You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.12 | ১২ এপ্রিল সােমবার ১৯৭১ - সংগ্রামের নোটবুক

১২ এপ্রিল সােমবার ১৯৭১

বাংলাদেশ সরকারের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার (ওয়ার ক্যাবিনেট) নাম ঘােষণা করা হয়। রাষ্ট্র প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। উপরাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ মুক্তিযুদ্ধের পরিচালনা ও সমন্বয় সাধন করবেন। অপর সদস্যরা হলেন খন্দকার মুশতাক। আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এ, এইচ, এম, কামরুজ্জামান।  ঢাকায় সামরিক কর্তৃপক্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ ছাড়া সরকারি বিভাগ, স্বশাসিত ও আধা-স্বশাসিত সংস্থাসমূহের সকল কর্মচারীকে সর্বশেষ ২১ এপ্রিলের মধ্যে কাজে যোগদানের নির্দেশ দেন। নির্দেশে বলা হয়, এরপর অনুপস্থিত কর্মচারীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে।  প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি সামসুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক এ, এস, এম, ইউসুফ, সাবেক পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি আবদুল আওয়াল ও মােহাম্মদ হােসেন ঢাকায় জেনারেল টিক্কা খানের সাথে সাক্ষাৎ করে প্রশাসনকে পূর্ণ। সহযােগিতার আশ্বাস দেন। | মুসলিম লীগের নেতা খান এ. সবুর ঢাকায় এক সভায় বলেন, বেআইনি ঘােষিত আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান কোনাে অবস্থাতেই নিখিল পাকিস্তান ভিত্তিতে আহুত জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে বসতে রাজি ছিলেন না। তাই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খান কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছেন। এ ছাড়া দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় প্রেসিডেন্টের আর কোনাে বিকল্প পথ ছিল না। সবুর খান কোনাে রকম দয়া না দেখিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের (মুক্তিযােদ্ধা) খতম করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আবেদন জানান।

তিনি সন্দেহজনক লােক দেখামাত্রই তাদের আটক করে সামরিক কর্তৃপক্ষের হাতে সমর্পণ করার আহবান জানান।  জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনার এবং অনুপ্রবেশকারীদের মােকাবিলা করার লক্ষ্যে জনগণকে প্রস্তুত করার জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশে ঢাকায় মৌলবী ফরিদ আহমদের নেতৃত্বে শান্তি কমিটির নয় সদস্যের একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়। ইসলামিক রিপাবলিক পার্টির সভাপতি মওলানা নূরুজ্জামান কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং ব্যারিস্টার কোরবান আলী, ওয়াজি উল্লাহ খান, আজিজুর রহমান, মােস্তাফিজুর রহমান, এডভােকেট কাজী ফিরােজ সিদ্দিকী (চট্টগ্রাম), এ. কে. নূরুল করিম (স্বতন্ত্র সদস্য প্রাদেশিক পরিষদ) ও মাহমুদ আলী সরকার কমিটির সদস্য মনােনীত হন।  হানাদার পাকিস্তানিদের সাথে চাদপুরে মুক্তিবাহিনীর সংঘর্ষ হয়। ঈশ্বরদী ও পাবনায় উভয় দলের মধ্যে গােলাগুলি বিনিময় হয়।

ঢাকায় নিযুক্ত একজন বিদেশি কূটনীতিকের বরাত দিয়ে ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয় কোনাে সন্দেহ নেই যে পূর্ব পাকিস্তানে বিপুল ধ্বংসলীলা চালানাে হয়েছে। এটি আক্ষরিক অর্থেই রক্তস্নান। চেঙ্গিস খানের সঙ্গে এর কোনাে পার্থক্য ছিল না। সেনাদল এখন বিদ্রোহীদের দমন কাজে ব্যস্ত। ট্যাঙ্ক চড়ে বেড়াচ্ছে ঢাকার বুকে। ধ্বংসস্তৃপে পরিণত হয়েছে বিপুল বাড়িঘর টাইমের ভাষ্য গৃহযুদ্ধের প্রথম দফা শেষ হয়েছে গত সপ্তাহে। জয়ী দল এখনও পর্যন্ত শক্তিশালী পাক সেনাবাহিনী। তবে এই-বিজয়ের অর্থ এই নয় যে, ৫৮ মিলিয়ন পশ্চিম পাকিস্তানি অনির্দিষ্টকালের জন্য ৭৮ মিলিয়ন বাঙালিদের শাসন করতে পারবে। দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষ ভিন্ন এক কাহিনীর জন্ম দিতে পারে। এই যুদ্ধ অব্যাহত থাকতে পারে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর।  টাইমের অভিমত পাকসেনারা কিছুদিন হয়তাে ঢাকা ও অন্যান্য শহরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারবে। কিন্তু ৫৫ হাজার বর্গমাইল গ্রামীণ অঞ্চল ও বিপুলসংখ্যক বিক্ষুব্ধ জনগণকে দীর্ঘস্থায়ী নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রত্যাশা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক ‘অ্যামেরিকান ফ্রেন্ডস অব পাকিস্তান’ সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে এক আবেদনে, অবিলম্বে পূর্ব বাংলার সমস্যা সমাধানের জন্য আইনগত প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। তারা বলেন, কোনাে সরকারেরই অস্ত্র ও বল প্রয়ােগের মাধ্যমে জনসাধারণের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাদের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার নেই।

সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান