয় সিনেটরকে (মি. সাইমিংটন) নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৯তম অধিবেশনে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছি। আমি ইতােমধ্যেই লক্ষ্য করেছি যে, এই বিশ্বে আমরা সবাই কোন জটিল সমস্যার সম্মুখীন সে সম্পর্কে আমার ধ্যান-ধারণা অভিজ্ঞতার আলােকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি লাভ করেছে। আমি এই কথা বললাম এইজন্য যে, গত সপ্তাহে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আকর্ষণীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আমার কিছু সময় আলােচনা করার সুযােগ হয়েছিল। একজন জাতীয় নেতা হিসেবে তিনি বিপুল সমস্যার সম্মুখীন। বাংলাদেশ একটি গরীব দেশ। সম্পদের তুলনায় এদেশে জনসংখ্যা বিপুল। স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক বন্যায় এদেশ বিপুলভাবে ক্ষত্রিস্ত। ১৯৭৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে বাংলাদেশের জনগণ স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা প্রত্যক্ষ করেছে। ২০ হাজার বর্গমাইলেরও বেশি এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়। ১০ লক্ষাধিক টন ফসল বিনষ্ট হওয়ায় বহু। সংখ্যক বাড়িঘর, স্কুল ও রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের জনগণের যে দৃঢ় মনােবল নিয়ে প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মােকাবেলা করেছে এবার সেই মনােবল নিয়েই পরিস্থিতির মােকাবেলা করেছেন। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার প্রাপ্ত সকল সম্পদ নিয়ােজিত করেছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সাহায্যের হাত সম্প্রসারণ করেছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আমাদের দেশের সরকারসহ বিভিন্ন বন্ধু দেশের সরকার এবং আন্তর্জাতিক রেডক্রস অর্থ, খাদ্য ও ঔষধপত্র সাহায্য দিয়েছে। অতীতের অবস্থা পরিহার করার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের কঠোর তত্ত্বাবধানে এ সাহায্যদ্রব্য বন্যাদুর্গত জনগণের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। দ্রুত অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার সকল প্রচেষ্টা বন্যার দরুন ব্যাহত আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বন্যা প্রতিরােধ ও সাহায্য প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়ােজনীয় সম্পদ সংগ্রহ ও সংগঠনের মাধ্যমে সরকারের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে বর্তমান অসমতা দূর করে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সার্বিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের নিজের দেশীয় অন্তত দুঃসময় চলছে এবং কংগ্রেসে আমরা বিরাট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। কিন্তু বাংলাদেশের সাহসী জনগণ এবং তাদের নিবেদিত নেতা যে সব সমস্যার মােকাবেলা করছেন তার সামনে আমাদের সমস্যা নিতান্তই ম্লান। বর্তমানে তাদের বিরাট প্রয়ােজনের সময় আমাদের এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ ও তাদের জনগণের উচিত বাংলাদেশকে সর্বপ্রকারে সাহায্য করা। এ সাহায্যের তাদের প্রয়ােজন আছে-এ সাহায্য তাদের পাবার যােগ্য। যারা এই নিদারুণ কষ্ট ভােগ করছে তাদের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।৭৫
রেফারেন্স:
২৫ অক্টোবর ১৯৭৪, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত