You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২১শে চৈত্র, ১৩৭৯

গ্রামীণ কৃষি উন্নয়নই জাতীয় লক্ষ্য

বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব এ, এইচ, এম, কামরুজ্জামান রাজশাহীর পটিয়ায় একটি গ্রামীণ প্রকল্পের উদ্বোধন এর সময় ঘোষণা করেছেন যে সরকার গ্রামীণ জীবনের মানোন্নয়নের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এবং যেকোন মূল্যেই হোক না কেন গ্রামীণ জীবনের পরিবর্তন সাধনের জন্য সরকার সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। গ্রামোন্নয়নের ওপরই দেশের সার্বিক উন্নয়ন নির্ভরশীল। এ কারণে গ্রামোন্নয়নের জন্য সরকার তার বাজেটের এক বিরাট অংশ ব্যয় করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী দেশের জনসাধারণকে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। জানা গেছে, উন্নয়ন পরিকল্পনায় কৃষি খাতের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। মোট উন্নয়ন পরিকল্পনার এক-তৃতীয়াংশ কৃষি খাতে ব্যয় করা হবে বলেও জানা গেছে। কৃষি উপকরণ উৎপাদনের জন্য বেশ কিছু সংখ্যক কৃষি শিল্পও স্থাপন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। মূলতঃ দেশের সার্বিক উন্নয়ন গ্রামীণ উন্নয়ন এর উপরই সর্বাধিক নির্ভরশীল। আর গ্রামের উন্নয়ন বলতে গ্রামীণ কৃষি উন্নয়নকেই বুঝায়। বাংলাদেশ একটি কৃষি-নির্ভর দেশ। এদেশের বৈশিষ্ট্যই হল কৃষি জীবন-কেন্দ্রিক। কৃষি উন্নয়নের সঙ্গেই জড়িত রয়েছে এদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের ভাগ্য। সরকার কৃষি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছেন। কৃষির সার্বিক উন্নয়নের কথা সরকার সবিশেষ বিবেচনা করছেন। বস্তুতঃ আমাদের দেশের বর্তমান যে আর্থিক মেরুদণ্ড তা সোজা ও শক্ত করার জন্য আবশ্যক কৃষি উন্নয়ন। কৃষি উন্নয়ন এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে জাতীয় উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সংগ্রাম আজ আমাদের সামনে। জাতির ভবিষ্যৎ যদিও সম্ভাবনাময় তবু তার জন্য বহুৎ কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করতে হবে এদেশের মানুষকে। যতদিন দেশে কৃষি খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা যাবে না ততদিন দেশের সার্বিক কল্যাণ চিন্তা করা বৃথা। আমরা লক্ষ্য করছি-সরকার এই বিষয়টা সবার সঙ্গে বিবেচনা করছেন বলেই আগামী বাজেটে গ্রামীণ কৃষি ব্যবস্থা ও কৃষকের জীবনের উন্নতি সাধনের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষি প্রধান দেশ এর মূল আর্থিক শক্তির যোগান যেহেতু কৃষি খাত থেকেই আসে সেহেতু অবশ্যই কৃষি উন্নয়ন সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। সরকার এ ব্যাপারে একমত বলে আমরা মনে করি।

প্রথম জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা

ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা গত রবিবার শেষ হলো। গত শুক্রবার বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা সহকারে এ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী। বাংলাদেশ এমেচার এথলেটিক এসোসিয়েশন আয়োজিত এই জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবার নয়টি বিষয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্ট হয়েছে। মাত্র দেড় বছর বয়সের একটি রাষ্ট্রের ক্রীড়াবিদদের এই সাফল্য প্রদীপ্ত আশারই ফলশ্রুতি। এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ক্রীড়াবিদ, চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জনকারী দল সহ যে দল বা টিম এবং ক্রীড়াবিদরা অংশগ্রহণ করে জাতীয় ক্রীড়ার উন্নয়নে নিজেদের নিয়োজিত করেছেন, সারা দেশবাসীর সাথে আমরাও তাদের অভিনন্দন জানাই।
সুস্থ জীবন ধারার জন্য খেলাধুলা ও শরীরচর্চা অবশ্যই প্রয়োজনীয়। জাতি গঠনের কাজে সুস্থ সবল মানুষ অপরিহার্য। তাছাড়া দেহ সুস্থ থাকলে মন সুস্থ থাকে। মন আর দেহের সুস্থতায় উৎসারিত হয় কর্মশক্তি, সংগঠিত হয় মনোবল-চরিত্রবল এবং বিকাশ ঘটে শৃঙ্খলাবোধের। আমাদের ঝিমিয়ে পড়া বা তার চাইতেও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বলা উচিত, আজকের দিনে আমাদের যুব শক্তির একটি বিরাট অংশ যখন কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিতে তাড়িত হয়ে নানা ধরনের সামাজিক অনাচার ব্যধিতে জরাগ্রস্ত, তখন খেলাধুলা ও শরীরচর্চার মত প্রকৃষ্টতম ব্যবস্থার দিকে তাদের আকর্ষিত করার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সেক্ষেত্রে এই প্রথম জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অবদান সুদূরপ্রসারী হতে বাধ্য।
কেননা এ প্রতিযোগিতায় যারা অংশগ্রহণ করেছেন তারা তো বটেই-যারা দর্শক হিসেবে মাঠে উপস্থিত হয়েছেন, তারাও অন্ততঃ যে সময়টায় প্রতিযোগিতা চলছিলো, সেই সময়টার জন্য হলেও অন্য সবকিছু ভুলে থাকতে সক্ষম হয়েছিলেন। এতে করে যুবসমাজের যারা হাইজ্যাকিং বা মারপিট সহ অন্যান্য অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকতেন, তারাও সামাজিক জীবনে দু’দন্ডের শান্তি দিতে পেরেছিলেন। এ লাভ টাই বা কম কিসে!
অন্যদিকে এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা আমাদের জাতীয় ক্রীড়াবিদদের চিনে নিতে পারলাম। ক্রীড়া ক্ষেত্রে আমাদের ভাবী মহীরূহগুলোর অঙ্কুরোদগম প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হলাম। পাকিস্তানি উপনিবেশবাদী শাসনামলে সে সুযোগ আমাদের কখনো হয়নি। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া জগতে প্রবেশ দ্বার বাঙালিরা খুব বেশি এর আগে ডিঙ্গাতে পারেনি। এবার সেই শৃংখল বন্ধন ছিন্ন হলো। কিন্তু এবারের জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সময় নির্ধারণ সম্পর্কে এ প্রসঙ্গে কিছু প্রশ্ন এসে যায়। খেলাধুলা মূলতঃ মানুষের দৈহিক সরলতারই একটি নিয়মতান্ত্রিক স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ। আর এই প্রকাশের জন্য সময়টা অবশ্য একটি শর্ত। কেননা বিভিন্ন ঋতুতে তাপমাত্রা, বায়ুর আদ্রতা ভেদে মানুষের দেহে ও নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়ে থাকে। গ্রীষ্ম কালটাতে সব সময়ই প্রায় সব দেশের মানুষই যে কোন ভারী কাজ-কর্ম এড়িয়ে চলেন, খেলাধুলা তো দূরের কথা। মূলতঃ এ সময়টা অনেকটা ‘রিল্যাক্সিং’ কাল হিসেবেই বিবেচিত। সে জন্যই বিশ্বের অনেক দেশেই শীতকালটা হচ্ছে খেলাধুলার জন্য প্রকৃষ্ট সময়। বাংলাদেশ ক্রীড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা সম্ভবতঃ এ কথা ভুলে গিয়ে থাকবেন। তা না হলে এহেন একটি জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা পরিচালনার জন্য তারা এই গ্রীষ্মকালটা বেছে নেবেনই বা কেন? এর ফলে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের যে কি রকম ঝক্কি পোহাতে হয়েছে-প্রতিযোগিরাই তা বুঝছেন। এতদসত্ত্বেও প্রতিযোগিরা যে কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন, সারা জাতি সে জন্য গর্বিত। আমাদের বিশ্বাস, বাংলাদেশ ক্রীড়া ও নিয়ন্ত্রণ বোর্ড ভবিষ্যতে এ দিকটার প্রতি মনোযোগী হবেন।

