১২ সেপ্টেম্বর রবিবার ১৯৭১
পাকিস্তান ডেমোেক্রটিক পার্টির সহ-সভাপতি মাহমুদ আলী পাকিস্তান সরকারের বিশেষ দূত হিসেবে ইউরােপ ও আমেরিকা সফর শেষে ঢাকায় বলেন, ইউরােপের বেতার, টিভি, সংবাদপত্রগুলাে একই সুরে প্রচার করে চলেছে যে, পূর্ব পাকিস্তানে একটা অঘটন ঘটে গেছে। পাকিস্তানের সাম্প্রতিক নির্বাচনে যে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে তাদের ক্ষমতা না দিয়ে সামরিক বাহিনী সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের জনগণের দাবি নস্যাৎ করতে চায়। কারণ নির্বাচনের ফলাফল পশ্চিম পাকিস্তানিদের মনঃপূত হয়নি।’ তিনি বলেন, ইউরােপের বুদ্ধিজীবীরা আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন, যা ঘটবার ঘটেছে। এখন যারা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে তাদের নেতার সাথে আপস করে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।’ তিনি বলেন, বিদেশিদের এই ভুল ধারণা সম্পর্কে আমরা তাদের জানিয়েছি। যে, ২৫ মার্চ সৈন্যবাহিনী তলব করার পর পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটেছে তার বিবরণ বিদেশি পত্র-পত্রিকায় থাকার কথা নয়। কারণ তখন বিদেশি সাংবাদিকদের নিরাপত্তার কারণে ঢাকা ত্যাগ করতে বলা হয়েছিল। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনায় পূর্ব পাকিস্তানে কত লােক মারা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পত্রপত্রিকাগুলাে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আমরা সেখানকার সাংবাদিকদের বলেছি, কত লােক মরেছে সেটা প্রশ্ন নয়। মূল প্রশ্ন হচ্ছে সৈন্য তলব করার প্রয়ােজন দেখা দিয়েছিল কি না। কেন ৭০ লাখ লােক ভারতে চলে গেল এ সম্পর্কেও তারা প্রশ্ন করেছে। আমরা বলেছি, গ্রামের লােকের যুদ্ধ সম্পর্কে কোনাে ধারণা নেই। সৈন্যবাহিনী। দেখলেই তারা ভয় পায়। তাই সৈন্যদের আসার কথা শুনে তারা গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশসমূহে এই ধারণা জন্মেছে যে, পাকিস্তানে নির্বাচনে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে তাদের সাথে আপস না করলে বর্তমানে সমস্যার সমাধান হবে না। আমরা তাদের বলেছি, নীতিগতভাবে আমরা এর বিরােধী নই। তবে নির্বাচনে যে দল জয়ী হয়েছে সেই দলের নেতা পূর্ব পাকিস্তানকে বিচিছন্ন করতে চেয়েছেন। এমন নেতৃত্বের সাথে আপস হতে পারে না। আজ তার সঙ্গে যদি কোনাে মীমাংসায় আসতে হয় তবে তা অখণ্ড পাকিস্তানের ভিত্তিতে হতে হবে।
সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান