১৭ মে সােমবার ১৯৭১
… অনুপ্রবেশকারী ও দৃষ্কৃতকারীদের (মুক্তিযােদ্ধা) রাষ্ট্রবিরােধী কার্যকলাপ যাতে আর প্রসারলাভ করতে না পারে সে ব্যাপারে সরকারের সাথে সহযােগিতা করার জন্য। সামরিক শাসন কর্তৃপক্ষ জনসাধারণের প্রতি নির্দেশ দেন। সাবেক এম এন এ আবুল কাসেমের মােহাম্মদপুরস্থ বাসভবনে ঢাকার সর্বস্তরের নাগরিকদের প্রতিনিধিবৃন্দের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জামায়াতে ইসলামী নেতা মেজর জেনারেল (অব.) ওমরাহ খান সভাপতিত্ব করেন। খাজা খয়রুদ্দিন, আবুল কাশেম, শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক গােলাম আজম, মেজর (অব.) আফসারউদ্দিন, দেওয়ান ওয়ারাসাত হােসেন খান ও তােহা বিন হাবিবুর বক্তৃতা করেন। সভায় দেশদ্রোহীদের (মুক্তিযােদ্ধা) বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সামরিক কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানাে হয়। পাকিস্তানের আদের্শে বিশ্বাসীদের রাজনৈতিক মতপার্থক্য বিসর্জন দিয়ে তাদের সাধারণ শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানানাে হয়। পাকিস্তান বিরােধীদের নির্মূল করার কাজে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহযােগিতা করার জন্য জনসাধারণের প্রতি অনুরােধ জানানাে হয়। শান্তি কমিটির নাম পরিবর্তন করে শাস্তি ও সংহতি কমিটি’ রাখা হয়। দেওয়ান ওয়ারাসাত আলী খান, সুলেমান ওসমানী, আনােয়ারুল হক, সাবির আলী, নইম মালিক এবং এ. এইচ, মালিককে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির নির্বাহী পরিষদে কো-অপ্ট করা হয়।
দেওয়ান ওয়ারাসাত হােসেন খান, সৈয়দ খাজা খয়রুদ্দিন, শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক গােলাম আজম, আফতার আহমদ খান, আবুল কাসেম, মােঃ সাব্বির আলী, জহুর আহমদ, মেজর (অব.) আফসার উদ্দিন, এ. কে. রফিকুল হাসান, মােজাফফর আহমদ, এ. এ. মল্লিক, এস, এম, জিয়াউল হক, আফতাব আহমদ সিদ্দিকী, এ. এইচ, মালিক, মােঃ নূরুল আঈন, আনকার মালিক, মকবুল ইকবাল, এস. এইচ. হাসান, এ. এন, মালিক, আশেয়ারুল হক, আখতার হামিদ খান, হাসান রাজা, সুলায়মান ওসমানী ও তােহা বিন হাবিবকে প্রাদেশিক শান্তি কমিটির জেনারেল বডির সদস্য মনােনীত করা ঢাকায় একাধিক ঘরােয়া সভায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা জেনারেল (অব.) ওমরাহ খান ঢাকাবাসীর উদ্দেশে বলেন, পাকিস্তানে এখন দুটি দল। একটি পাকিস্তানপন্থী, অপরটি পাকিস্তানবিরােধী। পাকিস্তানবিরােধীদের খুঁজে বের করার ব্যাপারে সেনাবাহিনীকে সহযােগিতা করুন। পাকিস্তানের শত্রু, রাষ্ট্রবিরােধী ব্যক্তি ও অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করুন। যদি তাদেরকে সামনে থেকে মােকাবিলা করতে না পারেন তবে পেছনে থেকে আঘাত করুন। এসব সভায় অধ্যাপক গােলাম আজম, আবুল কাসেম, খাজা খয়রুদ্দিন, মেজর (অব.) আফসারউদ্দিন বক্তৃতা করেন। সামরিক শাসনকর্তা জেনারেল টিক্কা খান উপ-সামরিক শাসনকর্তাদের পুলিশ অফিসার বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রয়ােগের অধিকার প্রদান করেন। জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেন সামাজিক কমিটিতে বলেন, ভারতে বিপুলসংখ্যক শরণার্থী আগমনের ফলে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তা কেবল। ভারত-পাকিস্তানের সমস্যা নয়, একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান