৪ মে মঙ্গলবার ১৯৭১
জাতীয় পরিষদের সাবেক বিরােধীদলীয় উপনেতা শাহ আজিজুর রহমান ঢাকায় এক বিবৃতিতে বলেন, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ আন্তর্জাতিক বিধি ও জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী। আমি ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিতে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কায়েদে আজম আমাদের কাছে পাকিস্তান আমানত রেখে গেছেন এবং আমাদের যে-কোনাে মূল্যে তা রক্ষা করতে হবে। শাহ আজিজ বলেন, পূর্ণ ও অবাধ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া রাজনৈতিক দলগুলােকে সর্বাধিক সুযােগ-সুবিধা দিয়েছেলেন। পূর্ব পাকিস্তানের বৃহত্তম দল আওয়ামী লীগ জোর-জবরদস্তি ও প্রতারণার মাধ্যমে সাম্প্রতিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এই দলটি প্রেসিডেন্টের দেওয়া সুবিধাকে ভুল বুঝেছিল। নিজেদের ইচ্ছামাফিক দেশ শাসন করার, পূর্ণ গণতন্ত্র এবং শান্তিপূর্ণ সামাজিক-অর্থনৈতিক জীবন পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে সুবর্ণ সুযোেগ এসেছিল, চরম গোঁয়ার্তুমি, অধৈর্য ও ঔদ্ধত্যের মাধ্যমে তারা নিজেরাই তা হারিয়েছে। আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় সশস্ত্র ও শ্লোগানমুখর উন্মত্ত তথাকথিত রাজনৈতিক কর্মীরা ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে সম্পূর্ণরূপে তাদের আজ্ঞাবহ করে তােলে।
গত ২৫ মার্চ অনুশােচনার বােধশূন্য অরাজক একনায়কত্ববাদের গ্রাস থেকে অচেতন দেশকে সশস্ত্রবাহিনী উদ্ধার করা পর্যন্ত এই অবস্থা বিরাজমান ছিল। সেনাবাহিনী কর্তৃত্ব গ্রহণ করার মুহূর্তটি পর্যন্ত অসহায় দেশবাসীর মাথা সম্পূর্ণরূপে নুয়ে পড়েছিল। তিনি বলেন, পাকিস্তানকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে ২৫ মার্চ হস্তক্ষেপ করা ছাড়া সেনাবাহিনীর হাতে অন্য কোনাে বিকল্প পথ ছিল না। আমাদের ঘরােয়া ব্যাপারে ভারতের নগ্ন হস্তক্ষেপ আন্তর্জাতিক আচরণ ও জাতিসংঘ সনদের লজ্ঞান ছাড়া আর কিছু নয়। সেনাবাহিনীর সময়ােচিত হস্তক্ষেপ ও আল্লাহর অশেষ কৃপায় দেশের অর্থনৈতিক জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসমূহের ধ্বংস রােধ হয়েছে। খুলনায় শান্তি কমিটির উদ্যোগে আয়ােজিত এক জনসভায় সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী খান এ, সবুর বলেন, সামান্য কয়েকজন ভারতীয় দালাল ছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ বাঙালি জাতীয়তাবাদের আদর্শ প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদে দৃঢ় আস্থা পােষণ করে গর্ববােধ করছেন। সভায় সাবেক প্রাদেশিক মন্ত্রী আমজাদ হােসেনও বক্তৃতা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সম্পর্ক সংক্রান্ত কমিটি বাংলাদেশে যুদ্ধের অবসান না। হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানকে সর্বপ্রকার সামরিক সাহায্য বন্ধ রাখা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমােদন করে। প্রস্তাবে বলা হয় পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানকে সব ধরনের সামরিক সাহায্যদান বন্ধ রেখে পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাণ কাজ শুরু করা হােক।
সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান