৪ আগস্ট বুধবার ১৯৭১
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মােহাম্মদ ইয়াহিয়া খান এক টিভি সাক্ষাৎকারে বলেন, বেআইনি ঘােষিত আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার করা হবে। তিনি বলেন, যেহেতু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের নাগরিক সেহেতু দেশের আইন অনুযায়ী তার বিচার করা হবে। তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রদ্রোহী । শেখ মুজিব প্রকাশ্যে দেশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘােষণার জন্য জনগণকে উত্তেজিত করেছেন। তিনি বলেন, জাতীয় পরিষদে যেসব পূর্ব পাকিস্তানি সদস্যের আসন বহাল থাকবে এবং অপরাধ অথবা রাষ্ট্রবিরােধী কার্যকলাপের জন্য যারা আসন হারিয়েছেন, খুব শীঘ্র তাদের নাম ঘােষণা করা হবে। ইয়াহিয়া খান বলেন, আওয়ামী লীগকে বেআইনি ঘােষণা করা হলেও এর যেসব সদস্য জাতীয় পরিষদের আসন লাভ করেছেন তাদের সদস্য পদ বাতিল করা হয়নি। কেবল যারা রাষ্ট্রদ্রোহী তাদের সদস্য পদ বাতিল করা হবে এবং এসব শূন্য পদে উপনির্বাচন হবে। | তিনি বলেন, একমাত্র সীমান্ত এলাকা ছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের ফলে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ও উত্তেজনার সমাপ্তি ঘটেছে।
জেনারেল ইয়াহিয়া বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ পূর্ব। পরিকল্পিত ছিল না। যখন দেখা গেল শেখ মুজিবুর রহমান কোনাে অবস্থাতেই নত হবেন না তখন তিনি জনগণের জীবন বিপদমুক্ত করার জন্য সেনাবাহিনী ডাকতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালাচ্ছে। বলে যে প্রচারণা চলছে তা জঘন্য মিথ্যা। সেখানে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ক্ষুদ্রসংখ্যক সশস্ত্র বিদ্রোহী সরকারের সাথে যুদ্ধ করে। তাদের উৎখাত করার জন্য। সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। বিদ্রোহীদের দমন করতে অনেক সময় দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হয়। পৃথিবীতে এ রকম অনেক নজির আছে। ইসলামাবাদে ঘােষণা করা হয় ভারত ও পূর্ব পাকিস্তান উভয় সীমান্তে জাতিসংঘ উদ্বাস্তু হাইকমিশনারের সীমিতসংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ােগে জাতিসংঘ মহাসচিব যে প্রস্তাব করেছেন পাকিস্তান তা গ্রহণ করেছে। মুক্তিবাহিনী জামালপুরে পাকবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়। এখানে উভয় পক্ষের বিপুল অস্ত্রশস্ত্র, গােলাবারুদ ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান