পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে | জয়বাংলা | ১৩ আগস্ট ১৯৭১
ইয়াহিয়া ও টিক্কা চক্রের অন্তদ্বন্ধে সংকট ঘনায়মান পাকিস্তানের সমর নায়কদের মধ্যে তীব্র ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চলেছে বলে নানা সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই ক্ষমতা দ্বন্দ্বের একদিকে হচ্ছে ইয়াহিয়া, হামিদ খান চক্র অন্যদিকে আছে টিক্কা খান ও তার ভক্তবৃন্দ। খবরে প্রকাশ, টিক্কা খাঁর অন্যতম সমর্থক জেনারেল উমরকে ষড়দ্র করে পশ্চিম পাকিস্তানে মেরে ফেলা হয়েছে। উমর একটি হেলিকপটারে করে যাচ্ছিল। তখন এই হেলিকপটারটি পশ্চিম পাকিস্তানের কোন অঞ্চলে হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ে। মনে করা হচ্ছে, হেলিকপটার দুর্ঘটনাটি কোন আকস্মিক যান্ত্রিক গােলযােগে হয়নি। পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে হয়েছে। অর্থাৎ জেনারেল উমর নিহত হয়েছে ষড়যন্ত্রের ফলে। টিক্কা খায়ের আর একজন সমর্থক, মেজর জেনারেল আকবরকে বর্তমানে পাক-অধিকৃত কাশ্মীর অঞ্চলে বদলি করা হয়েছে। তার যায়গায় নিযুক্ত করা হয়েছে মেজর জেনারেল জিলানিকে। মেজর জেনারেল আকবর-এর উপর ছিল সামরিক গুপ্তচর। বিভাগের ভার। তাকে এই পদ থেকে অপসারণ করাকেও মনে করা হচ্ছে ক্ষমতার দ্বন্দে ইয়াহিয়া গােষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের ফল বলে।
বিদ্রোহী ঘাতক সুবাদার টিক্কা টিক্কা খান বর্তমানে বাঙলাদেশ ছেড়ে পশ্চিম পাকিস্তানে কোন মিটিং-এ যাচ্ছে না। এ থেকে মনে হয়, টিক্কা। খা এখন পশ্চিম পাকিস্তানে যেতে সাহস করছে না। বাঙলাদেশে থেকেই ক্ষমতার কলকাঠি নাড়তে চাচ্ছে। ঘাতকদের দোসর দেশে উদ্বেগ পাকিস্তানের মিত্র দেশগুলি পাকিস্তানের সেনা বাহিনীতে সৃষ্ট এই ক্ষমতার দ্বন্দে খুবই বােধ করছে। তারা বুঝতে পারছেনা, কোন গােষ্ঠীর পিছনে তাদের সমর্থন দান করা উচিৎ হবে। | বৃটিশ পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা সাধারণ ভাবে সামরিক বাহিনীর মধ্যেও বিক্ষোভ দেখা দেবার সম্ভাবনা আছে। কারণ, তাদের বােঝান হয়েছিল বাঙলাদেশের জন্য কোন যুদ্ধ করতে হবে না। মাত্র ৭২ ঘন্টার মধ্যে গুলি ছুড়ে, কামান দেগে, বােমা ফেলে বাঙালীদের সমস্ত প্রতিরােধ চূর্ণ করে দেওয়া যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের যুদ্ধের অবস্থা ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে। ক্ষমতাচ্যুত হতে পারে, এই ভয়েই ইয়াহিয়া বাংলাদেশ সফরে আসছে না।
বীমার দাবী নিয়ে বিভ্রাট পাকিস্তান সবচাইতে বড় ইনসিওরেন্স কোম্পানী হল, ফেডারেল ইউনিয়ন ইনসিওরেন্স কোম্পানী। এরা সামরিক বাহিনীর জন্য গ্রুপ ইন্সিওরেন্স চালু করে। এখন অনেক পাক ফৌজ প্রতিদিন মারা যাচ্ছে। আহত হচ্ছে। যারা মারা যাচ্ছে তাদের জন্য অর্থদাবী করে পাচ্ছে না, মৃতের আত্মীয় স্বজন। কারণ, পাকিস্তান সরকার বাঙলাদেশে যা ২টছে, ‘তাকে যুদ্ধ বলে ঘােষণা করতে রাজি হচ্ছে না। ফলে সেনাবাহিনীতে সৈন্যদের। মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। ইনসিওরেন্স-এ শােনা যায় এ পর্যন্ত প্রায় ২০,০০০ দাবী পড়েছে টাকার জন্য। এ থেকে অনুমান করা চণে, প্রায় বিশ হাজার পাক-ফৌজ এবং খতম হয়েছে বাঙলাদেশের মাটিতে। | পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে পাঞ্জাবী ফৌজের সাথে বালুচ ও পাঠান ফৌজদের সাথে প্রায়সই গণ্ডগােল হচ্ছে। পাঞ্জাবী ফৌজেরা বিপদের ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। তারা বালুচ ও পাঠান সৈন্যকে সব বিপদের মুখে এগিয়ে দিতে চাচ্ছে। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে পাঞ্জাবী ফৌজেরা ভাল খাচ্ছে। বালুচ ও পাঠানদের বঞ্চিত করছে। এই কারণেও পাক সেনাবাহিনীতে গােলযােগ দেখা যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পাঞ্জাবী ফৌজের সাথে বালুচ ও পাঠানদের গুলি বিনিময়ের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। গােটা পাকবাহিনীর মধ্যে নিয়ম শৃঙ্খলার দারুন অভাব দেখা দিয়েছে।
জয়বাংলা (১) ১:১৪। ১৩ আগস্ট ১৯৭১