You dont have javascript enabled! Please enable it!

৬ জুন রবিবার ১৯৭১

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আটক সকল গণপ্রতিনিধির অবিলম্বে মুক্তিদান, বাংলাদেশের মাটি থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপসারণ, স্বাধীনসার্বভৌম বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদান এবং পশ্চিম পাকিস্তানি শশাষকগােষ্ঠী কর্তৃক বাংলাদেশ থেকে অপহৃত ধনসম্পদ এবং বিগত আড়াই মাসে হানাদার বাহিনী। বাংলাদেশের যে ক্ষতি করেছে—একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে তা নির্ণয় করে লুণ্ঠিত সম্পদ ফেরত ও পূর্ণ ক্ষতিপূরণের মাধ্যমেই কেবল রাজনৈতিক সমাধান আসতে পারে। অন্যথায় রাজনৈতিক সমাধানের কোনাে প্রশ্নই উঠতে পারে না। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ কোনাে গোঁজামিলের সমাধান গ্রহণ করবে না।  অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সকল বাঙালি—হিন্দু, মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান এক সাথে লড়ছেন, বুকের তপ্ত রক্ত ঢেলে দিয়ে বাংলার মাটি সিক্ত করে আমরা এটাই প্রমাণ করেছি, আমরা অসাম্প্রদায়িক, এদেশের প্রতিটি প্রাণ ঐক্যবদ্ধ, অভিন্ন। আমরা এক সাথে লড়ছি, জয়ী আমরা হবই। সৈয়দ নজরুল ইসলাম তার ভাষণে প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী বাঙালিদের সাহায্য করায় ভারত সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ইয়াহিয়ার হানাদার বর্বর সৈনিকদের নির্মম অত্যাচারে অসংখ্য মানুষ দেশত্যাগ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।

শত্রুকে পরাজিত করার পর মুক্ত স্বদেশে আমরা আবার তাদের আপন ভিটেমাটিতে প্রতিষ্ঠিত করবই।  মুক্তিযােদ্ধাদের বীরত্বের প্রশংসা করে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বলেন, বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর বীর সৈনিকরা যে অসীম অটল মনােবলের পরিচয় দিয়েছেন সেজন্য আজ বাঙালি জাতি গর্বিত। মুক্তিযােদ্ধারা দেশমাতৃকার বীর সন্তান মুক্তিযুদ্ধে যেসব বীরযােদ্ধা শহীদ ও পঙ্গু হয়েছেন তাদের পরিবারবর্গের পুরাে দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকার গ্রহণ করছেন।  পৌঁছান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং বাংলাদেশের শরণার্থীদের আন্ত জাতিক সাহায্যের জন্য বিদেশ সফরের শুরুতে মস্কো গমন করেন  হল্যান্ড বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য ১৫ লাখ গিল্ডারের খাদ্য ও ঔষধ সাহায্য পাঠায়। জাতিসংঘ উদ্বাস্তু দফতরের হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান ইসলামাবাদ আসেন। জাতিসংঘ মহাসচিব উ থান্ট বলেন, জাতিসংঘ পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। জামায়াতে ইসলামীর প্রধান মওলানা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী মুসলিম বিশ্বের নেতৃবৃন্দের কাছে পাঠানাে এক স্মারকলিপিতে বলেন, বাঙালি। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা (বাংলাদেশ সরকার) মুসলিম বিশ্বে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি  সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করছেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরীহ বাঙালি মুসলমানদের হত্যা করছে বলে যে প্রচারণা চালানাে হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানােয়াট । এটা সম্পূর্ণ পরিষ্কার হয়ে গেছে, পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম জনসাধারণ কখনাে বিচ্ছিন্ন হতে চায়নি। এ অঞ্চলের মুসলমানরা ১৯৭১ সালের ১ মার্চ যে বিদ্রোহ শুরু হয় তাতে শরীক হয়নি। বাস্তব কথা হলাে, বিচ্ছিন্নতাবাদের এই আন্দোলন চরমপন্থীদের একটি অংশবিশেষই আরম্ভ করে—যারা ইসলামি ভাবাদর্শ সম্পর্কে কোনাে শিক্ষা পায়নি এবং নাস্তিক। | ওয়াশিংটনে একজন সরকারি মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের শরণার্থীদের স্থানান্তরের জন্য যুক্তরাষ্ট্র চারটি বড় আকারের বিমান দেবে। যুক্তরাষ্ট্র শরণার্থীদের জন্য সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করার বিষয় বিবেচনা করছে। চট্টগ্রাম রণাঙ্গনে চাঁদগাজীতে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের হামলা মােকাবিলা করে। এখানে সংঘর্ষে হানাদার বাহিনীর বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ধ্বংস হয় এবং ব্যাপক হতাহতের শিকার হয়।

সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!