২ মে রবিবার ১৯৭১
সকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কামান ও মর্টারের সাহায্যে রামগড়ের ওপর দুধারা আক্রমণ হানে। সারাদিন যুদ্ধের পর সন্ধ্যায় মুক্তিবাহিনী রামগড় ত্যাগ করে। পাকসেনারা রাতে রামগড়ে প্রবেশ করে হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযােগ করে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশের আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৪২৮ জন। মুসলিম লীগ নেতা খান এ. সবুর খান খুলনায় এক জনসভায় অনুপ্রবেশকারী (মুক্তিযােদ্ধা) ও তাদের সাহায্যকারীদের নির্মূলের কাজে নিয়ােজিত পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সহযােগিতা করার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান। পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো লাহােরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, দেশের একাংশে সামরিক আইন বলবৎ রেখে অপরাংশে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যেতে পারে। পশ্চিম পাকিস্তানে ক্ষমতা হস্তান্তর হলে তা দেখে পূর্ব পাকিস্তানিরা সেখানে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য উন্মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির গভীর প্রেরণা অনুভব করবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সভার বৈদেশিক সাহায্য বিষয়ক কমিটির এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা সংক্রান্ত সাব-কমিটির চেয়ারম্যান কর্নেলিয়াস গ্যালাঘর কলকাতায় বলেন, খােলা মন নিয়ে আমি এখানে এসেছিলাম। কিন্তু কয়েকজন শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলার পর আমি এখন নিশ্চিত যে, পূর্ব বাংলায় অতি সাংঘাতিক মাত্রায় ত্রাস, বর্বরতা ও গণহত্যা চলেছে। আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, পূর্ব বাংলায় জনসাধারণকে ভীতসন্ত্রস্ত করা হয়েছে। কিছুদিন আগ পর্যন্ত এটি পাকিস্তানের ঘরােয়া বিষয় ছিল। কিন্তু পাঁচ লাখ লােক যখন দেশ থেকে বিতাড়িত হলেন তখন এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববাসী নিশ্চয় সচেতন হবেন। জাতিসংঘে, যেখানে আমার দেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, তাদের উচিত পাকিস্তানের ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করে তাকে পরিষ্কার বুঝিয়ে দেওয়া এ ধরনের পরিস্থিতি বরদাস্ত করা যায় না। এই মর্মান্তিক ইন্ধন জোগানাে উচিত নয়। পাকিস্তান সরকারের কার্যকলাপে পূর্ব বাংলার জনমানসে অসন্তোষের বীজ ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান