You dont have javascript enabled! Please enable it! 1969.02.17 | ডাক গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেবে : কাল শেখ মুজিব লাহোর যেতে পারেন : প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের সম্মতি | দৈনিক পাকিস্তান - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক পাকিস্তান
১৭ই ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
ডাক গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেবে : কাল শেখ মুজিব লাহোর যেতে পারেন :
প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের সম্মতি
(ষ্টাফ রিপোর্টার)

লাহোর, ১৬ই ফেব্রুয়ারী (এপিপি)।— কেন্দ্রীয় গণতান্ত্রিক সংগ্রাম কমিটি (ডাক) গোলটেবিলে যোগদানের প্রেসিডেন্টের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। আজ সকালে এখানে অনুষ্ঠিত ডাকের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে ডাকের মুখপাত্র জনাব মাহমুদ আলী এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান। তিনি বলেন, আগামী ১৯শে ফেব্রুয়ারী সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য ডাক প্রস্তাব দিয়েছে। জনাব মাহমুদ আলী আরো জানান যে, প্রেসিডেন্ট আইয়ুব বৈঠকে শেখ মুজিবর রহমানের উপস্থিতি থাকার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন।
আজ ঢাকায় ওয়াকিফহাল মহল সূত্রে বলা হয়, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান কেন্দ্রীয় গণতান্ত্রিক কমিটির সভায় যোগদানের জন্য ১৮ই ফেব্রুয়ারী মুক্ত নাগরিক হিসেবে লাহোর যাত্রা করতে পারেন।
পি পি আই এই সংবাদ পরিবেশন করে বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করা হবে কিনা তা এখুনি বুঝা যাচ্ছে না।
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী জনাব তাজুদ্দীন লাহোর থেকে জরুরী খবর নিয়ে গতকাল ঢাকা ফেরেন। তিনি যেকোন মুহূর্তে দলের প্রধান শেখ মুজিবর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন।
যদি শেখ মুজিবর রহমান সময়মত মুক্তি পান তাহলে গোলটেবিল বৈঠকে তার যোগদানের সম্ভাবনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত হল শেখ মুজিব সময়মত মুক্তি পেলে গোলটেবিল বৈঠকে তিনিই আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
জনাব মাহমুদ আলী বলেন যে, আলোচনায় যোগদানের জন্য যে তিনটি পূর্ব শর্ত দেওয়া হয়েছিল, তা পূরণের ব্যবস্থা হয়েছে বলেই ডাক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পূর্ব শর্ত তিনটি হলোঃ জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার, রাজ বন্দীদের মুক্তি ও নাগরিক অধিকারসমূহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
তিনি আরো জানান যে, কেন্দ্রীয় ডাকের আহ্বানে ন্যাপ (ভাসানী গ্রুপ) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি এবং এয়ার মার্শাল আসগর খান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজম খান ও সৈয়দ মাহবুব মুর্শেদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানাবার জন্য ডাকের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্টের কাছে সুপারিশ করছেন।
পিপলস পার্টি ও স্বতন্ত্র রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আমন্ত্রিত না হলে ডাক আলোচনায় অংশ গ্রহণ করবে কিনা, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে জনাব মাহমুদ আলী বলেন যে, এটা আন্দাজের প্রশ্ন এবং ভবিষ্যতে এমন কোন পরিস্থিতি দেখা দিলে তা বিবেচনা করা হবে। তিনি বলেন যে, প্রস্তাবিত গোলটেবিল রাওয়ালপিণ্ডিতে অনুষ্ঠিত হবে এবং আলোচনা চলাকালেই সর্বশেষ পরিস্থিতি বিবেচনার জন্য সেখানে ডাকের বৈঠকও চলতে থাকবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান যে, সম্মেলনের আগে ভূমিকারূপে কোন কিছু আলোচনা হবে না। সবকিছুই আলোচিত হবে সম্মেলন টেবিলে। যদি কোন ভূমিকা থেকে থাকে, প্রেসিডেন্টই তা বলবেন। প্রশ্নঃ নির্যাতন স্থগিত হতে পারে কি?
জবাবঃ এখন এই প্রশ্নই উঠে না। আমাদের শর্তগুলো পূরণ করা হলে নির্ধারিত সময়সূচী অনুসারে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা সম্মত হবো।
প্রশ্নঃ সম্মেলনের আলোচ্যসূচী কি হবে?
জবাবঃ সম্মেলনের আলোচনার পরিসর ব্যাপক, এমন কি আট দফার চাইতেও ব্যাপকতর। সরকার প্রেসিডেন্সিয়েল না পার্লামেন্টারী পদ্ধতির হবে-এধরনের প্রশ্নই অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট এবং আলোচনা বৈঠকে আমরা সমগ্র শাসনতান্ত্রিক বিষয় ও আলোচনা করতে পারি।
প্রশ্নঃ সম্মেলন কে কে ডাকের প্রতিনিধিত্ব করবেন?
জবাবঃ ডাকের প্রতিটি অঙ্গদল থেকে দুজন প্রতিনিধি আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন।
প্রশ্নঃ আলোচনায় যোগদানের আমন্ত্রণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত কি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে?
জবাবঃ নিশ্চয়ই।
প্রশ্নঃ প্রেসিডেন্ট তো রাওয়ালপিণ্ডিতে অবস্থানকালে তাঁর আতিথ্য গ্রহণের জন্য আপনাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আপনারা কি প্রেসিডেন্টের আতিথ্য গ্রহণ করবেন?
জবাবঃ এখনো এ ব্যাপারে কোন কিছু স্থির করা হয়নি। আমাদের সুবিধামত যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি।
প্রশ্নঃ আপনারা যদি প্রেসিডেন্টের আতিথ্য গ্রহণ করেন তাহলে জনাব মুজিবর রহমান কি তার সাথে থাকবেন?
জবাবঃ সেটা তার উপর নির্ভর করে।
প্রশ্নঃ জনাব মুজিবুর রহমান কি মুক্ত ব্যক্তি হিসেবে না প্রহরাধীনে আলোচনা বৈঠকে যোগ দেবেন ?
জবাবঃ আমি কোনটাই জানি না। সরকারই এটা বলতে পারে। তবে আমরা চাই, তিনি মুক্তি পেয়েই আলোচনায় অংশগ্রহণ করুন।

সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