প্রেসিডেন্ট লননলের ভীমরতি

কম্বোডিয়ার সামরিক প্রেসিডেন্ট লননল সরকার জ্যোতিষীদের উপর ক্ষেপে গিয়ে ভারী আজব কান্ডকারখানার অবতারণা করেছেন। মুক্তিবাহিনী তীব্র আক্রমণের মুখে প্রেসিডেন্ট দিশেহারা হয়ে অবশেষে জ্যোতিষীদের ধরে জেলে পুরছেন। জ্যোতিষীদের অপরাধ? তারা লননল সরকারের পতন হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট লননল মুক্তি বাহিনীর আক্রমণ সামলাতে না পেরে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও প্রিন্স নরোদম সিহানুকের সমর্থকদের পাইকারী হারে গ্রেপ্তার করছেন এবং এই ঢালাও ধরপাকড়ের কবলে জ্যোতিষীদের নিস্তার দিচ্ছেন না।
গত মাসের মাঝামাঝি প্রেসিডেন্ট ভবনে বোমা বর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকার কম্বোডিয়ায় নতুন নতুন নিবর্তনমূলক আইন প্রবর্তন করেছেন এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার জন্য কম্বোডিয়ার নিরীহ জনসাধারণের ওপর মার্কিন যুদ্ধবাজদের সহায়তায় হামলা চালাচ্ছে।
ওই দিকে সত্তর সালের প্রিন্স নরোদম সিহানুককে ক্ষমতাচুত্য করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট লননল। সত্তর সাল থেকে প্রিন্স নরোদম সিহানুকের সমর্থনে প্রায় সবকটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে লননল সরকারকে উৎখাতের জন্য মুক্তি সংগ্রাম শুরু করেছেন। কম্বোডিয়ায় একদিকে স্বাধীনতাকামী মুক্তি সংগ্রামীদের আক্রমন অব্যাহত রয়েছে অপরদিকে দিনের পর দিন সরকার জনগণের মৌলিক অধিকার খর্ব করে কম্বোডিয়া স্বাধীনতা সংগ্রাম কে দাবিয়ে রাখতে চাইছেন। মার্কিন বোমারু বিমানগুলা লননলের সমর্থনে মুক্তি বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। কিন্তু মুক্তিবাহিনী রাজধানী নমপেনের অনতিদূরে প্রচন্ড আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট লননল মুক্তি বাহিনীর আক্রমণে দিশেহারা তো হয়েছেনই, উপরন্তু কর্মকাণ্ডের জন্য মাথা খেয়ে বসেছেন। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে তিনি দেশের জ্যোতিষীদের ওপর সমস্ত ঝাল উদগীরণ করছেন। যেসব জ্যোতিষীর বিরুদ্ধে কোনো রকম সুস্পষ্ট অভিযোগ নেই সেইসব জ্যোতিষীদের তিনি কারারুদ্ধ করেছেন। ভবিষ্যদ্বাণী করাই জ্যোতিষীদের কাজ। তাই তারা যদি লননল সরকারের পতনের ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকেন, তাহলে কি কোন ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন? আমাদের ধারণা সামরিক প্রেসিডেন্ট লননলের ভীমরতি ধরেছে। মুক্তিবাহিনীর মারের মুখে টিকতে না পেরে জ্যোতিষীদের বন্দি করে কম্বোডিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামকে পর্যন্ত করা যাবেনা। কারণ স্বাধীনতাকামীদের বিজয়কে কোন শক্তি টুটি টিপে হত্যা করতে পারেনা। তাই বলি, প্রেসিডেন্ট লননল ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন। জ্যোতিষীদের গ্রেপ্তার করে পতনের হাত থেকে বাঁচোয়া নেই। প্রবর্তনে বলেঃ দরবারের ঠাঁই নেই, ঘরে এসে বউ কিলাই।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!