দ্যা নিউ হেরাল্ড, কাঠমন্ডূ, ৩০ মার্চ, ১৯৭১
সম্পাদকীয়
পূর্ব পাকিস্তান
আমরা আশা করি আমাদের পাকিস্তানি বন্ধুরা এখন পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি ও পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাথে চলমান যুদ্ধের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়টি উপলব্ধি করবে। প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের অনুসারীদের বিরুদ্ধে – যা কেবল মানবতার অনুভূতি থেকে ‘বাংলাদেশ’এর মানুষদের প্রতিনিধিত্ব করে – তাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বারা পরিচালিত সামরিক অভিযানের ব্যাপারে এই উদ্বেগ। এটা অনস্বীকার্য যে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনা কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের উপর সঙ্ঘটিত নিষ্ঠুরতা সমগ্র বিশ্বকে আন্দোলিত করেছে। সত্যিকার অর্থে – পুর্ব বা পশ্চিমের যত দেশ আছে – সেখানকার কোন মানুষই পূর্ব বাংলার মানুষের আশাআকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন না করে পারবেনা।
পশ্চিম পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তানের অসহায় মানুষের বিরুদ্ধে – যারা স্বাধীনতা ছাড়া কিছুই চায়নি – তাদের বিরুদ্ধে নির্দয় সেনাবাহিনী লেলিয়ে দেয়। এতে করে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান একত্রে থাকার শেষ আশাটুকুও শেষ হয়ে যায়। সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলা করতে যেয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের জন্য অবর্ননীয় বিপদ সৃষ্টি করেন। যার থেকে তিনি সম্ভবত কখনো বেরিয়ে আসতে পারবেন না। পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে সেখানকার স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের বিরুদ্ধে তার নেয়া রক্তক্ষয়ী সেনা ব্যাবস্থা এযাবৎ কালে তার নেয়া সিদ্ধান্তসমূহের মধ্যে সবচেয়ে ভুল বলে প্রতীয়মান হয়।
পাকিস্তানি সামরিক শাসন দ্বারা আরোপিত কঠোর সামরিক সেন্সরশিপের কারণে পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য জানা কঠিন। কিন্তু এক টি জিনিস স্পষ্ট। পূর্ব পাকিস্তানিরা, যারা সংখ্যায় বেশি এবং নিরস্ত্র – তারা কঠোর সামরিক শাসকদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে। এটাও স্পষ্ট যে স্বাধীনতার জন্য তাদের হাজার হাজার মানুষ তাদের জীবন উৎসর্গ করছে।
পশ্চিম পাকিস্তানিরা যত দ্রুত উপলব্ধি করবেন যে পূর্ব পাকিস্তানিদের উপর তাদের কর্তৃত্ব বেশিদিন স্থায়ী হবে না তা তাদের জন্য মঙ্গলজনক। তারা সকল মিলিটারি অপারেশন বন্ধ করে – বর্তমান সংকটের অবসানের জন্য মুজিবুর রহমানের প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করতে পারে। যদিও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে এটি একটি দুর্বল ফেডারেশন হতে পারে।