You dont have javascript enabled! Please enable it!

সােভিয়েত-ভারত যুক্ত বিবৃতিতে বাঙলাদেশ সরকারের সন্তোষ প্রকাশ | মুক্তিযুদ্ধ | ১০ অক্টোবর ১৯৭১ 

বাঙলাদেশ সমস্যার গভীর উপলব্ধির পরিচয় প্রতিফলিত’, সােভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত এক যুক্ত বিবৃতিতে “পূর্ব বাঙলার জনগণের আকাঙ্খ, অলক্সনীয় অধিকার ও আইনসঙ্গত স্বার্থের” স্বীকৃতির ভিত্তিতে পূর্ব বাঙলার সমস্যার জরুরী রাজনৈতিক সমাধান দাবি করিয়াছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর তিন দিনব্যাপী সােভিয়েত সফর শেষে গত ২৯শে সেপ্টেম্বর এই যুক্ত বিবৃতি প্রকাশিত হয়। মস্কোতে শ্রীমতী গান্ধী সােভিয়েত রাষ্ট্র প্রধান নিকোলাই পদগনি, প্রধানমন্ত্রী কোসিগিন ও কমিনিস্টি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্রেঝনেভের সহিত আলােচনা করেন। আলােচনা ও যুক্ত। বিবৃতিতে বাঙল প্রসঙ্গ বিশেষ প্রাধান্য পায়। 

যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, “পূর্ব বাঙলার সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে উদ্ভূত গুরুতর পরিস্থিতিতে উভয়পক্ষ উদ্বেগ প্রকাশ করিতেছে এবং এই অঞ্চলে শান্তি অক্ষুন্ন রাখার জন্য তাহাদের প্রচেষ্টা। অব্যাহত রাখার সংকল্প ঘােষণা করিতেছে।” | বিবৃতিতে বলা হয় যে, পূর্ব বাঙলা হইতে ৯০ লক্ষ শরণার্থী ভারতের মাটিতে অবস্থান করায় যে গুরুতর সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি হইয়াছে এবং ভারতের অর্থনীতির উপর যে-চাপ সৃষ্টি হইয়াছে সে বিষয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী সােভিয়েত পক্ষকে অবহিত করেন। এই অবস্থা ভারতের সামাজিক অর্থনৈতিক কর্মসূচীকে গুরুতরভাবে ব্যাহত করিয়াছে। | যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয় যে, সােভিয়েত পক্ষ পূর্ব বাঙলা হইতে শরণার্থী আগমন জনিত সমস্যার প্রতি ভারতের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রশংসা করে এবং এই ব্যাপক শরণার্থী আগমনের সহিত জড়িত ভারতের অসুবিধাগুলিও অনুধাবন করে। শরণার্থীদের অবিলম্বে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা এবং পূর্ব বাঙলা হইতে ভারতে শরণার্থী স্রোত বন্ধ করার জন্য প্রয়ােজনীয় সকল ব্যবস্থা অবলম্বনে ভারত বদ্ধপরিকর এই মর্মে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য যুক্ত বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। যুক্ত বিবৃতিতে পূর্ব বাঙলার ঘটনাবলীর ফলে উদ্ভূত শরণার্থী সমস্যা ও অন্যান্য প্রশ্নে বিগত ২রা এপ্রিল পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে লিখিত সােভিয়েত প্রেসিডেন্ট পদগর্নির পত্রে উল্লেখিত সসাভিয়েতের দৃষ্টিভঙ্গির কথা পুনরায় জোর দিয়া ঘােষণা করা হয়।

যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, “২৫শে মার্চ হইতে পূর্ব বাঙলায় ঘটনাবলীর অগ্রগতির প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া উভয় পক্ষ মনে করে যে, শান্তি রক্ষার স্বার্থে এবং সেই সঙ্গে সম্মান ও মর্যাদার পরিবেশে শরণার্থীদের দ্রুত ও নিরাপদে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য পূর্ব বাঙলার জনগণের ইচ্ছা, অলজ্জনীয় অধিকার ও আইন সঙ্গত স্বার্থের প্রতিমর্যাদা দিয়া সমস্যার একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌছার জন্য জরুরী ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করা প্রয়ােজন। ভারতীয় উপমহাদেশের গুরুতর পরিস্থিতির বিষয় উল্লেখ করিয়া যুক্ত বিবৃতিতে এই সমস্যা হইতে উদ্ভূত সকল প্রশ্নে উভয় পক্ষ মত বিনিময় ও পারস্পরিক যােগাযােগ রক্ষা করিয়া চলিবে বলিয়া ঘােষণা করা হয় । বাঙলাদেশ সরকারের সন্তোষ প্রকাশ গণপ্রজাতন্ত্রী বাঙলাদেশ সরকারের মন্ত্রী-পরিষদ সাম্প্রতিক সােভিয়েত ভারত যুক্ত বিবৃতিকে এই বলে। অভিনন্দিত করিয়াছেন যে, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ও সােভিয়েত নেতৃবৃন্দের যুক্ত বিবৃতি ক্রেমলিনে বাঙলাদেশ সম্পর্কে গভীর উপলব্ধির প্রতিফলন।”

গত ২রা অক্টোবর মুজিবনগরে প্রধানমন্ত্রী তাজুদ্দিন আহম্মদের সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এক অধিবেশন। বসে। অধিবেশন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সােভিয়েত সফর শেষে প্রকাশিত সােভিয়েত-ভারত যুক্ত বিবৃতি গভীরভাবে পর্যালােচনা করা হয়। পর্যালােচনা শেষে মন্ত্রিপরিষদ এক বিবৃতিতে উপরােক্ত অভিমত প্রকাশ করেন। সােভিয়েত ভারত যুক্ত বিবৃতিকে পূর্বে বাঙলায় রাজনৈতিক সমধানের মূল নীতি হিসাবে যে “পূর্ববঙ্গে জনগণের আকাঙ্খ, অলঙ্গণীয় অধিকার ও আইনসঙ্গত স্বার্থের উপর জোর দেওয়া হইয়াছে মন্ত্রীপরিষদ তাহার মূল্যায়ন করিয়া বলিয়াছেন, বাংলাদেশের যে-পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য সাড়ে সাত কোটি বাঙালী প্রতি মুহূর্তের ও দিচ্ছে, উক্ত তিনটি মূলনীতি তারই সমর্থনে যেতে পারে।” ভারত হইতে বাঙলাদেশ শরণার্থীদের সম্মান মর্যাদার সহিত শীঘ্র স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের উপর যুক্ত বিবৃতিতে যে গুরুত্ব আরােপ করা হইয়াছে, সে সম্পর্কে মন্ত্রী-পরিষদ উল্লেখ করেন যে, এমন পরিবেশ শুধু স্বাধীন বাংলাদেশেই সম্ভব। | মন্ত্রী-পরিষদের বিবৃতিতে পুনরায় দৃঢ়তার সহিত ঘােষণা করা হইয়াছে যে, পূর্ণ স্বাধীনতা ব্যতীত কোন রাজনৈতিক সমাধান গ্রহণ যােগ্য নয়।

মুক্তিযুদ্ধ। ১:১৪ ১০ অক্টোবর ১৯৭১ 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!