কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারী সম্মেলনে | জয়বাংলা | ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
বাংলাদেশ কুয়ালালামপুর, ১৪ই সেপ্টেম্বর-আজ কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারী সম্মেলনের দ্বিতীয় দিবসে একজন বৃটিশ এম, পি ভারতে বাংলাদেশ শরণার্থীদের ৯৫০ টি শিবিরকে ৯৫০ টি গাজা ব-দ্বীপ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন এই ৯৫০ টি শরণার্থী শিবির পাক-ভারত যুদ্ধের ৯৫০ টি সম্ভাব্য কারণ হিসাবে বিরাজ করছে। উক্ত বৃটিশ এম, পি হচ্ছেন বৃটিশ চাকরী-বিনিয়োেগ দফতরের উপমন্ত্রী মিঃ কে বেকার। তিনি বলেন, প্রতিটি শরণার্থী শিবিরে দেড় লাখ লােককে রেশনের জন্য সীমাহীন লাইন দিয়ে দাঁড়াতে দেখার চেয়ে মানুষের চোখের পক্ষে বিরক্তিকর দৃশ্য আর কিছু হতে পারে না। নিউজিল্যাণ্ডের প্রতিনিধি মিঃ এইচ, সি, টেম্পেলন্টন সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন যে, কমনওয়েলথ ভুক্ত রাষ্ট্রগুলাে যদি অবিলম্বে প্রত্যক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে ভারতও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়বে, যার ফলে উভয় দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে পড়বে।
তিনি আরও বলেন যে, নিউজিল্যাণ্ডের প্রধান মন্ত্রী মিঃ কিথ হলিওক ইতিমধ্যে ইয়াহিয়া খানকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ যা চায় তা মেনে নিতে অনুরােধ জানিয়েছেন। সম্মেলনে একাধিক বক্তা বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য সাহায্য প্রেরণের কাজ ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান। কুয়ালালামপুরে বিপন্ন মানবতা ও মরনােমুখ গণতন্ত্রের স্বপক্ষে যে সামান্য কয়েক পংক্তি বিবেকবাণী উচ্চারিত হয়েছে, পাকিস্তানের জঙ্গী সরকার তা প্রসন্ন চিত্তে গ্রহণ করতে পারেনি। কেন না, মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত পাকিস্তানী হাইকমিশনার উক্ত সম্মেলনে বাংলাদেশ সমস্যা আলােচিত হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশে পাকিস্তানী জল্লাদ বাহিনীর নৃশংস অত্যাচারের কঠোর সমালােচনার মধ্যে দিয়ে পূর্বদিন সপ্তদশ কমনওয়েলথ পালামেন্টারী সমিতির সপ্তাহব্যাপী সম্মেলন শুরু হয়। সাবেক কমনওয়েলথ সচিব মিঃ আর্থার বটমলী ইয়াহিয়া খানকে এই সত্যটি উপলব্ধি করতে বলেছেন যে, একমাত্র শেখ মুজিবুর রহমানই পূর্ব বাংলার জনগণের পক্ষে কথা বলতে পারেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি দাবী করে বলেন জন নেতাদের কারাগারে রেখে দুনিয়ার কোন সমস্যার যে সমাধান করা যায় না বৃটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাস থেকে ইয়াহিয়ার শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ। মিঃ বটমলী তার ভাষণে বাংলাদেশ সমস্যা, অধিকৃত বাংলাদেশ এবং তার সরকারো অভিজ্ঞতার উপর আলােকপাত করেন।
ইয়াহিয়া খান সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেন যে, ইয়াহিয়া খান রাজনৈতিক নেতা নন। অথচ তাকে মােকাবেলা করতে হচ্ছে নির্ভেজাল রাজনৈতিক সমস্যার । উক্ত অধিবেশনে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতা শ্ৰী জি, এস, ধীলন বাঙলাদেশের প্রশ্নে বলেন যে, বর্তমান সঙ্কট ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিরােধের ফল নয়, বরং সংস্কৃতি ও ভাষার দিক দিয়ে পাকিস্তানের দুইটি ভিন্ন জাতির মধ্যকার বিরােধ। ঘানার প্রতিনিধি মিঃ সাকিন্তেক কমনওয়েলথের পক্ষ থেকে পূর্ব বাঙলার শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য আবেদন জানান। | বৃটেনের স্যার রােনাল্ড রাসেল বলেন যে, পূর্ব বাঙলার মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ভারত উদ্বাস্তুদের ফেরৎ পাঠাতে পারবে না। তিনি পূর্ব বাঙলার সমস্যার একটি রাজনৈতিক সমাধানের প্রয়ােজনীয়তার উপর জোর দেন। গায়ানার প্রতিনিধি মিঃ নেভিল জেমস বলেন যে, পাকিস্তানকে নিন্দা করার অধিকার কমনওয়েলথ-ভূক্ত দেশগুলাের আছে, কারণ পাকিস্তান পূর্ব বাঙলাকে অবদমিত করে এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে আটক রেখে নীতি ও ন্যায় ধর্মের সকল বিধি লঙ্ঘন করেছে। কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারী সভার এই অধিবেশনে পাকিস্তানের প্রতিনিধি প্রেরণের অধিকার নেই। কেননা পাকিস্তানে কোন পার্লামেন্ট নেই । ঐ একই কারণে নাইজেরিয়া ও উগাণ্ডাও প্রতিনিধি প্রেরণ করতে পারেনি।
জয়বাংলা (১) ১: ২০। ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১