ইয়াহিয়ার পরস্পর বিরােধ ভাষণের প্রতিক্রিয়া। বেঈমান ইয়াহিয়া গত ২৮ শে জুন এক বেতার ভাষণ দিয়েছেন | জয়বাংলা | ২ জুলাই ১৯৭১
এই বেতার ভাষণে দুযমন ইয়াহিয়া সমস্ত পার্লামেন্টের ইতিহাসে চুনকালি মেখে ঘােষণা করলেন যে এবার তিনি নিজেই সংবিধান রচনা করবেন যে সংবিধান সম্পর্কে আলােচনা ব্যতীত জাতীয় পরিষদের আর করণীয় কিছু থাকবে না। এই ভাষণের আর একটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হলাে তার অপকীর্তির অন্যতম সাকরেদ সিন্ধুর কোটিপতি পশ্চিমাদের দালাল জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টোর দাবী প্রকারন্তরে প্রত্যাখান করে বলেছেন যে চারমাস পর ভেবে দেখবেন কবে নাগাদ তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। ভূটো দাবী করেছিলেন অবিলম্বে নির্বাচিত প্রতিনিধিদেব দাতা হস্তান্ত” করতে হবে।
পাকিস্তানে গণতন্ত্র মৃত প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার এ ভাষণে দেশে বিদেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কলকাতাস্থ বাংলাদেশ মিশনের প্রধান জনাব এম, হােসেন আলী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণের কথা উল্লেখ করে বলেন, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এই ভাষণের মধ্য দিয়ে স্বীকার করলেন, পাকিস্তানে গণতন্ত্র মৃত’। | তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের মাটি থেকে দখলদার পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের বিতাড়নে দুঢ় প্রতিজ্ঞ। সেদিন বেশী দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশ এই দখলদার সৈন্যমুক্ত হবে। প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের জনগণকে কিছুই দেন নি।।
গণহত্যাতেই ইয়াহিয়ার উল্লাস। পাকিস্তানের সঙ্কট এবং বাংলাদেশ প্রশ্নের সমাধান সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট খান তার বেতার ভাষণে যে রাজনৈতিক ঘােষণা করেছেন সে সম্পর্কে মন্তব্য প্রসঙ্গে নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক প্রতিনিধি এবং পাকিস্তান হাই কমিশনের প্রাক্তন সেকেণ্ড সেক্রেটারী জনাব কে, এম শাহাবুদ্দীন বলেন ইয়াহিয়া খানের ভাষণে নিঃসন্দেহভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, একটি ক্রীড়নক সরকার খাড়া করার জন্য তিনি বিশ্বাস ঘাতক ও সংগ্রহ করতে পারেন নি। তাঁর ভাষণে তিনি নিজেকে বিশ্বের দরবারে প্রমাণিত করেছেন। যে, তিনি একজন সংবিধান বিরােধী মানুষ এবং গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ এবং গণ-হত্যাতেই তার উল্লাস বলেন।।।
জেনারেল ইয়াহিয়া খান তার বহু প্রতিক্ষীত বেতার ভাষণে দেশের গণতান্ত্রিক জনমত এবং গত ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগের প্রতি তাদের রায়কে নস্যাৎ করে দিয়েছেন। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত গণপরিষদ কর্তৃক জনপ্রিয় সংবিধান রচনা এবং জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি বাতিল করা হয়েছে এবং বাংলাদেশের জনগণের নিকট গ্রহণযােগ্য একটি রাজনৈতিক সমাধানের সকল আশা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। সামরিক প্রেসিডেন্টের এই ভাষণের ফলে ইসলামাবাদের দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বর্তমান গেরিলা লড়াই আরাে ব্যাপক ও জোরদার হবে।
জয়বাংলা (১)১; ৮ ২ জুলাই ১৯৭১