মস্কোতে ইয়াহিয়ার দালালী চলল না | জয়বাংলা | ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
জল্লাদ ইয়াহিয়ার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এম, এম, আহমদ যেমন মে-জুনে-লগুন-ওয়াশিংটন প্যারিস-বন প্রভৃতি স্থানে বহু দৌড়াদৌড়ির পর খালি হাতে ফিরে এসেছিল তেমনি ইয়াহিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা – কাম-পররাষ্ট্র সেক্রেটারী সুলতান মােহাম্মদ খানও মস্কো থেকে খালি হাতে ফিরে এসেছেন। | পূর্ব নির্ধারিত তারিখ মােতাবেক সুলতান মােহাম্মদ খানের আগষ্ট মাসে মস্কো যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইত্যবসরে ভারত-সােভিয়েট মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় নতুন ফন্দি-ফিকির আঁটার জন্য তার সফরসূচী। স্থগিত রাখা হয়। পরে গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর সুলতান খান বহু ফন্দি-ফিকির ও আশা ভরসা নিয়ে মস্কো গমন করেন।
জন্মলগ্ন থেকে সাবেক পাকিস্তানের পররাষ্ট্র নীতির লক্ষ্য ছিল দু’টো তার মধ্যে একটা ছিল ভারত-বিদ্বেষ এবং অপরটা ছিল সুবিধাবাদ বা রাজনৈতিক ব্ল্যাক মেইলিং। অতীতে পাকিস্তান বহুবার এই সুবিধাবাদের আশ্রয় নিয়েছে। চীন-রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কম্যুনিজম ঠেকানাের যুগে সে দুহাতে মার্কিন সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য লুটেছে। আবার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দুই চারটি কথা বলে চীন-রাশিয়ার কাছে থেকে যখন সুবিধা আদায়ের সুযােগ হয়েছে পাকিস্তান তাও।
পুরুমে কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু বাস্তঘুঘু এবার ধরা পড়ে গেছে। বাঙলাদেশের সমস্যার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে গরম গরম কথা এমন কি সর্বাত্মক যুদ্ধের হুমকী দিয়ে সুলতান সাহেব গিয়েছিলেন মস্কোতে। উদ্দেশ্য ছিল যদি কিছু সুযােগ সুবিধা আদায় করা যায় পাকিস্তানে বিপর্যস্ত সামরিক চাকাও ধ্বংস প্রায় কিছু আনা। যায়। কিন্তু তা হলাে না। সােভিয়েট ইউনিয়নের তরফ থেকে নাকি পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর দুঃসাহস দেখানাের ব্যাপারে কঠোর ভাবে হুশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে। তারা ব্যাপারটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুলতান সাহেবের মনিব জল্লাদ ইয়াহিয়াকে জানিয়ে দেওয়ার জন্য সুলতান মােহাম্মদকে অনুরােধ করেছেন। তাই অর্ধেক পথে সফল শেষ করে স্বদেশে ফিরতে হয়েছে। | প্রকাশ, জনাব সুলতান মােহাম্মদ সােভিয়েট পররাষ্ট্র মন্ত্রী আদ্রে গ্রোমিকো এবং সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী। মিঃ ফিরুবিনের সাথে আলােচনার সময় বাংলাদেশের সমস্যাকে ভারতীয় ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তেরই ফলশ্রুতি বলে বুঝানাের জন্য বহু চেষ্টা করেছেন। তাছাড়া তিনি বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের জন্য তার প্রভু জল্লাদ ইয়াহিয়া যে সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছেন ও নিতে যাচ্ছেন তার যথার্থতাও’ সােভিয়েট নেতৃবৃন্দকে বুঝানাের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাতে সােভিয়েট নেতাদের মন ততটুকু গলেনি। তারা নাকি সুলতান। সাহেবকে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে ঐ সব চাতুরীপূর্ণ ব্যবস্থায় বাংলাদেশ সমস্যার সমাধান হবে না। তারা কথাটা পরিস্কার ভাষায় না বললেও সুলতান সাহেবকে একথাই বুঝাতে চেয়েছে যে বাংলাদেশ সমস্যার। সমাধান করতে হলে শেখ মুজিবর রহমান ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শরণাপন্ন তাদেরকে হতে হবে। | সােভিয়েট নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানী প্রতিনিধির কথাবার্তায় এত অসন্তুষ্ট হয়েছেন যে বিদেশী প্রতিনিধিদের ক্রেমলিনে অভ্যর্থনা জ্ঞাপনের যে রেওয়াজ আছে তা থেকেও জনাব সুলতান মােহাম্মদকে বঞ্চিত করেছেন।
জয়বাংলা (১)১:১৯ ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১