সিংহলে পাক দালাল ত্রিদিব রায়ের মিশন ব্যর্থ
(বিলম্বে প্রাপ্ত) চট্টগ্রামের চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় গত ২৯শে নভেম্বর কলম্বােতে সিংহলের সাংবাদিকদের প্রশ্নবানে নাস্তানাবুদ হয়ে শেষ পর্যন্ত কবুল করেছেন যে, পূর্ববঙ্গে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেওয়া দরকার। নারীঘাতী, শিশুঘাতী ইয়াহিয়ার বিশেষ দূত হিসাবে গত ২৫শে নভেম্বর রাজা ত্রিদিব রায় সিংহলে যান। তার উদ্দেশ্য ছিল শাক্যবংশ গৌরবের সুযােগ নিয়ে ইয়াহিয়ার হয়ে সিংহলের বৌদ্ধ অধিবাসীদের কাছে ওকালতী করা। কিন্তু চারদিন ব্যর্থ চেষ্টা করে বিফল মনােরথ হয়ে রাজাবাহাদুর গত ২৯শে নভেম্বর ব্যাঙ্ককের পথে পাড়ি জমিয়েছেন। রাজাবাহাদুরের প্রচেষ্টা যে কি ভাবে ব্যর্থ হয়েছে তা টাইমস উইক এল্ডারের রাজনৈতিক ভাষ্যকার কয়েকটি কথায় চমৎকারভাবে প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন একটা ত্রিদিব রায়তাে দূরের কথা শত শত ত্রিদিব রায়ও সিংহলবাসীদের ইয়াহিয়ার অনুকূলে নিয়ে যেতে পারবে না। ইয়াহিয়ার এই | প্রয়াস অনেকটা দালাই লামাকে তিব্বতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য চৌএন লাই-য়ের কাছে দরবার করার মতই হাস্যকর। পূর্ববঙ্গে জঙ্গীশাহীর নির্মম অত্যাচারে সিংহলের অধিবাসীদের তীব্র ক্ষোভ আন্দাজ করতে পেরে সিংহল সরকার ত্রিদিব রায়কে তেমন আদর আপ্যায়ণ করতে ভরসা পান নি। সিংহল বেতারে রাজাবাহাদুরের সফর ও মােলাকাতের কথাও প্রচার করা হয় নি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী। শ্ৰীমতী বন্দর নায়কের সঙ্গে ত্রিদিব রায়ের সাক্ষাতের কথাও বেতার থেকে চেপে যাওয়া হয়। ত্রিদিব রায় সিংহলের বৌদ্ধ নেতাদের সঙ্গে আলাপ করেও সুবিধা পাননি। কিন্তু মহারাজার দালালীর চাকুরীটা টেকে কিনা সন্দেহ। সিংহলের সাংবাদিকদের প্রশ্নবানে জর্জরিত রাজা বাহাদুর ত্রিদিব রায় চোখের পানিতে নাকের পানিতে বড় বেসামাল কথা বলে ফেলেছেন। রাজাবাহাদুর স্বীকার করেছেন যে, পূর্ববঙ্গে অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করেছিল। শুধু তাই নয়, তিনি আরাে কবুল করেছেন, পূর্ববঙ্গে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার উপযুক্ত পন্থা হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেওয়া।
জয়বাংলা (১) ১: ৩৪ ॥ ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭১