You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.10.12 | বাংলাদেশে পর্যাপ্ত সম্পদ রয়েছে: বঙ্গবন্ধু | বাংলার বাণী - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশে পর্যাপ্ত সম্পদ রয়েছে: বঙ্গবন্ধু

নিউ ইয়র্ক: বাংলাদেশ একটি শূন্য ঝুড়ি নয়। দুশ বছরের বেশি সময়কাল ধরে ঔপনিবেশিক শােষণের পরও বাংলাদেশ একটি সম্পদশালী দেশ। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সম্প্রতি নিউইয়র্ক অবস্থানকালে সাপ্তাহিক নিউজউইকের সাথে এক সাক্ষৎকারে একথা বলেন।

‘বাংলাদেশ একটি আন্তর্জাতিক শূন্য ঝুড়ি’- মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হেনরি কিসিঞ্জার-এর এই মন্তব্যের উপর তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু উপরােক্ত মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ এমন একটি মন্তব্য করেছেন কিনা জানি না তবে বাংলাদেশ মােটেই একটি শূন্য ঝুড়ি নয়। বাংলাদেশ একটি সম্পদশালী দেশ, তবে এটা শূন্য ছিল যখন এটি সুদীর্ঘ সােয়া দুশ বছর বৃটিশ ও পাকিস্তানিদের উপনিবেশে ছিল। বাংলাদেশের উর্বর মাটি সম্পদে পরিপূর্ণ। আমাদের পাট আছে’-আছে চা। আমাদের মাটির নিচে মজুত রয়েছে প্রচুর গ্যাস ও কয়লা। মধু যেখানে আছে মৌমাছি সেখানে আসবেই। শুধু এসব আহরণের সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ভুলে যাবেন না আমাদের স্বাধীনতার বয়স মাত্র ৩৪ মাস, ৩৪ বছর নয়।

নিউজউইকের সর্বশেষ সংখ্যায় এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে।

প্রশ্ন: ১৯৭০ এর ঘূর্ণিঝড়ের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেভাবে বাংলাদেশকে ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছিল এবার তা করেনি কেন?

উত্তর: দান সর্বদাই দান। এটা দাবীর জিনিস নয়। অতীতে অনেক দেশ আমাদের সাহায্য করেছেন। এখন যদি কোন রাজনৈতিক কারণে তারা তেমনভাবে এগিয়ে না আসেন তবে যুক্তি দেখিয়ে তাদের প্রশ্ন করা যায় না তারা কেন এলেন না। বেশির ভাগ রিলিফ সামগ্রী জনগণের হাতে পৌঁছায় না এই দুটি অভিযােগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব নিতান্ত বাজে কথা। আমাদের দেশকে খাটো করার জন্যই শুধু এসব প্রচার করা হচ্ছে। আমাদের দেশ দুর্নীতিমুক্ত দমন কথা আমি বলি না। আমরা অনেক কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছি, অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে ও অনেক বিচারাধীন রয়েছে। আমরা দুর্নীতিমুক্ত হতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে রক্ষীবাহিনী জনগণের উপর অত্যাচার করে তাদেরহত্যা করে। এই প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, আমাকে সাড়ে সাত কোটি মানুষের একটি দেশের প্রশাসন চালাতে হয়। আমাদের যােগাযােগ ব্যবস্থা ভালাে নয়। এমন অনেক আছে যারা স্বাধীনতা সংগ্রামকালে যে সব অস্ত্রশস্ত্র পেয়েছিলেন সেসব এখনাে সরকারকে ফেরত দেননি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে আমরা রক্ষীবাহিনী গঠন করেছি। অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে পুলিশকে সাহায্য করতে এটি একটি সরকারি আধা-সামরিক বাহিনী। এরা অত্যাচার ও হত্যা করে এই অপপ্রচার সত্যি দুঃখজনক। যারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করেন না তারাই শুধু এসব রটাচ্ছে।

পাকিস্তান ‘বিহারীদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে ৭ লাখ অবাঙালি আছেন, আপনারা তাদের বিহারী বলেন। যারা বাংলাদেশ থাকতে চাচ্ছেন তারা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ নাগরিক কিন্তু তিন লাখ অবাঙালি আছেন যারা পাকিস্তানে যেতে চান এবং আন্তর্জাতিক রেডক্রসের মাধ্যমে তারা এ মনােভাব ব্যক্ত করেন। কিন্তু পাকিস্তান তাদের নিচ্ছেন না। যারা আমাদের নাগরিক নয় তাদের আমরা কি করে রাখি, পাকিস্তানকে তাদের ফিরিয়ে নিতেই হবে। এছাড়া যে কোনাে উপায় নেই।

স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে সব সাফল্য লাভ করেছে তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের বিষয়সম্পদ ধ্বংস করে দেয়ার পর আমরা যােগাযােগ ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত করেছি, রাস্তাঘাট তৈরি করেছি। বন্দরগুলাে বিপদমুক্ত করেছি ও দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি। আমরা দেশকে একটি সংবিধান ও একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি দিয়েছি। দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা কমনওয়েলথ, ইসলামিক সম্মেলন ও জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন যােগ দিয়েছি এবং এখন আমরা রাষ্ট্রসংঘের সদস্যও। আমার মনে হয়, এ সবই অগ্রগতির পরিচায়ক।৩৭

রেফারেন্স:

১২ অক্টোবর ১৯৭৪, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত