You dont have javascript enabled! Please enable it!

বৃটিশ পার্লামেন্টারী প্রতিনিধিদলের অভিমত | জয়বাংলা | ১৬ জুলাই ১৯৭১

পাকিস্তান প্রচার যন্ত্র থেকে সব সময় বােঝাবার চেষ্টা করা হচ্ছে, বাঙলা দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বাঙলা দেশে সেনাবাহিনী যা করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার খাতিরেই করেছে। বাংলা দেশের মানুষের উপর কোন অত্যাচার চালান হয়নি। তারা বিদেশ থেকে নানা সাংবাদিকদের ও বিদেশীদের নিয়ে আসছেন তাদের কথার সত্যতা প্রমাণ করবার জন্য। কদিন আগে পাক সরকার ঘােষণা করেছিল যে কোন বিদেশী সাংবাদিক বাঙলা দেশে ঘুরে বেড়িয়ে যে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারবেন ও তাদের সংবাদ সরবরাহের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ চাপান হবেনা। কিন্তু কদিন আগেই আমেরিকার বিখ্যাত দৈনিক সংবাদ পত্র ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর সংবাদদাতাকে পাক সরকার বাঙলাদেশ থেকে বহিস্কার করে দিয়েছেন। কারণ তিনি তার। দেশের লােককে জানাবার জন্য বাঙলা দেশে যা ঘটেছে সে সম্পর্কে ঘটনাগত ভাবে বিবরণী পাঠাচ্ছিলেন। কদিন আগে পাক সরকার বৃটিশ পার্লামেন্ট-এর এক প্রতিনিধি দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বাঙলাদেশের ঘটনা স্বচক্ষে দেখে যাবার জন্য। তাদের গতিবিধি ছিল নানা ভাবেই নিয়ন্ত্রিত। তাদের বাঙলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরিয়ে দেখান হয় হেলিকপ্টারে। কিন্তু তারা হেলিকপটারে থেকে যা দেখেছেন এবং সে সম্পর্কে যতটুকু বলেছেন তা থেকেই অনুমান করা চলে, এ যাবত পাক বাহিনী কি ধরনের ভয়াবহ অত্যাচার চালিয়েছে বাঙলা দেশের উপর। পার্লামেন্টারী প্রতিনিধি দলের বিভিন্ন ব্যক্তি যা বলেছেন তাহচ্ছে, সমস্ত বঙালাদেশ জুড়ে এখন ত্রাসের রাজত্ব চলেছে। এই দলের নেতা মিঃ বটমলি বলেছেন, টিক্কা খান। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ ব্যক্তি। বাঙলা দেশের রক্ত স্নানের জন্য তিনি বিশেষ ভাবে দায়ী। পাকিস্তান সেনাবাহিনী যা করেছে, তা এতই বাড়াবাড়ি যে, নিয়ম শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তার প্রয়ােজন ছিল বলে বোেঝান যায় না। নিয়ম শৃঙ্খলার জন্য এ ধরনের সামরিক তাণ্ডব অকল্পনীয় ব্যাপার। বৃটিশ পার্লামেন্টারী দলের অপর নেতা মিঃ প্রেন্টিস বলেছেন বাঙলা দেশের সমস্যার সামরিক সমাধানের যে পথ ইয়াহিয়া বেছে নিয়েছেন তা আসলে একটা মর্মান্তিক ভুল ছাড়া আর কিছু নয়। বৃটিশ পার্লামেন্টারি দলের নেতা ও অন্যান্য প্রতিনিধিদের এইসব বিবৃতি তাদের দেশের সরকারের উপর প্রভাব বিস্তার করবে। কিনা বলা যায় না। কিন্তু বিলাতের মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠছে এ দেশে কি ঘটছে। বৃটিশ পত্র-পত্রিকার মারফত তাদের বক্তব্যের প্রভাব সঞ্চারিত হচ্ছে আমেরিকা ও অন্যান্য ইংরাজী ভাষাভাষী দেশে। পাকিস্তান। সরকার প্রচার করে চলেছেন যে সাংবাদিকরা টাকা খেয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে অপপ্রচার করছে। কিন্তু  পার্লামেন্টারি দলের প্রতিনিধি দলের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচারের অভিযােগ আনা চলবে না। পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি দলের বক্তব্য তাই বিশ্ববাসীর কাছে অনেক বেশী গুরুত্ব পাবে।

জয়বাংলা (১)১:১০। ১৬ জুলাই ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!