১৪ জুলাই বুধবার ১৯৭১
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম লােকসভায় বলেন, একটি জিনিস আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে, আর তা হলাে মুক্তিফৌজের সাহসিকতার ফলে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ একদিন স্বাধীন হবেই। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং লােকসভায় বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকচক্র বাংলাদেশের জনগণের ভাবাবেগের ওপর জঘন্য সামরিক হস্তক্ষেপের ফলে তার ঔপনিবেশিক চক্রান্তের মুখােশ খুলে পড়েছে। তিনি বলেন, ভারত সরকার মনে করে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে যারা পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করেছেন তারা পক্ষান্তরে পাকিস্তানের সামরিক শাসকবর্গকে বাঙালি জনগণের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাবার উৎসাহ দিচ্ছেন। পাকিস্তানের সামরিক শাসকবর্গ বাংলাদেশের জনগণের ব্যাপারে অযথা হস্তক্ষেপ করছেন বলে সরকার মনে করছে।
ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের জনৈক মুখপাত্র বলেন, পাকিস্তান। সরকার পূর্ব পাকিস্তানে বিরাজিত পরিস্থিতি বিবেচনা করে উন্নয়ন পরিকল্পনার একটি নয়া তালিকা পেশ না করা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে আর্থিক ও কারিগরি সাহায্যদান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে পূর্ব পাকিস্তানে মানবিক সাহায্য প্রেরণ অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পাকিস্তানে সকল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে একটি সন্তোষজনক রাজনৈতিক সমঝােতার জন্য পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে। অবশ্য পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝােতায় পৌঁছানাের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত কোনাে ফর্মুলার প্রস্তাব দেয়নি। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ডা. এ. এম. মালিককে তার বিশেষ সহকারী নিযুক্ত করেন। পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী ও পাকিস্তান ডেমােক্রেটিক পার্টির সহ-সভাপতি মাহমুদ আলী ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের রিপাের্ট পর্যালােচনা করার আবেদন জানান।
সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান