বাংলাদেশে ৫ লক্ষ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করা সম্ভব
নিউইয়র্ক: হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে জানা গেছে যে, আধুনিক পদ্ধতির চাষাবাদ ও পর্যাপ্ত সার প্রয়ােগের মাধ্যমে বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন বর্তমানে ১ কোটি ২০ লাখ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫ কোটি টন লক্ষ মাত্রায় উন্নীত করা যেতে পারে। নিউইয়র্কের সাংবাদিকদের আয়ােজিত এক ভােজসভায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হােসেন এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও জ্বালানি প্রাপ্তির এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান যে, তার দেশের প্রাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাসের দ্বারা কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ জ্বালানি ও কৃষি কাজের জন্য প্রয়ােজনীয় সার উৎপাদনের চাহিদা মিটবে না। অফুরন্ত বিপুল পরিমাণে তা রপ্তানি করা যাবে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ১ হাজার কোটি ঘনফুট গ্যাসের মজুত পরীক্ষিত হয়েছে এবং আরাে ৯ হাজার কোটি ঘনফুট মজুত প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরাে বলেন, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের মন্ত্রণালয় ইতােমধ্যেই বঙ্গোপসাগরের এক বিরাট এলাকা। জুড়ে অনুসন্ধান চালানাের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরােপের কতিপয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করছে এবং আরাে একটি চুক্তি সম্পাদনের ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান ৫ হাজার স্কয়ার মাইল এলাকায় এই সন্ধান কার্য পরিচালনা করবেন। দেশের তেলসম্পদ অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান উপকূল ভাগে তেল অনুসন্ধান কার্য পরিচালনা করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে মাত্র দুটি সার কারখানা আছে এবং নিজস্ব গ্যাস মজুতের মাত্র ১ ভাগের সদ্ব্যবহার হচ্ছে। উন্নয়ন মূলধনের অভাবে বাকিটা অকেজো পড়ে আছে। মন্ত্রী বলেন, প্রয়ােজনীয় পুঁজি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সরকার বিদেশি পুঁজি বিনিয়ােগকারীদের আকৃষ্ট করার মতাে নীতি নির্ধারণের ব্যাপারটাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। স্বাধীনতা লাভের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু—তার ওপর ভয়াবহ বন্যা আর মুদ্রাস্ফীতির আঘাত এই সবকিছু মিলে আমাদের জাতীয় উন্নয়ন প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে। ড. কামাল হােসেন বলেন, আমরা রাষ্ট্রসংঘের সাহায্য চাই। দ্বিপাক্ষিক সহায়তাকে আমরা স্বাগত জানাই। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিবহণের প্রধান পথ হচ্ছে নদ-নদী সেই নদীর বেশ কয়েকটি সেতু নির্মাণের ব্যাপারে প্রাপ্ত মার্কিন সাহায্যের কথা তিনি এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন।
গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ সরকার পুঁজি বিনিয়ােগের যে নীতি ঘােষণা করেন তা ব্যাখ্যা করতে বলা হলে মন্ত্রী বলেন, এর ফলে জাতীয় পরিকল্পিত অর্থনীতির কাঠামাের মধ্যে বেসরকারি শিল্পসমূহ অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত হবে। তিনি বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে বিদেশি মূলধনকারীরা সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অংশগ্রহণ করতে পারবে এবং এতে তাদের সমস্ত যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে সরকারি খাতে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, জালানি, পাটজাত দ্রব্য, খনিজদ্রব্য, পরিবহণ পেট্রোকেমিক্যাল প্রভৃতি সর্বমােট ১৮ শ্রেণি শিল্প প্রকল্প নির্মাণ করা হবে। সরকারি খাতে কোন যৌথ উদ্যোগে বিদেশি মূলধন বিনিয়ােগকে স্বাগত জানানাে হবে। এ ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক আলােচনার মাধ্যমে কার কত অংশ থাকবে তা স্থির করা হবে। ব্যবস্থাপনা মূলধন বিনিয়ােগে বৈদেশিক অংশগ্রহণ প্রধানত জাতীয় স্বার্থের নীতির যে সমস্ত ক্ষেত্রে প্রয়ােজন এবং সেখানে ব্যবস্থাপনা কারিগরি জ্ঞানের অভাব রয়েছে। পুঁজি বিনিয়ােগের ব্যাপারে উৎসাহদানের জন্য আর সঞ্চয় এবং মূলধন তুলে নেয়ার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা সাপেক্ষে জাতীয়করণ স্থগিত করা এবং কর মওকুফসহ যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেগুলাে এশিয়া ও আফ্রিকার যেকোন দেশের মতই মূলধন বিনিয়ােগের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করছে।২৬
পৃষ্ঠা: ৫৪৯
রেফারেন্স:
৯ অক্টোবর ১৯৭৪, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত