২৩ নভেম্বর মঙ্গলবার ১৯৭১
প্রেসিডেন্ট জেনারেল এ. এম. ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা ঘােষণা করেন। ঘােষণায় তিনি বলেন, পাকিস্তান বৈদেশিক আক্রমণের মুখােমুখি হয়েছে। এবং দেশে মারাত্মক জরুরি অবস্থা বিরাজ করছে। পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জেড, এ, ভুট্টো বিশেষ বিমানে করাচি থেকে পিন্ডি আসেন এবং জেনারেল ইয়াহিয়ার সাথে একান্ত বৈঠকে নিলিত হন। জেনারেল ইয়াহিয়ার তলবে, অধিকৃত বাংলাদেশের গভর্নর ডা. এ. এম. মালিক বিশেষ বিমানে ঢাকা থেকে রাওয়ালপিন্ডি রওয়ানা হন। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তান সরকারের জনৈক মুখপাত্র বলেন, দেশের। পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তান ও ভারতীয় বিমানবাহিনীর মধ্যে আকাশ যুদ্ধ শুরু হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় বিমান অঘােষিত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় বাহিনী ইতােমধ্যে পূর্বাঞ্চলে অনেক ছােট ছােট অঞ্চল দখল করে নিয়েছে। যশাের ও সিলেট জেলায় অবস্থিত এসব অঞ্চলের কোনাে কোনােটি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। যদিও এখনও ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীরা (মুক্তিবাহিনী) যশাের এলাকায় পাকিস্তানি সীমান্ত ফাঁড়ি চৌগাছা ও সিলেট জেলার আটগ্রাম দখল করে রেখেছে। ভারতীয়রা (মুক্তিবাহিনী) আজ কুমিল্লা সেক্টরে নতুন ফ্রন্ট খুলেছে। পূর্ব সীমান্তে ভারতের ট্যাংক ও গােলন্দাজ বাহিনীর ব্যাপক হামলা সম্পর্কে পাকিস্তানের অভিযােগ অস্বীকার করে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর জনৈক মুখপাত্র বলেন, যশাের সেক্টরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী উস্কানিমূলক গুলি ছুঁড়লে উভয় বাহিনীর মধ্যে গােলাগুলি বিনিময় হয়। তবে এই যুদ্ধ ৪ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী ছিল । অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে উভয় বিমানবাহিনীর মধ্যে আকাশযুদ্ধ হয়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান উপমহাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের কাছে জরুরি বার্তা পাঠান। কেন্দ্রীয় জামায়াত নেতা মওলানা আবদুর রহিম, অধ্যাপক গােলাম আজম, এ. কে. এম. ইউসুফ ও আবদুল খালেক সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলােচনার জন্য পাকিস্তানের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।
সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান