You dont have javascript enabled! Please enable it!

নিক্সনের “দ্বিতীয় সর্বোত্তম সমাধান বনাম বাংলাদেশের স্বাধীনতা – মােহাম্মদ উল্লাহ চৌধুরী।

লন্ডন থেকে সংবাদ সরবরাহ সংস্থা এ, পি পরিবেশিত এক খবরে বলা হয়েছে যে পশ্চিম পাকিস্তানের ইয়াহিয়া সরকার ও বাংলাদেশের নেতাদের মধ্যে আলােচনা প্রারম্ভের প্রচেষ্টা হিসাবে মার্কিণ সরকার অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারের নেতাদের সাথে যােগাযােগ স্থাপন করেছেন। সংবাদে বলা হয়েছে যে লন্ডনস্থ এশীয় কূটনীতিকরা মনে করেন যে এ আলােচনার লক্ষ্য হচ্ছে এমন একটা সমাধান খুঁজে বের করা যেটাকে সংশ্লিষ্ট মহল দ্বিতীয় সর্বোত্তম” সমাধান বলে অভিহিত করেছেন।  

খবরে আরাে বলা হয়েছে যে, মার্কিণ কর্তৃপক্ষ “সর্বোত্তম” সমাধানের ব্যাপারে ইয়াহিয়া সরকারকে সন্মত করাতে ব্যর্থ হয়েছেন বলেই প্রতীয়মান হয়। কেননা, তা করতে গেলে বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ইয়াহিয়াকে একটা মীমাংসার আসতে হত। খবরে অবশ্য একথাও বলা হয়েছে যে ইয়াহিয়া সরকার শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে একটা আপােষ করতে অনিচ্ছুক নয়। কিন্তু তাতে একটা শর্ত রয়েছে, তা হল শেখ মুজিবকে এক পাকিস্তানের কাঠামােতেই তা করতে হবে। কিন্তু কূটনৈতিক মহলের মতে অনুরূপ আপােষের পথে কোন অগ্রগতি এ পর্যন্ত না হওয়া থেকে একথাই প্রমাণিত হয় যে আওয়ামী লীগ নেতা তখন আর এক পাকিস্তান বিশ্বাসী নন এবং তিনি সংশ্লিষ্ট মহলকে স্পষ্টভাবেই জানিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলকে স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন যে বাংলাদেশ প্রশ্নে তিনি তার দলীয় সহকর্মীদের তথা বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকারই পূর্ণ সমর্থক।

|মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের নিক্সন সরকারের সর্বোত্তম” সমাধানটা যে কি আমাদের জানা নাই। তবে তাদের আগাগােড়া ভূমিকা থেকে একথাই বুঝা যায় যে এ সৰ্বোত্তম সমাধানটা এক পাকিস্তানের কাঠামােতেই ছিল। মাত্র সেদিনও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মিঃ রজার্স। বাংলাদেশের ঘটনাবলীকে পাকিস্তানের জল্লাদ গােষ্ঠীর আভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে অভিহিত করেছেন। সংবাদটা পর্যালােচনা করলে একথাই বুঝা যায় যে পশ্চিম পাকিস্তানের ইয়াহিয়া সরকার এক পাকিস্তানের কাঠামাের আলােকে উদ্ভাবিত নিক্সন সরকারের সর্বোত্তম সমাধান ও মানতে রাজী হয়নি। তার ফলেই নিক্সন সরকারকে “দ্বিতীয় সর্বোত্তম সমাধান উদ্ভাবন করতে হয়েছে। সুতরাং এই তথাকথিত “দ্বিতীয় সর্বোত্তম সমাধান” ও যে এক পাকিস্তানেরই কাঠামােতে এবং সর্বোত্তম” সমাধানের চেয়েও নিকৃষ্ট তা সহজেই বুঝা যায়। কেননা, নিক্সন সরকার এই তথাকথিত “সর্বোত্তম”ও “দ্বিতীয় সর্বোত্তম” এর বিচারটা নিশ্চয় ইয়াহিয়া খানদের স্বার্থের আলােকেই করেছেন। সুতরাং মার্কিণ উদ্যোগের খবরটা সত্য হলেও তা যে। কোন মতেই বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষে গ্রহণযােগ্য হতে পারে না। তদুপরি বঙ্গবন্ধু শেখ। মুজিবুর রহমান যেক্ষেত্রে সর্বোত্তম সমাধানই” নাকচ করে দিয়েছেন সেক্ষেত্র তথাকথিত “দ্বিতীয় সর্বোত্তম সমাধান” মানার কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না।

জয়বাংলা (১) ১; ২৫। ২৯ অক্টোবর ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!