You dont have javascript enabled! Please enable it!

৩ ডিসেম্বর শুক্রবার ১৯৭১

পাকিস্তান বিমান বাহিনী অতর্কিতে ভারতের বিভিন্ন বিমান ঘাঁটিতে একযােগে হামলা চালায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গ সফর করছিলেন। সন্ধ্যায় তিনি সফর বাতিল করে কলকাতা থেকে দিল্লি রওয়ানা হন। রাতে এক বেতার ভাষণে তিনি দেশবাসীকে চরম ত্যাগ স্বীকারের জন্য তৈরি হওয়ার আহ্বান জানান। ভারতের পূর্বাঞ্চল কমান্ডার লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরােরার অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ-ভারত যুক্ত কমান্ড গঠন করা হয়। পাকিস্তান বাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানে ফ্রন্ট উন্মুক্ত করে স্থল ও আকাশে ভারত আক্রমণ করার পর ভারত ও বাংলাদেশ বাহিনী সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশ সীমান্তে আক্রমণ শুরু করে। রাতে রাওয়ালপিন্ডিতে একজন সরকারি মুখপাত্র বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে। পাকিস্তান বিমান বাহিনী সেনাবাহিনীকে সাহায্য করছে। পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত রণাঙ্গনে যুদ্ধ চলছে। ভারতীয় বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানকে ঘিরে ফেলার প্রচেষ্টায় সীমান্তের ৭টি এলাকা দিয়ে প্রচণ্ডতম আক্রমণ পরিচালনা করে। ভারতীয় বাহিনী কয়েকটা রণাঙ্গনে কিছুটা সুবিধা করে নিলেও সার্বিকভাবে পরিস্থিতি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে পিআইএ-র ফ্লাইট বাতিল করা হয়। সামরিক কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যা থেকে ভাের পর্যন্ত ঢাকায় সান্ধ্য আইন জারি ও নিপ্রদীপ পালনের নির্দেশ দেন। ঢাকার গভর্নর ডা. এ. এম, মালিক রেডিওতে ভাষণ দেন। পিপলস পার্টি চেয়ারম্যান ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে তার দল একজন পূর্ব পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীসহ সহকারী প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণে রাজি আছে—এই মর্মে প্রেরিত এক জরুরি বার্তায় বলেন, তবে উপপ্রধানমন্ত্রীকে পূর্ণ ক্ষমতা দিতে হবে।

তাহলে তিনি উপপ্রধানমন্ত্রী হতে রাজি আছেন। যদি এ প্রস্তাব গৃহীত হয় তবে আগামীকালই মন্ত্রিসভা গঠন করা যেতে পারে। পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গােলাম আজম রাওয়ালপিন্ডিতে বলেন, কোয়ালিশন দলের প্রধান নূরুল আমিনকে প্রধানমন্ত্রী  নিয়ােগ করা হলে তার কোনাে আপত্তি নেই। কেননা বাংলাদেশ তামাশা বন্ধ করার জন্য পূর্ব পাকিস্তান সফররত মার্কিন সিনেটর উইলিয়াম স্যাক্সবি রাওয়ালপিন্ডিতে সাংবাদিকদের সাথে আলােচনাকালে বলেন, তিনি বেআইনি ঘােষিত আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সাক্ষাৎ করতে পারেননি। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার আলােচনাকালে শেখ মুজিবুর রহমান প্রসঙ্গ নিয়ে কথাবার্তা হয়। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য পুনরায় পাকিস্তান আসতে রাজি রয়েছেন।  প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে আলােচনার সময় তাকে জানানাে হয়, দেশের অখণ্ডতা রক্ষার জন্যই পাকিস্তানকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে । ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী জাতির উদ্দেশে এক বেতার ভাষণে বলেন, পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক হামলা চালিয়েছে। বাংলাদেশ-পাকিস্তানের যুদ্ধ এখন ভারতের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারতকে এ যুদ্ধ মােকাবিলা করতে হবে, পাকিস্তানের আক্রমণ প্রতিহত করতে হবে এবং তা ঐক্যবদ্ধভাবেই প্রতিহত করতে হবে। | ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং নয়াদিল্লিতে পার্লামেন্ট ভবনে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ভারতে মার্কিন অস্ত্র চালানের লাইসেন্স ও ইতিপূর্বে পেশকৃত অস্ত্রের অর্ডার বাতিল করে দিয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্যাতন বন্ধ করার ব্যাপারে প্রচেষ্টা চালানাের জন্য ভারত কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সরকারকে পরামর্শ দিয়ে আসছে। কিন্তু সে প্রচেষ্টা কোনাে সুফল বয়ে আনেনি। বাংলাদেশ থেকে শরণার্থী আগমনে ও ভারত সীমান্তে পাকিস্তানি গােলাবর্ষণে ভারতের নিরাপত্তা বিপদসঙ্কুল হয়ে পড়েছে।

সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!