২২ মে শনিবার ১৯৭১
চট্টগ্রামের লালদীঘিতে এক জনসভায় নেজামে ইসলামের মহাসচিব মওলানা সিদ্দিক আহমদ বলেন, রাষ্ট্রবিরােধী ব্যক্তিদের তৎপরতা বন্ধ করার কাজে সেনাবাহিনীকে সাহায্য করা শুধু শান্তি কমিটির দায়িত্ব নয়, সে দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিকের । মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে ঘােষণা করা হয় : পাকিস্তানিদের উন্নয়ন কাজে অর্থনৈতিক সাহায্য অব্যাহত রয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মিয়া তােফায়েল নতুন করে জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচন দাবি করেন। রংপুরে সাবেক এম. এন. এ. সিরাজুল ইসলাম ও সাবেক এম. পি. এ. আবদুর রহমান এক যুক্ত বিবৃতিতে সেনাবাহিনীকে সমর্থনদানের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। আবদুল গফুর বি, এ-কে আহ্বায়ক করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ওয়ার্ড শান্তি কমিটি গঠিত হয়। সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গাফফার খান জালালাবাদে এক বিবৃতিতে বলেন, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের বক্তৃতা ও সামরিক আইন জারির ঘােষণা আমি শুনেছি। বাঙালিরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের ওপর এসেছে ত্রাসের শাসন। এটি ঘটলই-বা কেন? বাঙালিরা প্রকৃত মুসলমান। অন্য যে-কোনাে ব্যক্তির চেয়ে তারা পাকিস্তানের প্রতিবেশি অনুরক্ত। তাদের চেষ্টাতেই পাকিস্তান সৃষ্টি হয় । পাঠান নেতা বলেন, বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সংখ্যাগরিষ্ঠরা কখনাে দেশ ভাঙতে চায় না। সুতরাং মুজিব সাহেব পাকিস্তানকে নষ্ট করতে চাননি। পাকিস্তান যদি ধ্বংস হয় তবে তা হবে জনাব ভুট্টো ও কাইয়ুম খানের ভুল নীতির জন্য। বাদশা খান বলেন, পাকিস্তান সরকার যদি সত্যিই দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করতে চান তাহলে মুজিব সাহেব ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যে এক শান্তিপূর্ণ বােঝাপড়া করার জন্য আমি মধ্যস্থতা করতে তৈরি আছি। পাকিস্তান সরকার যদি শান্তিপূর্ণ। উপায়ে সমস্যা সমাধানের পথ বেছে নেন তাহলে আমি বাংলাদেশে যেতে প্রস্তুত। পাখতুন নেতা বলেন, উপস্থিত যা চলছে তা পাকিস্তানকে সংঘবদ্ধ করার জন্য নয়, তা হলাে ক্ষমতা লাভের লড়াই। পাঞ্জাবের পুঁজিপতি ও জান্তারা নিজেদের জন্য ক্ষমতা চান। হতভাগ্য বাংলার কোনাে অপরাধ নেই। তার অপরাধ হলাে সে নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। আজ বাংলায় যে খেলা চলছে পাকিস্তান সৃষ্টি হবার পর পাখতুনদের সাথে একই খেলা চলেছিল। গাফফার খান বলেন, বাঙালিরা জয়লাভ করেছে সারা পাকিস্তানের নির্বাচনে। এখন তাদের এই বলে দোষারােপ করা হচ্ছে, তারা পাকিস্তান ভেঙে দিতে চায় । আরও বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের ৬ দফা কর্মসূচি পাকিস্তানের অখণ্ডতার পক্ষে বিপজ্জনক।
৬ দফা যদি পাকিস্তানের সংহতির পক্ষে বিপজ্জনকই হয়, তাহলে সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ কেন গােড়াতেই এর ওপর বিধিনিষেধ আরােপ করেননি? বাংলাদেশে ৬ দফার ওপর ভিত্তি করে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করেছে । এ ছাড়া ইয়াহিয়া খান যখন বাংলায় যান এবং শেখ মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তখন তিনি মুজিব সাহেবকে পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রী বলে ঘােষণা করেন। ৬ দফা যদি পাকিস্তানের সংহতির পক্ষে বিপজ্জনক হয় তাহলে এসব কথার অর্থ কি? আসল কথা হলাে, মুজিব সাহেব নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন এবং তারই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবার কথা। সীমান্ত গান্ধী আরও বলেন, পাকিস্তানি জনসাধারণের কাছে আমি এ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ সবসময়ই ধর্মের নামে আমাদের সঙ্গে হঠকারিতা করেছেন। তারা ইসলামের কথা বলেন। আজ বাংলায় যা ঘটছে তা কি ইসলাম ও পাকিস্তানের কল্যাণের জন্য করা হচ্ছে? পাঞ্জাবের পুঁজিপতি ও কর্তৃপক্ষের কাছে আমার আবেদন, বাংলাদেশ সম্পর্কে ভ্রান্ত ও মিথ্যা প্রচার বন্ধ করুন। বাংলায় যুদ্ধ বন্ধ করুন। অযথা বল প্রয়ােগ করে পরিস্থিতির সুরাহা হবে না। সীমান্ত পার হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায়। ৩৩ লাখ ৭১ হাজার ৯শ ৩১ জন।
সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান