১১ এপ্রিল রবিবার ১৯৭১
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ আর তার সাড়ে সাত কোটি সন্তান আজ চুড়ান্ত সংগ্রামে নিয়ােজিত। আমাদের এ সংগ্রামে জয়লাভ করতেই হবে এবং আমরা যে জয়ী হব। তা অবধারিত। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানতম লক্ষ্য হলাে বাংলাদেশকে শত্রুর কবল থেকে মুক্ত করা। মনে রাখবেন, আমরা আজ শত্রুর ওপর পাল্টা হামলায় নিয়ােজিত আছি। আমাদের এই মুক্তিসংগ্রামে ধর্ম, মত, শ্রেণী বা দল নেই । আমাদের একমাত্র পরিচয় আমরা বাঙালি। আমাদের শত্রুপক্ষ আমাদের বাঙালি হিসেবেই হত্যা করছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার সকল রকমের অত্যাচার, অবিচার, অন্যায় ও শােষণের অবসান ঘটিয়ে এক সুখী, সমৃদ্ধ, সমাজতান্ত্রিক শোষণহীন সমাজব্যবস্থা কায়েমে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলার মানুষের কাছে আমাদের আবেদন, আপনারা নিজের ওপর বিশ্বাস হারাবেন না। আমাদের চূড়ান্ত বিজয় সম্পর্কে মনে এতটুকু সন্দেহ পােষণ করবেন। । আমাদের এ সংগ্রাম সত্য ও ন্যায়ের সংগ্রাম, এ সংগ্রাম আজাদী ও স্বাধীনতার সংগ্রাম। এ কথা বলেছেন আপনার আমার তথা সাড়ে সাত কোটি বাঙালির মহান নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । ভুলে যান আজ আপনার ধর্ম-বর্ণ-পেশা। আজ আপনার আমার একমাত্র কর্তব্য নিজের যথাসর্বস্ব দিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও মুক্তিবাহিনীকে সহযােগিতা করা। আমাদের ঐক্য বজায় । থাকলে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কেন দুনিয়ার কোনাে শক্তিই আমাদের পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখতে পারবে না। ঝিকরগাছায় মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধে পাক সেনাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। চীন পাকিস্তানের ঘরােয়া ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানায়। চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে পাঠানাে এক চিঠিতে বলেন, চীন সরকার মনে করে বর্তমানে পাকিস্তানে যা ঘটছে তা পাকিস্তানের ঘরােয়া ব্যাপার। চীনা নেতা পাকিস্তানকে আশ্বাস দেন, ভারত পাকিস্তানের ওপর হামলা চালালে চীনা সরকার ও জনগণ সবসময় পাকিস্তান সরকার ও জনগণকে তাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ন্যায্য সংগ্রামে দৃঢ় সমর্থন দেবে।
সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান